Advertisment

বিশ্লেষণ: কপিল দেব- রণবীর সিংয়ের আসন্ন ছবি ৮৩-র আসল তারকা

কপিলের সেদিনের স্কোর করার পক্ষে একটা সুবিধে ছিল। ম্যাচ হয়েছিল মাঠের একদিক ঘেঁষে, যার জন্য তিনি সে দিকের শর্ট বাউন্ডারি কাজে লাগিয়ে চার-ছয় মারার সুবিধে পেয়েছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Kapil Dev, 83 Movie

উইকেট নেবার পর কপিল (ছবি- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আর্কাইভ)

আসন্ন ৮৩ ছবির একটি স্টিল শেয়ার করেছেন রণবীর সিং। এই স্টিল ছবিতে রণবীরকে দেখা যাচ্ছে প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক কপিল দেবের আইকনিক নটরাজ শট খেলছেন।

Advertisment

কোঁকড়ানো চুল এবং মোটা গোঁফের মেক আপে অবিকল কপিল দেবের মতই দেখাচ্ছে রণবীর সিংকে। কপিল দেব মানেই ১৯৮৩ সালের প্রুডেনশিয়াল বিশ্ব কাপে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ভারতের অসম্ভব জয়। সে খেলা হয়েছিল স্বল্পপরিচিত কেন্টের টানব্রিজ ওয়েলসের নেভিল ক্রিকেট মাঠে।

আধুনিক প্রজন্মের কাছে টানব্রিজ ওয়েলসের নাম তেমন পরিচিত নাও হতে পারে। তাদের জন্য, সে দিন ভারতীয় ক্রিকেটের সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটি খেলেছিলেন হরিয়ানা হারিকেন। ৩৬ বছর আগে জুন মাসের এক শনিবারের সে গ্রীষ্মদিনে হাওয়া ছিল খুব। ৪০০০ জনের মত দর্শক ছিলেন সেদিন।


৩০ সিনেমার পরিচালক কবির খান ইনস্টাগ্রামে একটি ফোটোর ক্যাপশনে লিখেছেন, এ ম্যাচ কোনওদিন টেলিভিশনে প্রচারিত হয়নি... এই এপ্রিল মাসে সারা পৃথিবী দেখবে সে দিনটায় কী ঘটেছিল।

কপিলদেবের সে ইনিংস একদিনের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ইনিংস বলে এখনও কেন ধরা হয়?

জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে কপিল দেবের ১৭৫ নট আউটের সে ইনিংস অমর হয়ে রয়েছে তার অন্যতম কারণ হল, সে ম্যাচ হারলে ভারতকে প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যেতে হত। ওই ইনিংস এবং সেদিনের ভারতের জয় দলকে এমন উদ্বুদ্ধ করেছিল যার জেরে ভারত ১৯৮৩ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতে।

কপিলদেবের ইনিংস ক্যামেরায় রেকর্ড করা যায়নি, কারণ সেদিন বিবিসি ধর্মঘট করেছিল। সে দিনের ইনিংস মনে রেখেছেন রডোডেনড্রন ঘেরা মাঠের দর্শক ও গ্রাউন্ড স্টাফদের কাছে। টানব্রিজ ওয়েলসের মাঠে ৮ জুনের ভার-জিম্বাবোয়ে ম্যাচে পুরুষদের ক্রিকেটের একমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

Kapil Dev কপিল দেবের ব্যাটিং (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আর্কাইভ)

সে দিনটা ছিল একেবার ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মদিন যেমনটা হয়ে থাকে, তেমনই। ভারত টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। জিম্বাবোয়ের দুই পেসার পিটার রসন এবং কেভিন কুরান মোটেই মার্শাল-হোল্ডিং ছিলেন না, কিন্তু সেদিন তাঁরা দুর্দান্ত সিম বোলিং করেছিলেন, বল তুলছিলেনও। ভারতের টপ অর্ডারে ধস নামিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা।

