Advertisment

Explained: কেন দিনের পর দিন মণিপুরে খুনখারাপি লেগেই থাকে, কী এর ইতিহাস?

যে হিংসার শুরু ব্রিটিশ আমলে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
unrest Manipur

মণিপুরে হিংসাত্মক বিক্ষোভ একটা চেনা ছবি। তবে কুকি-জোমি উপজাতি ও বৃহত্তর হিন্দু মেইতিদের মধ্যে বর্তমান হানাহানি তিন দশক পরে ঘটল। এর আগে ১৯৯৩ সালে হিন্দু মেইতিসদের সঙ্গে পাঙ্গালদের (মুসলিমদের) ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিল। উপজাতি নাগা আর কুকিদের মধ্যেও ব্যাপক হিংসা ছড়ায়। যার জেরে একদিনে শতাধিক কুকিকে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার কুকি তাঁদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হন।

Advertisment

সাংস্কৃতিক ভূগোল

মণিপুরে ১৬টি জেলা রয়েছে। তবে, গোটা রাজ্যকে সাধারণত 'উপত্যকা' এবং 'পাহাড়', এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবাল, বিষ্ণুপুর এবং কাকচিং-এর আজকের উপত্যকা জেলাগুলো নিংথৌজা রাজবংশ দ্বারা শাসিত কাংলেইপাকের আগের রাজ্যের অংশ ছিল। অনেক ইতিহাসবিদ এবং শিক্ষাবিদ বলেছেন যে উপত্যকার বাইরের উপজাতীয় অঞ্চলগুলোও এই রাজ্যের অধীনে ছিল। তবে উপজাতিদের জন্য ওই অঞ্চলগুলোয় সমস্যা তৈরি হত। বিশেষ করে নাগা উপজাতিদের জন্য।

জনগোষ্ঠীর অবস্থান

মণিপুর উপত্যকাটি নাগাল্যান্ড এবং মিজোরামে ছড়িয়ে পড়া নীচু পাহাড়ের প্রান্ত দ্বারা বেষ্টিত। মণিপুরের ভৌগোলিক অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ নিয়ে গঠিত এই পাহাড়ি এলাকা। যেখানে রয়েছে ১৫টি নাগা উপজাতি এবং চিন-কুকি-মিজো-জোমি গোষ্ঠীর বাস। এই সব গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে কুকি, থাডউ, হামার, পাইটে, ভাইফেই এবং জোউ জনগোষ্ঠীও। কাংলেইপাক, সেই সময় ছিল একটি ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্য। এর উত্তরের পাহাড় থেকে নেমে আসা নাগা উপজাতিদের দ্বারা বারবার রাজ্যটি আক্রান্ত হয়েছিল।

কুকিদের জমি দেওয়া হয়েছিল

মণিপুরের ব্রিটিশ রাজনৈতিক প্রতিনিধি মেইতিস এবং নাগাদের মধ্যে একটি বাফার হিসেবে কাজ করা এবং উপত্যকাকে লুণ্ঠনের থেকে রক্ষা করার জন্য বার্মার কুকি-চিন পাহাড় থেকে কুকি-জোমিদের এনেছিলেন বলে অনেকে দাবি করে থাকেন। নাগাদের মতো কুকিরাও প্রচণ্ড যোদ্ধা জাতি। যাঁদের মণিপুরের মহারাজা পাহাড়ের ধারে জমি দিয়েছিলেন। যাতে তাঁরা নীচে ইম্ফল উপত্যকার জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারেন।

কুকি-মেইতেই বিভাজন

পার্বত্য জনগোষ্ঠী এবং মেইতিদের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা পূর্ববর্তী রাজ্যের সময় থেকেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু, ১৯৫০-এর দশকে নাগা জাতীয় আন্দোলনের আবির্ভাবের সঙ্গেই এবং একটি স্বাধীন নাগা রাষ্ট্রের আহ্বানের মধ্যে দিয়ে এই সংঘর্ষ বাড়তে শুরু করে। মেইতিস এবং কুকি-জোমির মধ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উত্থানের মাধ্যমে সেই সময় নাগা বিদ্রোহ মোকাবিলা করা হয়েছিল।

জঙ্গি আন্দোলন

১৯৯০-এর দশকে, এনএসসিএন-আইএম জঙ্গিগোষ্ঠী যখন স্বাধীনতা বা আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য আরও জোর দেয়, তখন কুকি-জোমি গোষ্ঠীগুলোরও সামরিকীকরণ শুরু হয়। কুকিরা সেই সময় স্বাধীন 'কুকিল্যান্ড'-এর জন্য নিজস্ব আন্দোলন শুরু করে। তবে, নাগা আন্দোলনের বিপরীতে, কুকি-জোমির আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, ভারতের মধ্যে একটি রাজ্যে জন্য। কোনও পৃথক রাষ্ট্র নয়। যদিও কুকিরা মেইতি সম্প্রদায়ের রক্ষক হিসেবেই কাজ শুরু করেছিল কিন্তু, কুকিল্যান্ডের দাবি এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটলের সৃষ্টি করে।

নাগা-কুকি সংঘর্ষ

১৯৯৩ সালে নাগা-কুকি সংঘর্ষের সময়, এনএসসিএন-আইএম ক্যাডাররা অভিযোগ করে যে তারা নাগাদের অন্তর্গত গ্রামে গিয়েছিল। আর, সেখান থেকে কুকি বাসিন্দাদের সরিয়ে দিয়েছিল। অনেক কুকি সেই সময় কুকি-জোমি অধ্যুষিত জেলা চুরাচাঁদপুরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে একটি (চুরাচাঁদপুরে) জেলায় কুকিরা জড় হওয়ায় (যদিও কুকিদের গ্রাম মণিপুরের অন্য অংশেও রয়েছে), তাঁদের নিরাপত্তার অনুভূতি বেড়েছে।

আরও পড়ুন- Manipur violence: নতুন করে ছড়াল হিংসা, গুলিতে মৃত ৪, পরিস্থিতি সামালে আরও সেনা মোতায়েন

মেইতেইদের ভয়

স্বাধীন অঞ্চলের জন্য নাগা এবং কুকি আন্দোলনের জেরে মেইতেই জাতীয়তাবাদ উজ্জীবিত হয়। যার জেরে মণিপুর উপত্যকায় অসংখ্য গ্রুপের জন্মও হয়। ১৯৭০-এর দশকে জনসংখ্যার পরিবর্তন এবং ঐতিহ্যবাহী মেইতেই এলাকায় জনসংখ্যা সঙ্কুচিত হওয়ায় মেইতেইদের লোকজন উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে, মেইতেইদের জন্য তফসিলি উপজাতির মর্যাদার দাবি, সেই সময়ও অনেকটাই নিঃশব্দ ছিল।

এসটি মর্যাদার দাবি

২০০১ সালে, নাগাল্যান্ড ছাড়া অন্যান্য রাজ্যে আইএম-এর সঙ্গে ভারত সরকারের যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মণিপুরে ব্যাপক হিংসার জন্ম দেয়। ইম্ফলে বিক্ষোভকারীরা বিধানসভা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। এসটি মর্যাদার দাবি সেই মুহুর্ত থেকেই একটি গণআন্দোলনে পরিণত হয়। কারণ, ক্রমবর্ধমান অনিরাপদ মেইতেই জনগোষ্ঠী আশঙ্কা করছিল, বৃহত্তর নাগালিমের সম্ভাব্য সৃষ্টি মণিপুরের ভৌগোলিক অঞ্চলকে সঙ্কুচিত করবে।

Manipur fire Violence
Advertisment