An Indian Island went to Sri Lanka: সময়টা ১৯৭৪ সাল। প্রধানমন্ত্রী তখন ইন্দিরা গান্ধী। সেই সময় ভারতীয় প্রশাসন এক দ্বিপাক্ষিক আইন মেনে কাচাথিভু দ্বীপটি শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, এই দ্বীপ ভারতীয় তামিল জেলেদের মাথাব্যথার কারণ। শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী এই দ্বীপের আশপাশে গেলেও ভারতীয় মৎস্যজীবীদের গ্রেফতার করে জেলে পুরে দেয়। তাঁদের ট্রলার ভাঙচুর করে। মাছ ধরার জাল ছিঁড়ে দেয়। ব্যাপক মারধর করে। বছরের পর বছর ধরে এমনটা চলছে। হামেশাই অভিযোগ ওঠে, শ্রীলঙ্কার জেলে ভারতীয় মৎস্যজীবীরা করুণ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
কাচাথিভুর অবস্থান এবং হস্তান্তর
ধানুশকোডি থেকে ২০ মাইলের কিছু বেশি উত্তরে কাচাথিভু। তামিল ভাষায় এই নামের অর্থ 'অনুর্বর দ্বীপ'। এই বিতর্কিত অঞ্চল ২৮৫ একরের একটি জনবসতিহীন অঞ্চল। যার সৃষ্টি হয়েছিল ১৪ শতকের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে। সম্প্রতি, কাচাথিভু ফের বিশেষভাবে আলোচনায় ফিরে এসেছে। কারণ, অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভা নির্বাচনের মুখে এই দ্বীপ ইস্যুতে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন। দ্বীপটি যখন হস্তান্তর করা হয়েছিল, সেই সময় শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতায় ছিলেন সিরিমাভো বন্দরনায়েকে। এই হস্তান্তর সেতুসমুদ্রম উপকূলীয় অঞ্চলের সামুদ্রিক সীমারেখাকে চিহ্নিত করেছিল।
বিবাদ বেড়েছে
কিন্তু, তারপর থেকে এই দ্বীপ নিয়ে বিবাদ ক্রমশ বেড়েছে বই কমেনি। সেই সমস্যা এতটাই যে বর্তমানে তা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক বড় সমস্যাগুলোর অন্যতম। কেন্দ্রে মোদী সরকারের জমানায় শ্রীলঙ্কার আর্থিক অবস্থা চরমে। মোদী সরকার শ্রীলঙ্কাকে ব্যাপকহারে অর্থসাহায্য করেছে। তার প্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কা এই দ্বীপটি ভারতকে লিজ দিতে পারে বলেই আবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দ্বীপরাষ্ট্রের মৎস্যজীবীদের একাংশ।
কাচাথিভুর ইতিহাস
কাচাথিভু একসময় রামনাদ রাজত্বের অংশ ছিল। রামনাথপুরম রাজত্ব (বা রামনাদ) ১৬০৫ সালে মাদুরাইয়ের নায়ক রাজবংশ তৈরি করেছিল। এটি ৬৯টি উপকূলীয় গ্রাম এবং কাচাথিভু-সহ ১১টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ১৬২২ এবং ১৬৩৬ সালের মধ্যে রামানাথপুরমের প্রধান কুথান সেতুপতির জারি করা একটি তামার ফলক, কাচাথিভু-সহ বর্তমান শ্রীলঙ্কার থালাইমান্নার পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে ভারতীয় মালিকানার সাক্ষ্য দেয়। ১৭৬৭ সালে, ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কাচাথিভু দ্বীপটি ইজারা নেওয়ার জন্য মুথুরামালিঙ্গা সেতুপতির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন বিদেশসচিব ডব্লিউ টি জয়াসিংহে জানিয়েছেন, ১৮৪৫ সালে সিলনের গভর্নর কলিন ক্যাম্পবেলের জারি করা তিনটি ঘোষণা, জাফনাপত্তনমের সীমারেখা নির্দিষ্ট করেছিল। সেই ঘোষণায় কাচাথিভুর কোনও উল্লেখ ছিল না। যা থেকে ফের প্রমাণ হয়, দ্বীপটির মালিকানা ঐতিহ্যগতভাবে ভারতেরই ছিল। পরবর্তী সময়েরও নানা নথি থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে দ্বীপটি ভারতেরই ছিল।
ব্রিটিশদের সঙ্গে চুক্তি এবং বিরোধ
১৯১৩ সালে রামনাদের রাজা এবং ব্রিটিশ ভারতের কাউন্সিল ইন ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি অফ স্টেটের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। যে চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশরা দ্বীপটি ইজারা নিয়েছিল। সেই ইজারা পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতার সময়কাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, তারমধ্যে বপন হয়ে গিয়েছিল বিরোধের বীজ। ১৯২১ সালের ২৪ অক্টোবর, ঔপনিবেশিক ভারত ও ঔপনিবেশিক শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিরা মৎস্যজীবীদের সীমারেখা নির্ধারণের জন্য বৈঠক করেন। সেখানে কাস্টমসের প্রধান কালেক্টর বি. হর্সবার্গের নেতৃত্বে সিংহলিরা প্রমাণ করে দেন, ওই দ্বীপ আসলে তিন মাইল দূরের জাফনারই অঞ্চল।
আরও পড়ুন- ভারতের দ্বীপ শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস! ভোটের মুখে বিরাট অভিযোগ মোদীর
স্বাধীনতার পর কাচাথিভু
স্বাধীনতার পর বারবার ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে স্থান পেয়েছে কাচাথিভুর প্রসঙ্গ। পরবর্তী ক্ষেত্রে ভারত-শ্রীলঙ্কা জলসীমা বিভাজনের ক্ষেত্রেও উঠে এসেছে কাচাথিভুর নাম। নিউ ইয়র্ক সিটির সেন্ট্রাল পার্কের চেয়ে পাঁচ গুণ বড় বর্গাকার আকৃতির এই দ্বীপ, চোরাচালানের ঘাঁটি, জেলেদের বিশ্রামস্থল, জেলেদের জাল শুকোনোর জায়গা হিসেবে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। রামনাদ রাজ্যের ব্যবসায়ী সেনিকুপ্পান পাদায়াচি এই দ্বীপে তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন সেন্ট অ্যান্টনির গির্জা। সেই গির্জায় আজও প্রতিবছর ভারত এবং শ্রীলঙ্কা থেকে ভক্তরা ভিড় করেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গুজরাটের কচ্ছের রণের ২৫০ মাইল শুকনো অঞ্চল পাকিস্তানকে দিয়ে দেন। আর, তারপরই কাচাথিভু পাওয়ার জন্য লাফালাফি শুরু করে শ্রীলঙ্কা। রাজনৈতিক ভাবে শ্রীলঙ্কাকে পাশে পেতে সেই দ্বীপকে শেষ পর্যন্ত ইন্দিরা গান্ধীর সরকার শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দেয়। নরেন্দ্র মোদীর সরকার এখন চিনকে রুখতে কাচাথিভু দ্বীপেই নৌঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা করছে বলে বিভিন্ন মহলে জল্পনা চলছে।