Kerala man killed on Israel farm: সোমবার (৪ মার্চ) উত্তর ইজরায়েলের একটি বাগানে লেবানন থেকে হিজবুল্লাহর ছোড়া ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ে। তাতে একজন ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। দু'জন আহত হয়েছেন। নয়াদিল্লিতে ইজরায়েলি দূতাবাস এক্স-এ লিখেছেন, হিজবুল্লাহ 'মার্গালিওটের উত্তর গ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে কৃষিকাজ করা কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ঘটনার সময় ওই কৃষিশ্রমিকরা বাগানে চাষ করছিলেন। এই হামলা কাপুরুষোচিত জঙ্গি নাশকতা।' কিন্তু, এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কেন ওই ভারতীয় কৃষি শ্রমিকরা ইজরায়েলে গিয়েছিলেন? আর যদি সংঘাত গাজায় হয়, তাহলে উত্তর ইজরায়েলের শ্রমিকরা কেন হামলার মুখে পড়ছেন?
- নার্সদের দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় মুদ্রায় প্রতিমাসে ১ লক্ষ টাকা।
- সাধারণ কাজেও দেওয়া হচ্ছে বিপুল মাইনে।
- পাশাপাশি রয়েছে বিনামূল্যে খাবার, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা।
ইজরায়েলের হিজবুল্লাহ সমস্যা
ইজরায়েলের উত্তর সীমান্তে রয়েছে লেবানন। বহু বছর ধরে এই সীমান্ত অশান্ত। ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর, দক্ষিণ ইজরায়েলে হামাসের হামলার পরদিনই, লেবাননের শিয়া রাজনৈতিক দল তথা জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ, প্যালেস্তাইনের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ইজরায়েলে রকেট হামলা চালায়। তারপর থেকে, ইজরায়েল প্রায় ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত বরাবর বিমান ও কামান হামলা চালিয়েছে। যাতে কমপক্ষে ২২ জন সাধারণ নাগরিক সহ ২৪০ জনেরও বেশি লেবাননবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এমনটাই দাবি সংবাদ সংস্থা আলজাজিরার। রাষ্ট্রসংঘের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন অনুযায়ী, ৮ অক্টোবর দক্ষিণ লেবানন থেকে ৮৭,০০০-এরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
পালটা চেষ্টা চালাচ্ছে ইজরায়েল
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইজরায়েল তার সীমান্ত এবং লেবাননের জনসংখ্যার মধ্যে একটি 'বাফার স্পেস' তৈরি করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। যাতে হিজবুল্লাহর আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। এরই জেরে সোমবার হিজবুল্লাহ রকেট হামলা চালিয়েছে। যাতে এক ভারতীয় নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। আর, দুই ভারতীয় নাগরিক গুরুতর আহত হয়েছেন। লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় (১৯৭৫-৯০), ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে। তারা ইজরায়েলের বিরোধী। পশ্চিম এশিয়ায় ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এর লক্ষ্য অনেকটাই সুন্নি কট্টরপন্থী জঙ্গি সংগঠন হামাসের মতই।
ইজরায়েলে ভারতীয় শ্রমিকরা কাজ করছেন
ইজরায়েলে জনসংখ্যা কম। সেই চাহিদা মেটাতে তারা শ্রমিকদের আমদানি করে। ৭ অক্টোবরের হামলার আগে, প্যালেস্তিনীয় এবং আরবরা ইজরায়েলে কাজ করতেন। যার মধ্যে প্যালেস্তিনীয়দের সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র ইজরায়েলের নির্মাণ শিল্পেই প্রায় ৮০ হাজার প্যালেস্তিনীয় কাজ করতেন। কিন্তু, ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইজরায়েল প্যালেস্তিনীয়দের কাজের অনুমতিতে স্থগিতাদেশ দেয়। অন্যান্য বহু বিদেশি কর্মী নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে ইজরায়েল ছেড়ে চলে যান। এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েলে ব্যাপক শ্রম ঘাটতি শুরু হয়। যে ঘাটতি এখন ভারতীয়রা পূরণ করছেন। ইজরায়েল ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ভারতীয়দেরকে নির্মাণ এবং কৃষি খাতে কর্মসংস্থানের ভিসা দেওয়া শুরু করে। প্রথম দফা ভিসা ইস্যুর পর, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৮০০ ভারতীয় ইজরায়েলে কাজ করতে যান।
এগ্রি ভিসার জন্য ব্যাপক খরচ
একটি এগ্রি ভিসা পেতে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়। তার মধ্যেই এজেন্ট এবং রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ফি-ও রয়েছে। কেরলের কিছু কর্মী, যাঁরা এখন ইজরায়েলে আছেন, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন যে, বর্তমানে ইজরায়েল যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের বেশিরভাগই কেরল, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। মৃত ৩১ বছরের প্যাট নিবিন ম্যাক্সওয়েল এবং আহত আরও দুই ভারতীয়, সকলেই কেরলের বাসিন্দা। এঁরা বাগিচা শ্রমিক হিসেবে ইজরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে, ইজরায়েলে বর্তমানে কৃষি মরশুম চলে গিয়েছে। সেই কারণে ওই বিভাগে নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। তবে, অন্যান্য চাকরিতে নিয়োগ চলছে। হাজার হাজার ভারতীয় সেই সব কাজে নিযুক্ত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন- চিনের বাড়াবাড়ির জবাব! লাক্ষাদ্বীপে ‘আইএনএস জটায়ু’ উদ্বোধন নৌসেনার
ইজরায়েলে ভারতীয় পরিচর্যা কর্মীরা
ইজরায়েলে ভারতীয় শ্রমিকদের উপস্থিতি অবশ্য নতুন নয়। মোটামুটি ১৮,০০০ ভারতীয় গত অক্টোবরে সেদেশে কাজ করছিলেন। তাঁরা প্রায় ১৪,০০০ বয়স্ক ইজরায়েলিকে দেখভাল করছিলেন। নার্সিং কর্মীরা সেখানে ভালো বেতন পাচ্ছেন। তবে, ইজরায়েলে কেয়ারগিভার ভিসা পেতে ১০ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়। পরিচর্যা কর্মীরাও খুব ভাল উপার্জন করেন। প্রতিমাসে ১ লক্ষ টাকারও বেশি। এর পাশাপাশি তাঁরা বিনামূল্যে খাবার, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা পান। পাশাপাশি আছে ওভারটাইমও। বর্তমান সংঘাতের সময়, পরিচর্যার কাজ সেখানে অনেক বেশি নিরাপদ। কারণ, কর্মীরা বেশিরভাগই উচ্চ-সুরক্ষিত ইজরায়েলি শহরগুলোয় থাকেন। আর, কৃষি শ্রমিকদের বেশিরভাগই কাজ করেন লেবানন সীমান্তে। তাই তাঁদের ওপর হামলার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।