Advertisment

একটি রাস্তাই কি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় বিবাদের মূলে?

এখানেই রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ বিমান বিমানঘাঁটি, যা ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময়ে বানানো হয়েছিল, কিন্তু ২০০৮ সাল পর্যন্ত তা পরিত্যক্তই পড়েছিল। এর পর ভারতীয় বিমানবাহিনী একে ফের বাঁচিয়ে তোলে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Indo-China LAC

২০১৩ সালের ২০ অগাস্ট ডিবিও-তে ঐতিহাসিক বিমান অবতরণ (ফাইল ছবি- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)

চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতের উপর যে যে কারণে হামলা করছে, তার অন্যতম কারণ হল ২৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দারবুক-শিয়খ-দৌলত বেগ ওল্ডি (DSDBO)- সব ঋতুতে ব্যবহার যোগ্য রাস্তা।

Advertisment

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার প্রায় সমান্তরাল এই রাস্তা ১৩ থেকে ১৬ হাজার ফিট উচ্চতায় আঁকাবাঁকা এক পথ, যা নির্মাণ করতে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (BRO)-র সময় লেগেছে প্রায় দু দশক।

এর কৌশলগত গুরুত্ব হল এই রাস্তা লেহ-র সঙ্গে DBO-র সংযোগ ঘটায়। DBO বাস্তবত প্রায় কারাকোরাম পাসের মূলে অবস্থিত, য়া টিনের শিনজিয়াং অটোনমাস রিজিয়ন থেকে লাদাখকে আলাদা করেছে।

DBO ভারতের সীমানায় অবস্থিত লাদাখের একেবারে উত্তরে, সেনাবাহিনীর ভাষায় যার পরিচয় সাব সেক্টর নর্থ হিসেবে।

এখানেই রয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ বিমান বিমানঘাঁটি, যা ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময়ে বানানো হয়েছিল, কিন্তু ২০০৮ সাল পর্যন্ত তা পরিত্যক্তই পড়েছিল। এর পর ভারতীয় বিমানবাহিনী একে ফের বাঁচিয়ে তোলে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে যেসব অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড (ALG) আছে এটি তার মধ্যে অন্যতম। ২০১৩ সালে এখানে অবতরণ করে একটি Antonov An-32 বিমান।

২০১৩ সালের অগাস্টে ভারতীয় বিমান বাহিনী ইতিহাস তৈরি করে, DBO ALG-তে অবতরণ করে Lockheed Martin C-130J-30 বিমান। এর ফলে বিবদমান সীমা এলাকায় সেনাবাহিনীর সরবরাহের জন্য হেলিকপ্টার পাঠানোর প্রয়োজন ফুরোয়।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং স্বীকার করেছেন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বহু চিনা সৈন্য জমায়েত হয়েছে এবং আগের থেকে একটু বেশি সরে এসেছে, যা এই এলাকায় দু পক্ষের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছিল তার চেয়ে পরিস্থিতিকে পৃথক করে তুলেছে।

লাদাখে ভারত-চিন সংঘর্ষ, ঠিক কী কী জানা গেল?

গালওয়ন নদী উপত্যকায় চিনারা জড়ো হওয়ার ফলে DSDBO রাস্তার উপর সরাসরি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

দু পক্ষের বরিষ্ঠ সেনা আধিকারিক ও অন্যান্য আধিকারিকদের মধ্যে আলোচনার পর দু তরফ থেকেই সেনা প্রত্যাহার দীর্ঘকালীন সময় জুড়ে চলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই সেনা প্রত্যাহারের জন্য উভয়পাক্ষিক সম্মতি প্রয়োজন।

***

DSDBO হাইওয়ে দিয়ে ভারতীয় সেনা অক্ষয় চিনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া   তিব্বত-শিনজিয়াং হাইওয়ের একটা অংশে পৌঁছতে পারে। অক্ষয় চিন হল পূর্বতন জম্মু কাশ্মীরের অংশ যা ১৯৫০ থেকে চিনের দখলে রয়েছে, যার জের গড়ায় ১৯৬২-র যুদ্ধে, যে যুদ্ধে ভারতের অভিজ্ঞতা ভাল নয়।

