প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রাক্তন সচিব সুধীন্দ্র কুলকার্নি তাঁর প্রবন্ধ Biting the bullet-এ ১৯৬২-র যুদ্ধের সূচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সাবধান করেছেন যে তিনি যেন জওহরলাল নেহরুর মত ভুল না করেন।
কুলকার্নি এ প্রসঙ্গে তুলে এনেছেন ১৯৬০ সালের ইতিহাস, যে বছর এপ্রিল মাসে চিনের প্রধান চৌ এন লাই ভারত সফরে এসে ভারত-চিন সম্পর্ক বিনষ্টের সম্ভাবনা যে সীমানা বিতর্ক তার কার্যকরী সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কুলকার্নি লিখছেন, “চৌ এন লাইয়ের প্রস্তাবে নিশ্চিতভাবেই চেয়ারম্যান মাওয়ের সম্মতি ছিল, চূড়ান্ত সমাধানের জন্য যে প্যাকেজ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাতে বলা ছিল অরুণাচল প্রদেশে ভারতের নিয়ন্ত্রণ মেনে নেবে চিন, যদি আকসাই চিন এলাকায় চিনের নিয়ন্ত্রণ ভারত মেনে নেয়।”
আরও পড়ুন, লাদাখ কেন ভারত ও চিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ- ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও কৌশলগত প্রেক্ষিত
কেন চৌ এন লাইয়ের প্রস্তাব নেহরু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন , তা ব্যাখ্যা করতে কুলকার্নি ঐতিহাসিক শ্রীনাথ রাঘবনের গবেষণাপত্র উদ্ধৃত করেছেন। রাঘবনের যে কথা কুলকার্নি উদ্ধৃত করেছেন তা হল, “নেহরু এমন একটা অবস্থায় পৌঁছেছিলেন যেখানে তাঁর কূটনৈতিক সামর্থ্যে অনেকটা কাটছাঁট হয়ে গিয়েছিল। তাঁকে সর্বদাই রাজনৈতিক বাজারের কথা মাথায় রাখতে হত এবং তিনি এমন নীতিই গ্রহণ করতেন যা জনতার কাছে সহজে বিকোবে।”
কুলকার্নির কথায় নেহরু নিজের আশঙ্কার কথা নিজেকে বলেছিলেন, “যদি আমি ওদের আকসাই চিন দিয়ে দিই, তাহলে আমি আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারব না।” সুধীন্দ্র কুলকার্নি মনে করেন “নেহরুর ক্ষমতা ছিল মানুষকে বোঝানোর যে দীর্ঘমেয়াদি কারণে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত। যদিও সংবাদমাধ্যম ও বিরোধী নেতারা (যাঁদের মধ্যে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীও ছিলেন যিনি এ বিষয়ে মত বদল করেছিলেন) চিনকে কোনও ভূখণ্ড দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।”
নেহরু যদি চৌ এন লাইয়ের সমঝোতা ভিত্তিক সমাধান গ্রহণ করতেন তাহলে সীমান্ত সমস্যা সমাধান হত এবং ১৯৬২ সালের যুদ্ধ এড়ানো যেত বলে মনে করেন কুলকার্নি। তিনি আরও বলেছেন, “বিতর্কিত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে ক্রমাগত সংঘর্ষ ২০২০ সাল অবধি চলত না, যেহেতু ১৯৬০ সালে চিন ইঙ্গিত দিয়েছিল সমাধানের অংশ হিসেবে তারা আকসাই চিন ব্যাতিরেকে জম্মু কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সার্বভৌমত্বের দাবি মেনে নিতে পারে তারা।”
রাজনৈতিক বাজার নিয়ে উদ্বেগ ছাড়া এবং ট্রাম্প বা তার উত্তরসূরীরা ভারতের সমর্থনে এগিয়ে আসবে এ আস্থা না রেখে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাকে সমঝোতা ভিত্তিতে নিশ্চিত নিয়ন্ত্রণ সীমায় পরিণত করার ব্যাপারে জনমত পাল্টানোর সাহস দেখাতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন কুলকার্নি।