কুণাল কামরার বিমানযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা, ভারতে নিয়মটা ঠিক কী?

যদি কোনও ব্যক্তিকে আভ্যন্তরীণ উড়ানযাত্রায় নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে তিনি আন্তর্জাতিক বিমানে চড়তে পারেন, কারণ ডিজিসিএ আইন কেবলমাত্র আভ্যন্তরীণ উড়ানে লাগু।

যদি কোনও ব্যক্তিকে আভ্যন্তরীণ উড়ানযাত্রায় নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে তিনি আন্তর্জাতিক বিমানে চড়তে পারেন, কারণ ডিজিসিএ আইন কেবলমাত্র আভ্যন্তরীণ উড়ানে লাগু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Kunal Kamra

আভ্যন্তরীণ কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে লিখিত আকারে তাঁদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে, এবং নিয়মানুসারে প্রতিটি বিমানসংস্থা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য

ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, এয়ার ইন্ডিয়া ও গোএয়ার, চারটি বিমান সংস্থা কমেডিয়ান কুণাল কামরাকে তাদের বিমানে যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। টেলিভিশন অ্যাঙ্কর অর্ণব গোস্বামীকে ইন্ডিগো বিমানে হেনস্থা করার দায়ে এই সুকঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

Advertisment

২০১৭ সালে সরকার বিমানযাত্রীদের নিষিদ্ধিতালিকায় নামভুক্তির ব্যাপারে গাইডলাইন তৈরি করে। উদ্দেশ্য ছিল অন্যদের অসুবিধাসৃ্ষ্টি যাঁরা করেন, তাঁদের বিরত রাখা। নিয়ম অনুসারে, কারও অসদাতারণের ঘটনা পাইলট ইন কম্যান্ডের কাছে নথিভুক্ত করতে হয়, এরপর এয়ারলাইনের নিজস্ব কমিটি তার তদন্ত করে। এই তদন্ত যতদিন না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন যাত্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে। ওই কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্দিষ্ট করতে হবে।

অসদাচরণের তিনটি বিভাগ রয়েছে। লেভেল ১- মৌখিক অসদাচরণ এবং তার জন্য তিন মাসের বিমানযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা। লেভেল ২- শারীরিক উচ্ছৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত এবং এ কারণে যাত্রীর উপর ৬ মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা যেতে পারে। লেভেল ৩ -জীবনের হুমকি জাতীয় আচরণ যার জেরে অন্তত দু বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে।

বিমানযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার তালিকা কেন?

Advertisment

অসামরিক বিমান পরিবহণের ডিরেক্টর জেনারেলের এক নোটে জানানো হয়েছে, বিমানে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একজন উচ্ছৃঙ্খল যাত্রীও বিমানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে। ২০১৭ সালে শিবসেনা সাংসদ রবীন্দ্র গায়কোয়াড় এক এয়ার ইন্ডিয়া কর্মীকে হেনস্থা করার ঘটনার পর সরকার এই আইনের কড়াকড়ি শুরু করে। এর পরেই বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা গায়কোয়াড়ের বিমানযাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে, যা দু সপ্তাহের জন্য কার্যকর ছিল। সরকার সে বছর সেপ্টেম্বর মাসে বিমানযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা তালিকা প্রস্তুত করে।

এই তালিকায় নাম ওঠে কীভাবে ?

কোনও যাত্রী যদি মৌখিক, শারীরিক বা প্রাণের হুমকিসম্বলিত উচ্ছৃঙ্খলা ব্যক্ত করেন, তাহলে তাঁর নাম ওই তালিকাতে ওঠে। অসামরিক বিমান পরিবহণের ডিরেক্টর জেনারেল এ ধরনের ব্যবহারের একটি তালিকা বানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ধূমপান, কোনও বিমানকর্মী এবং বা কোনও যাত্রীকে হুমকি দেন বা খারাপ ভাষা ব্যবহার করেন, কোনও বিমানকর্মীর কর্তব্যপালনে বাধা দেন ইত্যাদি। একবার পাইলট ইন কম্যান্ডের কাছে অভিযোগ জমা গিলে এয়ারলাইনকে নিজস্ব কমিটি বানিয়ে বিষয়টির তদন্ত করাতেই হবে। এই তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত যাত্রীর উপর সর্বাধিক ৩০দিনের জন্য বিমানযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা যেতে পারে। এর সঙ্গে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যে সব ব্যক্তিরা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক, তাদের একটি তালিকা ডিজিসিএ-র কাছে পাঠিয়ে দেয়, যাতে তাদের নিষিদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আভ্যন্তরীণ কমিটিতে কারা থাকেন?

