কর্ণাটক এক দশক পর কংগ্রেসকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে শাসক বানাল। ২০১৩ সালে কংগ্রেস ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ১২২ আসনে জিতেছিল। শনিবার ২০১৩-কেও ছাপিয়ে গিয়েছে। দক্ষিণের এই রাজ্যে ১৩৫ আসন জিতেছে কংগ্রেস। পেয়েছে ৪৩% ভোট। শরিক সর্বোদয় কর্ণাটক পক্ষ একটি আসন জিতেছে। কংগ্রেসের প্রাপ্ত আসনের অর্ধেকেরও কম আসন পেয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি।
বিজেপির প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্ব দিলেও, রাজধানী বেঙ্গালুরু-সহ দলের শক্তিশালী ঘাঁটি বলে পরিচিত এলাকাগুলোতেও বিজেপির ফল ভালো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী এই নির্বাচনে কর্ণাটকবাসীর কাছে ডবল ইঞ্জিন সরকারকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। লড়াইকে প্রায় ব্যক্তিগতস্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকী, বজরং দলের সঙ্গে বজরংবলীর যোগসূত্র টেনেও প্রচার করেছেন। কিন্তু, ফলাফল বলছে কিছুই তেমন কাজে লাগেনি।
ভোটাররা কংগ্রেসের কল্যাণের প্রতিশ্রুতি আর ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কংগ্রেসের ইস্তেহারে মহান কবি কুভেম্পুর বিখ্যাত লাইন, 'সর্ব জননংদা শান্তিয়া থোটা (যে বাগানে সমস্ত সম্প্রদায় শান্তিতে বাস করে)' ধার করেছিল। কংগ্রেস দাবি করেছে, কথার কথা নয়। তারা দলের ইস্তাহারে যা বলেছে, সবটাই বিশ্বাস করে। আর, প্রতিশ্রুতি পালনও করবে। আর, রাহুল গান্ধীর কথায়, 'কর্নাটক মে নফরত কা বাজার ব্যান হুয়া হ্যায় অউর মহব্বত কি দুকান খুলি হ্যায়। এটাও সত্য যে রাহুলের নেতৃত্বে 'ভারত জোড়ো যাত্রা' কর্ণাটকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে। যেখান দিয়ে রাহুলের মিছিল গিয়েছে, সেখানেই কংগ্রেস ভালো ফল করেছে।
ফল ঘোষণার পর এখন দক্ষিণের রাজ্যটির অনেক বিজেপি নেতাই বলাবলি করছেন যে এই নির্বাচন মোদী-শাহদের কাছে এক বড় শিক্ষা। তার প্রথম হল, কর্ণাটককে বিজেপি দক্ষিণ ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে দেখতেই পারে। তবে, দক্ষিণের এই রাজ্য বিজেপির দুর্গে পরিণত হওয়া থেকে এখনও অনেক দূরে। ৯০-এর দশকে কর্ণাটকে বিজেপি পা রেখেছিল। সেই সময় ব্যাপারটা ছিল রীতিমতো অবাক করার মত ব্যাপার। তবে, একটা বিষয় ছিল। তখন কংগ্রেসের প্রতিদ্বন্দ্বী জনতা দল ভেঙে গিয়েছে। আর, বিজেপি সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছিল।
আরও পড়ুন- বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের ভাইপো গ্রেফতার
তবে, এতকিছুর পরও দক্ষিণে কর্ণাটকের বাইরে বিজেপি সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি। বরং, দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্যে কংগ্রেসের বিরোধী শক্তি হিসেবে রাশ হাতে নিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি আর আঞ্চলিক দলগুলো। এমনকী, কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হওয়া দলকেও জনগণ ক্ষমতায় বসিয়েছে। কিন্তু, বিজেপিকে বসায়নি। যেমন ওয়াইএস আর কংগ্রস অন্ধ্রপ্রদেশে, তেলেঙ্গানায় বিআরএস, তামিলনাড়ুতে দ্রাবিড় দল, কেরলে সিপিএম। সূত্রের খবর, হারের ধাক্কা সামলে এখন এভাবেই গোটা বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করছেন মোদী-শাহরা। যা কাজে লাগবে আগামী দিনে।