দুই ওপেনার সুনীল গাভাসকর এবং কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত কোনও রান না করেই ফিরে গিয়েছিেলন। তার পর প্যাভিলিয়নের দিকে ব্যাটসম্যানদের শোভাযাত্রা শুরু হয়। মহিন্দর অমরনাথ, সন্দীপ পাটিল এবং যশপাল শর্মা যখন ফিরে যান, তখন ভারতের রান ৫ উইকেটে ১৭।

কপিল যখন মাঠে নামেন, তখন অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, লাঞ্চের আগেই বোধহয় ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে। এরপর কপিলের খেলা শুরু হয়।

কপিল শুরু করেছিলেন সাবধানে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি গিয়ার চেঞ্জ করেন, স্ট্রোক খেলতে শুরু করেন। প্রথম ৫০-এ তিনি পৌঁছেছিলেন ২৬তম ওভারে, তার পরের ৫০ করেন ১৩ বলে, আর তার পরের পঞ্চাশ ১০ বলে।

তিনি যখন নেমেছিলেন, তখন উল্টোদিকের প্রান্তে ছিলেন রজার বিনি, যিনি ২২ রান করেন। বিনি যখন আউট হন, তখন ভারতের রান ৭৭। মদন লাল করেন ১৭, সৈয়দ কিরমানি ২৪।

গাভাসকর-শ্রীকান্ত দুজনের শূন্য ছাড়া অন্যদের সেদিন অন্যদের রান ছিল অমরনাথ-৫, পাটিল-১, যশপাল শর্মা-৯, রবি শাস্ত্রী-১।

কপিলের সেদিনের স্কোর করার পক্ষে একটা সুবিধে ছিল। ম্যাচ হয়েছিল মাঠের একদিক ঘেঁষে, যার জন্য তিনি সে দিকের শর্ট বাউন্ডারি কাজে লাগিয়ে চার-ছয় মারার সুবিধে পেয়েছিলেন।

অন্যদিকে জিম্বাবোয়ের অধিনায়ক ডানকান ফ্লেচার তাঁর দুই পেসার রসন ও কুরানকে কপিল মাঠে নামার সময়ে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এ সিদ্ধান্তের ফল ভুগেছিলেন তিনি, ইসপিএন ক্রিক ইনফো-তে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেই এ কথা স্বীকার করেছেন ফ্লেচার।

Kapil Dev কপিল দেব

নবম উইকেটে অভেদ্য কপিল-কিরমানি জুটি তোলেন ১২৬ রান। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ৮ উইকেটে ২৬৬ রানে। কপিলদেব ব্যাট করেছিলেন ১৮১ মিনিট, ৬টি ৬ ও ১৬টি চার মেরেছিলেন তিনি। তাঁর সেঞ্চুরি এসেছিল ৭২ বলে।

তবে ম্যাচ কিন্তু শেষ হয়নি। জিম্বাবোয়ের মিডল অর্ডার ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ফর্মে ছিলেন অ্যান্ডি পাইক্রফট, ডেভ হাউটন এবং স্বয়ং ফ্লেচার।

রবিন ব্রাউন এবং গ্র্যান্ট পিটারসনের ওপেনিং জুটি ভালই শুরু করেছিল। মদন লাল স্কোয়ার বাউন্ডারি থেকে এক থ্রোয়ে উইকেট ভেঙে ব্রাউনকে রান আউট করে জুটি ভাঙেন।

ম্যাচের আরেত চার্নিং পয়েন্ট ছিল কপিলের এক হাতে নেওয়া ফ্লেচারের ক্যাচ। ফ্লেচার মাত্র ১৩ রান করতে পেরেছিলেন।

কুরান ৭৩ রান করে একটা চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু জিম্বাবোয়ে ২৩৫ রানে অলআউট হয়ে যায়। ভারতের হয়ে মিডিয়াম পেসাররা কামাল করেছিলেন। মদন লাল ৩ উইকেট নেন, বিনি নেন দু উইকেট, কপিল, অমরনাথ এবং বলবিন্দর সিং সাঁধু একটি করে উইকেট পান।

Ranveer Singh Kapil Dev
Advertisment