Advertisment

বিজেপির গোহত্যা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা, কেন এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্তে পা বাড়াতে চাইছে কংগ্রেস?

বিরোধী কংগ্রেস এবং JDS আপত্তি সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার আইনটি ২০২১ সালে কার্যকর করে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Karnataka, cow, slaughter, protection, BJP, Congress, Indian Express, Express Explained," />

কর্ণাটক প্রিভেনশন অফ স্লটার অ্যান্ড প্রিজারভেশন অফ ক্যাটেল অ্যাক্ট বাতিল করতে চায় কংগ্রেস

কেন কংগ্রেস বিজেপির গোহত্যা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করেছে? যা বিতর্কিত! কর্ণাটক প্রিভেনশন অফ স্লটার অ্যান্ড প্রিজারভেশন অফ ক্যাটেল অ্যাক্ট, ২০২০ অনুসারে রাজ্যে গোহত্যার উপর প্রায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আগের বিজেপি সরকার। এখন নতুন করে রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেই এই আইন প্রত্যাহারের কথা চিন্তা ভাবনা করছে। কিন্তু কেন? কংগ্রেস সরকারের পশুপালন মন্ত্রী কে ভেঙ্কটেশ ইতিমধ্যেই এক বিবৃতিতে বলেছেন, “রাজ্যে যদি মহিষ ষাঁড় হত্যা নিষিদ্ধ না হয় তাহলে গো হত্যাই বা কেন নিষিদ্ধ হবে”?

Advertisment

কংগ্রেস দল তার নির্বাচনী ইস্তেহারেই তার মনোভাব স্পষ্ট করেছে। দলের তরফে আগেই বলা হয়েছিল ২০২০ সালের আইন চাষীদের অনেক অসুবিধার মুখে ফেলেছে সেই কারণে তারা গোহত্যা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে চায়।

কর্ণাটক প্রিভেনশন অফ স্লটার অ্যান্ড প্রিজারভেশন অফ ক্যাটেল অ্যাক্ট, ২০২০ কী?

বিরোধী কংগ্রেস এবং JDS আপত্তি সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের রাজ্য বিধানসভা এবং কাউন্সিলে পাস হওয়ার পরে আইনটি ২০২১ সালে কার্যকর করে। রাজ্যে সব ধরনের গবাদি পশু হত্যা নিষিদ্ধ করার জন্য এটি একটি কঠোর আইন। আইনের বিরোধিতায় প্রথম থেকেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিরোধী দল কংগ্রেস। আইন অনুসারে রাজ্যে গরু ও বাছুরদের মারা নিষিদ্ধ। ১৩ বছরের বেশি বয়সী মহিষকে শুধুমাত্র হত্যা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এই আইনে। অবৈধ বিক্রি, চোরাচালন আর গোহত্যাকে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে এবং এই কাজের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে আইনে।

নতুন আইনে আইন লঙ্ঘনের শাস্তি তিন থেকে সাত বছরের জেল বা ৫০,০০০ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা জেল ও জরিমানা উভয়ই। ১৯৬৪ সালের আইন অনুসারে, সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। নতুন আইনে গবাদি পশুর বেআইনি পরিবহন, মাংস বিক্রয় এবং জবাইয়ের জন্য গবাদি পশু ক্রয়ের ওপরেও রয়েছে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।

গোহত্যা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কৃষক সম্প্রদায়ের সুপ্ত ক্ষোভ ছিল। সেই সঙ্গে সার এবং পশুখাদ্যের আকাশছোঁয়া দাম, কৃষকের আর্থিক ক্ষতি চলতি নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহল। এই আইনের বিরোধীতা করে সুর চড়িয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেতা সিদ্দারামাইয়া। তিনি বলেছিলেন, “গবাদি জবাই আইন প্রত্যাহার করুন, এটি একটি গোপন এজেন্ডা এবং সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা। অসুস্থ ও বয়স্ক গবাদি পশুর কোনো ক্রেতা নেই। এটা কৃষকদের জন্য ক্ষতি,। আর সরকারে ফিরেই সেই লক্ষ্যেই বড় পদক্ষেপের বার্তা শোনা গিয়েছে কংগ্রেসের গলায়।

