রামন্দির নির্মাণের ঢাকে কাঠে পড়েছে বছর দুই হব-হব। সে বিতর্কের রেশ এখনও মেটেনি, পুরো। কিন্তু তার মধ্যেই নতুন করে মন্দির-মসজিদ টানাপোড়েনের ঢেউ উঠল। এবারও উত্তরপ্রদেশ। তবে অযোধ্যা নয়, বারাণসী। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং জ্ঞানবাপী মসজিদ-- যে দুটি পাশাপাশি, দুয়ের মধ্যেই টানাহ্যাঁচড়া নয়া উচ্চতায় পৌঁছেছে।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ভেঙে মুঘল বাদশাহ অওরঙ্গজেব ওই মসজিদ নির্মাণ করেন, এমনই দাবি এবং বিশ্বাস হিন্দুদের একাংশের। সেই দাবির কোনও সার আছে কিনা, তা বুঝে নিতে বৃহস্পতিবার ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগকে জ্ঞানবাপী মসজিদের ভিডিও সমীক্ষা নতুন করে শুরুর করার নির্দেশ দিয়েছে ওই আদালত। এ নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে এ মাসের ১৭ তারিখের মধ্যে।
জ্ঞানবাপী মসজিদ এলাকায় শৃঙ্গারগৌরী মন্দিরে বছরের সব দিন পুজো করার আবেদন জানিয়ে পাঁচ হিন্দু মহিলা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই মামলায় গত মাসেই ওই সমীক্ষার নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় আদালত নিযুক্ত অ্যাডভোকেট কমিশনার অজয়কুমার মিশ্রের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগে সমীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। নতুন করে সমীক্ষাপর্ব শুরুর নির্দেশে আদালত দু'জন অতিরিক্ত কমিশনারকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেছে। আইনজীবী বিশাল সিং এবং অজয়প্রতাপ সিং। তাঁরা সহযোগিতা করবেন অজয়কুমার মিশ্রকে। আদালতের এই সমীক্ষা-নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় অঞ্জুমান-ইনতেজামিয়া মসজিদ কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মামলা ওঠে, কিন্তু নিম্ন আদালতের নির্দেশে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট।
মামলার গতি ও ইতিহাসের প্রকৃতি
রাখি সিং, লক্ষ্মী দেবী, সীতা সাহু, মঞ্জু ব্যাস এবং রেখা পাঠক। এই পাঁচ মহিলা মামলাকারী। রাখি দিল্লির বাসিন্দা। বাকিরা বারাণসীর। মসজিদ অঞ্চলের শৃঙ্গারগৌরী মন্দির বছরে একবার খুলে দেওয়া হয়, আবেদনকারী পাঁচ হিন্দু মহিলার দাবি, সারা বছরই পুজোপাঠ করতে দেওয়া হোক। মাঝখানে রটে গিয়েছিল, পাঁচ জন নাকি মামলা প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। যদিও প্রমীলা বাহিনীর চার জন সীতা সাহু, মঞ্জু ব্যাস, রেখা পাঠক এবং লক্ষ্মী দেবী সাংবাদিক বৈঠক করে এই জল্পনা নস্যাৎ করেন। জানিয়ে দেন, তাঁরা এর শেষ দেখে ছাড়বেন।
বিশ্ব বৈদিক সনাতন সংঘের প্রধান জিতেন্দ্র সিংয়ের এনজিও এই মামলার পিছনে রয়েছে। জিতেন্দ্র আবেদন প্রত্যাহারের কথা বলেছিলেন, সেটাই ছিল জল্পনার ভিত্তি। যদিও পাঁচ মহিলার চার জনই সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, মামলা প্রত্যাহারের কোনও সিদ্ধান্ত হলে তাঁরা তার বিরোধিতা করবেন। আপাতত, মামলা প্রত্যাহার হয়নি এবং আদালতের নির্দেশে সমীক্ষার কাজও এখন বাধামুক্ত। যাকে হিন্দু মামলাকারীরা তাঁদের প্রাথমিক জয় হিসেবেই দেখছেন।
আরও পড়ুন- তাজমহল হিন্দু মন্দির, কেন এই দাবি, কেন বাতিল হল এই সংক্রান্ত মামলা
কী দাবি
১৬৬৯ সালে মুঘল বাদশাহ অওরঙ্গজেব জ্ঞানবাপীতে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ভেঙে এই জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করেন। বিতর্কিত এই দাবি হিন্দু আবেদনকারীদের। ফলে এও দাবি, মুসলিমদের এই চত্বরে উপর কোনও অধিকারই নেই। ১৯৯১ সালে আবেদন বারাণসী আদালতে। জ্ঞানবাপী চত্বরে পুজোপাঠের অনুমতি চাওয়া হয় তাতে। এছাড়াও দাবি করা হয়, আদালত যেন জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরকে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। মসজিদ ভেঙে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরকে নতুন করে গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সাল। এর বিরুদ্ধে ইলাহবাদ হাইকোর্টে যায় অঞ্জুমান ইনতেজামিয়া মসজিদ কমিটি। নিম্ন আদালতে মামলায় স্থগিতাদেশ দেয় উচ্চ আদালত। ২০১৯ সালে আইনজীবী বিশ্বেশ্বর রাস্তোগি বারাণসী জেলা আদালতে এই ইস্যুতে মামলা করেন। তাঁর দাবি, পুরাতত্ত্বিক সমীক্ষা চালানো হোক গোটা জ্ঞানবাপী অঞ্চলে। ২০২০ সালে আইএসআইয়ের সমীক্ষার বিরুদ্ধে কোমর বাঁধে অঞ্জুমান মসজিদ কমিটি। ওই বছরেই নিম্ন আদালতে ফের যান রাস্তোগি। তাঁর দাবি, যেহেতু ইলাহবাদ আদালত মামলায় স্থগিতাদেশের সময়সীমা বাড়ায়নি, তাই শুনানি শুরু হোক।
Read story in English