বয়স হইল ষাট হাজার বছর,/ চলিতে কাঁপেন রাজা করি থরথর।/ ভাবিলেন তাই, 'মোর বল গেছে টুটি,/ রামেরে বুঝায়ে কাজ আমি লই ছুটি।' তার পরই রামায়ণ। ঘটনার ঘনঘটা। বর্তমান ভারতে যে রাম রাজনীতিরও চরিত্র। ভক্তির রস রাজনীতির এই হাওয়ায় খরস্রোতা। রাম-নামের সঙ্গে জড়িয়ে এ দেশের নানা স্থান চোখে দেখে, চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জনের বাসনা অনেকেরই হতে পারে। হতেই পারে। হবে নাই বা কেন। বেড়েছেও বোধ হয় ইদানিং। তাই হাজির-- ভারত গৌরব ট্রেন। যার প্রথম যাত্রা জুনের ২১ তারিখ। ভারত শুধু নয়, এই ট্রেন মহাকাব্যিক রামসীতার পায়ের দাগ দেখে দেখে নেপালেও যাবে। দেশের পর্যটন মন্ত্রকের স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের আওতাধীন এটি 'রামায়ণ আবর্তন' (রামায়ণ সার্কিট) নামে চিহ্নিত। ট্যুর-টি পুরাণকাহিনির মধ্যে নিয়ে চলে যাবে আপনাকে। প্রাচীন গৌরবের প্রদীপ জ্বলে ওঠে আপনার ভিতরে, যেন সেই ব্যবস্থাটাই করা হয়েছে পদে পদে, নিক্তি মেপে।
ট্রেন-কথাও অমৃতসমান!
১৪ কোচের এই ট্রেন, আইআরসিটিসি পরিচালিত, পর্যটকদের জন্য রয়েছে ১১টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তিন স্তরীয় কোচ (থ্রি টিয়ার)। থাকছে প্যান্ট্রি কার, রেস্তোরাঁ কার এবং একটি আলাদা কোচ ট্রেন-কর্মীদের জন্য। আইআরসিটিসি-র তরফে জানানো হয়েছে, পর্যটকদের জন্য নিরামিষ খাবারদাবার দেওয়া হবে, কঠোর ভাবে আমিষ বর্জন। একেবারে ট্রেনে রান্না করে। গরম গরম পরিবেশন। তা ছাড়া, আরেকটি দিকেও কড়া নজর দেওয়া হয়েছে, সেটি হল-- নিরাপত্তা। থাকছে সিসিটিভি। এবং যথাবিহিত প্রহরা।
ট্রেনে ৬০০ জন যাত্রা করতে পারবেন। মে-র ২৬ তারিখের পর্যন্ত খবর হল, ২৯৩টি আসন বুক হয়ে গিয়েছে। যাত্রাচক্রের সময়সীমা ১৮ দিন। শুরু হবে দিল্লির সফদরজঙ্গ স্টেশন থেকে। টিকিটের ভাড়া জন প্রতি ৬২,৩৭০ টাকা থেকে শুরু। এর মধ্যে সব থাকছে। টিকিট কাটার জন্য কোভিড টিকা নেওয়ার শংসাপত্র থাকা বাধ্যতামূলক।
কোথা থেকে কোথায়
অযোধ্যা হল প্রথম স্টপ। যেখানে পর্যটকরা রামজন্মভূমি এবং হনুমান মন্দির দেখবেন। এ ছাড়াও নন্দীগ্রামের ভরত মন্দির দর্শন।
তার পর ট্রেন ঝমঝম করতে করতে বেশ খানিকটা দূর বিহারের বক্সারে গিয়ে থামবে। বিশ্বামিত্র আশ্রম, গঙ্গার রাম রেখা ঘাট দেখুন এখান থেকে। বিহারের মধুবনি জেলার জয়নগর হয়ে নেপালের জনকপুরে এর পর পৌঁছানো। জনকপুরে হোটেলে রাত্রিযাপন এবং রাম-জানকী মন্দিরে যাওয়া অতঃপর। জনকপুর থেকে ভারতে প্রত্যাবর্তন ট্রেনের, বিহারের সীতামাঢ়ী পৌঁছানো। এই স্থানটির ধর্ম-মাহাত্ম্য রয়েছে অপরিসীম। বিশ্বাস যে, এটিই সীতার জন্মস্থান। এর পর, বারাণসী পৌঁছে যাওয়া। কে না জানে বারাণসী প্রাচীনতার হাওয়ায় মোড়া এক নগর। হাজারো কিছু সেখানে দেখা। কোটি কোটি বার প্রণাম তৎসহ। এখান থেকে শৃঙ্গবেরপুর নিয়ে যাওয়া হবে আপনাকে, বিশ্বাস করা হয়, এখান থেকেই নাকি রাম-সীতা এবং লক্ষ্মণ বনবাসের পথে গঙ্গা পার করেন। অতঃকিম? ট্রেন দক্ষিণের দিকে রওনা হয়ে যাবে, পুরাণের ট্র্যাকে চাকা চালিয়ে-- নাসিক, গোদাবরী তীরে। নিয়ে যাওয়া হবে ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দির এবং পঞ্চবটিতে। তার পর কিষ্কিন্ধ্যা, হাম্পি। গন্তব্য এবার রামেশ্বরম। রামানাথস্বামী মন্দির দেখা। এখান থেকে এবং ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু ধনুষকোডি-তে। যেন অরূপের মধ্যে অবতরণ। ট্রেন কাঞ্চিপুরমের দিকে রওনা হবে সেখান থেকে, শিব কাঞ্চি, বিষ্ণু কাঞ্চি এবং কামাক্ষী মন্দির দর্শনপর্ব। সেই সব চুকিয়ে-- তেলেঙ্গানার ভদ্রাচলম, যাকে দক্ষিণের অযোধ্যা বলা হয়ে থাকে, দেখবেন। এবং সমস্ত ঝমঝমানি শেষ হবে হবে গিয়ে দিল্লিতে, ৮ হাজার কিলোমিটারের এই জার্নি, ইতি রাজধানীতে। ভ্রমণচক্রের, ইতিকথার, ইতি।
প্রথম বারের জন্য নেপাল
জার্নির শুরুতে যে নেপাল-চমক রয়েছে, সেটা নিয়ে একটু বলা দরকার। আগে রামায়ণ সার্কিট ট্যুরে সীতামাঢ়ী থেকে জনকপুর যেতে হত। কিন্তু এখন নেপাল রেলের সহায়তায় ভারতীয় রেল জয়নগর থেকে রেল লাইন পেতেছে জনকপুর পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লুম্বিনীতে সম্প্রতি গিয়েছিলেন। সেখানে বলেন, 'জনকপুর নিয়ে আমি বলব যে, আমাদের ভগবান রাম নেপাল ছাড়া অসম্পূর্ণ। আমি জানি ভারতে রামমন্দির তৈরি হচ্ছে বলে নেপালের মানুষও আমাদের মতোই খুশি।'
Read in English