যদিও গোহত্যা বন্ধ নিয়ে মন্তব্যের জেরে কংগ্রেস কর্ণাটকের পশুপালন মন্ত্রী কে.কে. ভেঙ্কটেশকে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়, দলের সাধারণ সম্পাদক ও কর্ণাটকের ইনচার্জ রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা তাঁকে তার দফতরের দিকে মনোনিবেশ করার নিদান দিয়ে বলেন, এই ধরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া তার উচিত নয়।

দলের সাধারণ সম্পাদক ও কর্ণাটকের ইনচার্জ রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বৃহস্পতিবার (৮ জুন) এ তথ্য জানিয়েছেন। সুরজেওয়ালা বলেছিলেন যে তিনি ভেঙ্কটেশকে বলেছেন নীতিগত সিদ্ধান্ত না নিতে কারণ এটি তার এখতিয়ার নয়। সুরজেওয়ালা মন্ত্রী কে. ভেঙ্কটেশ দুগ্ধ খামারগুলির সমস্যা দূর করতে সেই সঙ্গে যাতে বিক্রেতারা দুধের সঠিক দাম পান তা নিশ্চিত করতে বলেন।

মঙ্গলবার (৬ জুন) বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধজাত মন্ত্রী পুরুষোত্তম রুপালা বলেছেন যে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং সিনিয়র নেত্রী সনিয়া গান্ধীর এই বিষয়ে কথা বলা উচিত। খড়গে এবং সোনিয়া গান্ধীকে এই বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য জিজ্ঞাসা করে, তিনি বলেন, "তারা (কংগ্রেস) কি চায় তাদের সরকার গোহত্যা দিয়ে তার মেয়াদ শুরু করুক।"

কর্ণাটকে ২২৪টি আসনের মধ্যে ১৩৫টি আসন জিতে কংগ্রেস সরকার গঠন করেছে। এখন দলের মনোভাব তুঙ্গে। সেই সঙ্গে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খাড়গে স্পষ্ট বলেছেন যে শুধুমাত্র গোহত্যা বা হিজাব নয়, বিজেপি সরকারের যে কোনও নিয়ম ও আইন, যা রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে, তা নিষিদ্ধ করা হবে। অন্যদিকে, এর রাজনৈতিক বিরোধিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন যে কংগ্রেস সরকারের মনোযোগ রাজনীতিতে নয়, কেবল অর্থনীতিতে।

প্রিয়াঙ্ক খাড়গে বলেছেন যে ‘বোমাই সরকার গোহত্যা বিরোধী বিল এনেছে শুধুমাত্র নাগপুরে বিজেপির কর্তাদের খুশি করার জন্য। এতে কৃষক বা শিল্পের কোন লাভ হয়নি। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের আর্থিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে এই বিল পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে’।

পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। আগামী দুই বছরে, আমরা আশা করি বাজেট ছোট থাকবে এবং একই সাথে মন্ত্রিসভার কিছু বড় সিদ্ধান্তও স্থগিত রাখা হতে পারে। পশুখাদ্য সরবরাহের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বিপুল ব্যয়ের জন্য তিনি বিজেপি সরকারকে ফের নিশানা করেন।

তিনি বলেন, ‘বিজেপির হিসাব অনুসারে, প্রতিদিন পশু প্রতি ৭০ টাকা বরাদ্দ ছিল । আমি জানি না কিভাবে এই পরিসংখ্যান এসেছে। কিন্তু তার হিসাব মানে রাজ্যের ১.৭ লক্ষ গবাদি পশুকে খাওয়াতে ৫,২৪০ কোটি টাকা খরচ হত আগের সরকারের’।

এই আইনগুলির পরিবর্তনের রাজনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খার্গের ছেলে প্রিয়াঙ্ক বলেন ‘জনগণ বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেছে। তাই আমরা কর্ণাটকের কৃষক, ব্যবসায়ী সহ সমগ্র রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা বিজেপির আদর্শের বিরুদ্ধে বিশাল জনসমর্থন পেয়েছি’।

karnataka CONGRESS bjp
Advertisment