Kerala govt goes to SC over Governor: অনেকটা যেন পশ্চিমবঙ্গের মত ব্যাপার। কেরলেও বিরোধী সরকার। আর, সেখানে বিলগুলোয় সম্মতি দেওয়া আটকে দিয়েছেন রাজ্যপাল। যার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার আসার পর থেকে রাজ্যপালদের সঙ্গে বিরোধী রাজ্য সরকারগুলোর বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। সেই বিরোধে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে বিলে রাজ্যপালের সই না করার ঘটনা।
কেরল সরকার বনাম রাজ্যপাল
কেরল সরকার গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। সরকারের অভিযোগ, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কেরল রাজ্যের পাস করানো চারটি বিলে সম্মতি দেননি। সম্মতি না দেওয়ার কোনও কারণও তিনি দেখাননি। আবার, সাতটি বিলে সম্মতি আটকে রেখেছেন রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। বাম গণতান্ত্রিক জোটশাসিত কেরল, রাষ্ট্রপতির কাছে রাজ্যের বিলগুলো পেশ করাকে 'অসাংবিধানিক এবং সরল বিশ্বাসের অভাব' বলে ঘোষণা করার জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
বিরোধীশাসিত রাজ্য বনাম রাজ্যপাল
এটা বিরোধী দলগুলি দ্বারা শাসিত রাজ্যগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায়। এমনিতে রাজ্যপালরা কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিযুক্ত হন। গত বছর কেরল, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং পাঞ্জাব-সহ একাধিক বিরোধীশাসিত রাজ্য, বিলগুলো রাজ্যপালরা দীর্ঘসময় আটকে রাখছেন বলে অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।
আইন প্রণয়নে রাজ্যপালের ভূমিকা
সংবিধানের ২০০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, বিধানসভায় কোনও বিল পাস হওয়ার পরে, তা রাজ্যপালের কাছে পেশ করতে হবে। রাজ্যপালের কাছে তখন তিনটি বিকল্প আছে। তিনি বিলে সম্মতি দিতে পারেন। বিলে সম্মতি দেওয়া স্থগিত রাখতে পারেন। রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য বিলটিকে পাঠাতে পারেন।
সম্মতি ইস্যুতে রাজ্যপালের ভূমিকা
২০০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, 'রাজ্যপাল তাঁর কাছে উপস্থাপনের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিলটি ফেরত দেবেন। একসঙ্গে একটি বার্তার মাধ্যমে তিনি অনুরোধ করবেন, যে বিধানসভা বিল বা তার কোনও নির্দিষ্ট বিধান পুনর্বিবেচনা করবে। যদি বিলটি বিধানসভায় সংশোধন-সহ বা ছাড়াই আবার পাস করা হয় এবং সম্মতির জন্য রাজ্যপালের কাছে পেশ করা হয়, তবে রাজ্যপাল তাতে সম্মতি দেওয়া থেকে পিছিয়ে আসবেন না।'
আইন প্রণয়নের চূড়ান্ত ক্ষমতা
এই আইনের শেষের অংশটি স্পষ্টভাবে রাজ্য সরকারকে আইন প্রণয়নের চূড়ান্ত ক্ষমতা দিয়েছে। শুধু, তাই নয়, আইনটিতে বলা হয়েছে, রাজ্যপালের কাছে উপস্থাপনের পর 'যত তাড়াতাড়ি সম্ভব' তিনি তাতে ছাড়পত্র দেবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলোর রাজ্যপালরা সেই নির্দেশ মানছেন না। দিনের পর দিন বিল আটকে রাখছেন। ফলে, বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলো সুপ্রিম কোর্টের কাছে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই ব্যাপারে বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলোর অভিযোগ, রাজ্যপালের এমন আচরণের ফলে বিধানসভাগুলো অচলাবস্থায় পড়ছে।
আরও পড়ুন- ভারতের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্যে বিরাট চেষ্টা পাকিস্তানের! এত আগ্রহী কেন ইসলামাবাদ?
আইন প্রণয়নে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা
রাজ্যপাল বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে বিবেচনার জন্য পাঠালে, রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দিতে পারেন। অথবা সম্মতি না-ও দিতে পারেন। এমনটাই বলা আছে সংবিধানের ২০১ অনুচ্ছেদে। তাতে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালকে পুনর্বিবেচনার জন্য বিলটি বিধানসভায় ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেন। তারপরে রাজ্য সরকারের কাছে বিলটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য ছয় মাস সময় থাকে। রাজ্য সরকার তা পুনর্বিবেচনা করতে ব্যর্থ হলে, বিলটি বাতিল হয়ে যায়। যদি বিধানসভা বিলটি ফের পাস করে, এক্ষেত্রে নিয়ম হল, তা অবশ্যই রাষ্ট্রপতির কাছে ফেরত পাঠাতে হবে। তিনি রাজ্যপালের মত বিলটিতে সম্মতি দিতে বাধ্য নন। এক্ষেত্রে কিন্তু, রাজ্য সরকারগুলোর কিছু করার নেই।