শুখা রাজ্য। মানে খরা কবলিত নয়, এ ক্ষেত্রে। এর মানে, মদ্যপান ও বিক্রি নিষেধ যে রাজ্যে, ইংরেজিতে যাকে বলে ড্রাই স্টেট। পাঁচ বছর আগে মদ্যনিষিদ্ধ রাজ্য হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেছিল ঈশ্বরের আপন দেশ বলে খ্যাত কেরালা। সে পথ থেকে সরে আসছে তারা। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সোমবার জানিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের পেশাদাররা, য়াঁরা বেশি রাত অবধি কাজ করেন, তাঁরা অভিযোগ করেছেন রাজ্যে প্রমোদের বিশেষ বন্দোবস্ত নেই, পাব এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারবে। গত মাসে সরককার স্থির করেছে যেসব ছোট ভাঁটিখানা স্থানীয় ফলপাকুড় থেকে কম অ্যালকোহল সম্পন্ন মদ বানায়, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে।
পূর্বতন সরকারের সিদ্ধান্ত থেকে বাম সরকার সরে এল কেন! বিরোধীদের অভিযোগ লিকার লবির অর্থ গ্রহণ করেছে বামেরা।
আগের কংগ্রেস নেতৃ্ত্বাধীন ইউডিএফ জোট সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ২০২৫ সালের মধ্যে কেরালায় মদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে। সে লক্ষ্যে তারা ২০১৪ সালে পাঁচতারার নিচে সব হোটেলের বার বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০১৬ সালে এলডিএফ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মদহীনতার নীতির ব্যাপারে নরম হতে শুরু করে তারা। ২০১৭ সালে তিন তারা ও চারতারা হোটেলে ভারতে তৈরি বিদেশি মদ বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়। দু তারা হোটলগুলিকেও সুপ্রিম কোর্টের যে হাইওয়ে থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে মদ বিক্রির নিষেধাজ্ঞা তা পালনে শর্তসাপেক্ষে বিয়ার ও ওয়াইন পার্লার চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। আগে বার খোলা রাখার নিয়ম ছিল রাত ১০টা পর্যন্ত, সে সময়সীমাও বাড়িয়ে রাত ১১টা করে দেওয়া হয়। হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট হলে ফি-এর বিনিময়ে মদ পরিবেশনের অনুমতি দেওয়া হয়, অনুমতি দেওয়া হয় বিমানবন্দরের ডোমেস্টিক এলাকায় মদ সরবরাহ করারও।
কেন এই নরম নীতি
২০১৪ সাল পর্যন্ত কেরালায় বার্ষিক মাথা পিছু মদ্যপানের পরিমাণ ছিল ৮.৩ লিটার, যা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বাম সরকার বলছে এই শিল্পের উপর যে আক্রমণ হয়েছে তাতে বহু কর্মহানি তো হয়েইছে, উপরন্তু পর্যটন শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আর্থিক যুক্তিতেই আটকে থাকছে না সরকার।
ভারসাম্যের নীতি
মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন বলেছেন, তাঁর সরকার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বাসী, নিষেধাজ্ঞায় নয়। তাঁর দাবি নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে ড্রাগের ব্যবহার রাজ্যে তুমুল বেড়েছে। এই নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুসারেই মদ কেনার বয়সসীমা ২১ থেকে ২৩-এ বাড়ানো হয়েছে। সোমবার তিনি সরকারের পাব খোলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার সময়েই তিনি বলেন, কেরালা বিভারেজ কর্পোরেশনের আউটলেটগুলিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে খদ্দেরদের আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যায় এবং তাঁদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা না করতে হয়। বিজেপি ও কংগ্রেস উভয় পক্ষই অভিযোগ এনেছে বাম সরকার লিকার লবির চাপে মাথা নত করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তবে যে যাই বলুক, কেরালার মদ্যানুরাগী ও মদ ব্যবসায়ীরা যে এ পরিস্থিতিতে অতীব তুষ্ট, তাতে সন্দেহ নেই।