এই কমিটিতে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা বিচারক থাকেন, থাকেন অন্য কোনও বিমানসংস্থার প্রতিনিধি এবং যাত্রী অ্যাসোসিয়েশন বা কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। আভ্যন্তরীণ কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে লিখিত আকারে তাঁদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে, এবং নিয়মানুসারে প্রতিটি বিমানসংস্থা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য। ৩০ দিনের মধ্যে কমিটি নিজেদের সিদ্ধান্ত না জানাতে পারলে ওই যাত্রী বিমানযাত্রার ব্যাপারে মুক্ত হয়ে যাবেন।

আভ্যন্তরীণ কমিটি কাউকে অপরাধী ঘোষণা করার পর তিনি কি এ ব্যাপারে প্রতিকার চাইতে পারেন?

যে কোনও অসন্তুষ্ট ব্যক্তি বিমানসংস্থার তরফ থেকে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ পাওয়ার ৬০দিনের মধ্যে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের তৈরি করা আপিল কমিটির কাছে আবেদন জানাতে পারেন। ওই আপিল কমিটিতে থাকেন কোনও হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, যাত্রী বা উপভোক্তা কমিটির প্রতিনিধি এবং কোনও বিমানসংস্থার প্রতিনিধি যাঁর পদমর্যাদা ভাইস প্রেসিডেন্ট বা সমগোত্রীয়। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে কমিটির সামনে উপস্থিত হতে হবে কিনা সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও নিয়ম নেই। তবে এই আপিল কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং এর পর আবেদন করতে হলে তা করতে হবে কোনও হাইকোর্টে।

নিষিদ্ধ তালিকায় কারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন?

যে বছর এই নিয়মাবলী তৈরি হয়, সে বছরই জেট বিমানসংস্থার মুম্বই-দিল্লি বিমানের শৌচাগারে এক ব্যবসায়ী একটি নোট রেখে এসেছিলেন, যাতে লেখা ছিল বিমানে অপহরণকারী ও বিস্ফোরক রয়েছে। বিমানটির জরুরি অবতরণ ঘটানো হয়।এই ভুয়ো ঘটনার জন্য ওই ব্যবসায়ীকে প্রথমবার নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের নতুন অপহরণ প্রতিরোধক আইনে গ্রেফতার করা হয়। এক বিশেষ এনআইএ আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ কোটি টাকার জরিমানা দেয়।

কুণাল কামরা কি আবার অন্তর্দেশীয় বিমানে যাতায়াত করতে পারবেন?

এখনও অবধি চারটি বিমানসংস্থা তাদের বিমানে কুণালের ওড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, ভিস্তারা ও এয়ারএশিয়া জানিয়েছে তারা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে চলবে। ইন্ডিগো ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আভ্যন্তরীণ কমিটির সিদ্ধান্তের পর।

যদি কোনও ব্যক্তিকে আভ্যন্তরীণ উড়ানযাত্রায় নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে তিনি আন্তর্জাতিক বিমানে চড়তে পারেন, কারণ ডিজিসিএ আইন কেবলমাত্র আভ্যন্তরীণ উড়ানে লাগু। তবে ব্যাপারটা জটিল হয়ে যায়, যদি কোনও যাত্রার একাংশ ভারতীয় বিমানসংস্থা ও অন্য অংশ আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থায় পরিকল্পিত থাকে।

অন্যান্য দেশে নিষিদ্ধিতালিকা কীভাবে প্রস্তুত করা হয়?

হাতে গোনা কয়েকটি দেশেই বিমানসংস্থা সরাসরি কোনও ব্যক্তিকে উড়ানে যাতায়াত নিষিদ্ধ করতে পারে। ভারতে তাদের একটি। আমেরিকা বা কানাডার মত দেশে এই তালিকা অনেকটাই জঙ্গিদের উপর নজরদারিকেন্দ্রিক। আমেরিকায় ৯-১১-র আগে এই নিষেধাজ্ঞায় নাম ছিল ২০ জনেরও কমের। কিন্তু হামলার পরে সে তালিকায় এখন হাজারেরও বেশি নাম। ২০১৬ সালে আমেরিকার ডেল্টা এয়ারলাইনস একজন যাত্রী চিৎকার করে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখার জেরে তাঁকে সারাজীবনের জন্য নিষিদ্ধ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।