DSDBO তৈরি হওয়ায় চিন ভীত হয়ে পড়েছে, যার প্রমাণ ২০১৩ সালে ডেপসাং এলাকার কাছে পিএলএ-র সীমানালঙ্ঘন, যা চলেছিল প্রায় তিন সপ্তাহ।

DBO অক্ষয় চিন এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার মাত্র ১০ কিলোমিটার পশ্চিম দিক দিয়ে গিয়েছে। অক্ষয় চিন এলাকা চিন দখল করার প্রত্যুত্তরে ভারত একটি সামরিক আউটপোস্ট তৈরি করে, বর্তমানে সেখানে পাহারা দেয় সেনাবাহিনীর লাদাখ স্কাউট ও আধাসামরিক বাহিনী ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ। দুই বাহিনীই নিয়মিত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় টহলদারি করে।

এ ছাড়াও এই এলাকার আরও কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।

DBO-র পশ্চিমে গিলগিট-বাল্টিস্তান এলাকায় পাকিস্তান ঘেঁষা চিন সীমানা, যা একদা কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। চিন এখানে এখন চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC) তৈরি করছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে, ভারত যা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল।

এই এলাকারই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৫১৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা চিন-পাকিস্তান সীমানা চুক্তির সময়ে ১৯৬৩ সালে চিনের হাতে তুলে দিয়েছিল পাকিস্তান যার প্রতিবাদ করেছিল ভারত।

কীভাবে ছ’বছর আগে মিটেছিল আরেক ভারত-চিন সংঘাত

DSDBO সব আবহাওয়ার পক্ষে উপযোগী রাস্তা হয়েছে ৩৭টি পূর্বনির্মিত মিলিটারি সেতুর জন্য। আগে এটা ছিল একটা পুরনো রাস্তা, কিন্তু গ্রীষ্মের সময়ে শিয়োক নদী, যা মৃত্যু নদী বলে পরিচিত, এবং তার চিপ চাপ, গালওয়ান ও চাং চেনমো-র বরফগলা জলের বন্যার জন্য সে রাস্তা ব্যবহারযোগ্য থাকত না।

শিয়োক নিজে সিন্ধু নদের শাখা, যা উত্তর লাদাখ ও গিলগিট বাল্টিস্তান দিয়ে বয়ে আসছে। স্কারদুর পূর্বদিকে কেরিস এলাকায় এই নদী ফের সিন্ধু নদের সঙ্গে মেশে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে রাজনাথ সিং এখানে ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতুর উদ্বোধন করেন। সেতুর নামকরণ করা হয় লাদাখের ভারতীয় সেনার এক নায়ক কর্নেল চেওয়াং রিনচেনের নামে। ১৪৬৫০ ফিট উচ্চতায় নির্মিত এই সেতু পৃথিবীর এধরনের সেতুর মধ্যে সর্বোচ্চ বলে মনে করা হয়।

লেহ থেকে দৌলতা বেগ ওল্ডি পর্যন্ত একটি বিকল্প রাস্তা রয়েছে যা ১৭৫০০ ফিট উঁচি সাসের পাসের মধ্যে দিয়ে যায়। সাসের পাস পুরনো সিল্ক রুটের মধ্যে পড়ে যা লেহ থেকে ইয়ারকন্ডের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টিকারী। এ পথ নুব্রা উপত্যকা থেকে আপার শিয়োক উপত্যকা হয়ে চিনের কারাকোরাম পাস পর্যন্ত বিস্তৃত যা ভারত ও চিনের ও কম পরিমাণে হলেও পাকিস্তানের বিবদমান এলাকার পক্ষে অতি গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রীষ্মের কয়েকমাস ছাড়া বছরের বাকি সময় জুড়ে সাসার পাস বরফে ঢাকা এবং অব্যবহার্য থাকে। BRO এখন সাসোমা (লেহ-র উত্তরে, নুব্রা উপত্যকার কাছে) ও সাসের পাসের মধ্যে বরফাচ্ছাদিত রাস্তা বানাচ্ছে, তবে তা নির্মাণে বেশ কয়েকবছর সময় লাগতে পারে। তবে বিকল্প DBDSO সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষার কাছে গুরুত্বপূর্ণই থেকে যাবে।

china
Advertisment