Advertisment

লাদাখ সীমানায় উত্তেজনার কারণ- বিভিন্ন সম্ভাবনা

লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Ladakh Tension

লাদাখে প্রকৃত সীমান্তরেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়ি

পূর্ব লাদাখের ভারত-চিন সীমান্তের একাধিক জায়গায় চিনা সেনা প্রতৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করায় বড়সড় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, যা অভূতপূর্ব। এ ব্যাপারে চিনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisment

অধিকাংশ পর্যবেক্ষকরাই অতি আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন চিনের কমিউনিস্ট পার্টির পার্টি কংগ্রেসের সময়ে সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র বার্ষিক সাংবাদিক সম্মলেনের দিকে। কিন্তু তাঁর ১০০ মিনিটের দীর্ঘ সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতের কোনও উল্লেখই ছিল না।

২০১৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত চিনে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন গৌতম বাম্বাওয়ালা। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, “ডোকলামের সংকটের সময় থেকে চিনারা কীভাবে প্রকাশ্যে বিষয়টা আনতে হয় তা শিখে নিয়েছে। রা ভেবেছিল ভারত প্রথমে সংবাদমাধ্যমের কাথে যাবে, ফলে ওরা আগেভাগে চলে গিয়েছে এবং যেতেই থেকেছে। আমরা শান্ত রয়েছি, আলোচনা ও সমঝোতার বার্তা দিচ্ছি। ধীরতার কূটনীতি এই সময়ে ফলদায়ী হয়ে থাকে।”

টেলর ফ্রাভেল এমআইটি-র আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং চিনের সীমান্ত সমস্যা ও তাদের সামরিক কৌশল নিয়ে দুটি বইয়ের লেখক। তাঁর কথায়, “চিনের পদক্ষেপের কারণ বোঝা শক্ত, বিশেষ করে বেজিংয়ের তরফ থেকে যেখানে কোনও উঁচুমহল থেকে বিবৃতি আসেনি।

সরলতম ব্যাখ্যা হতে পারে যে লাদাখের সীমান্ত এলাকায় ভারতের তরফ থেকে পরিকাঠামো জোরদার করার প্রস্তুতির মোকাবিলাই চিনের লক্ষ্য, বিশেষ করে DSDBO রোড তৈরি হয়ে যাওয়ার পর। ২০১৭ সালে ডোকলামে ভারতের ভূমিকার পর চিন সম্ভবত বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে বেশি সংবেদনশীল হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে গালওয়ানের কাছে ভারতের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার সঙ্গে যোগাযোগের উন্নতি তারা আটকাতে চায়।”

কোভিড ১৯: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা ও ওয়ার্লড হেলথ অ্যাসেম্বলির প্রস্তাব

২০১৪-১৬ পর্যায়ে চিনে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন অশোক কান্ঠা। তাঁর বক্তব্য “ওরা স্থলভূমিতে নিজেদের অবস্থান বদলাচ্ছে এবং আমাদের বাহিনীকে নিয়মিত পেট্রোলিং করতে দিচ্ছে না।

আগের তুলনায় আমরা দেখছি চিনাদের সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু বদল হয়েছে, প্রথমত, ওরা নতুন এলাকায় (গালওয়ান নদী উপত্যকা) বিশাল মাপে জড়ো হতে শুরু করেছে যা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পক্ষে বিপজ্জনক, দ্বিতীয়ত ওরা সেখানে তাঁবু খাটিয়ে থাকতে শুরু করেছে, যা স্বল্পমেয়াদি পেট্রলিং নয়, তৃতীয়ত এ ঘটনা বেশ কয়েকটা জায়গায় ঘটছে এবং চতুর্থত, ওদের ব্যবহার অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে।”

বাম্বাওয়ালে আরও বলেন, “দুদিকেই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। গত ৭-৮ বছর ধরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার উন্নততর যোগাযোগের ব্যাপারে আমরা আটকে রয়েছি। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা শব্দটা আমি একটু হালকা চালেই ব্যবহার করছি কারণ দুদিকে এই শব্দের অর্থ পৃথক হয়। আমাদের সীমান্ত যোগাযোগ ওদের থেকে ভাল হওয়ায় এবং সাম্প্রতিক সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত বিষয়টাকে এই অবধি টেনে এনেছে।”

২০১৪ সালে চুমার এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সময়ে নর্দার্ন আর্মির কম্যান্ডার ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডিএস হুড়া। তিনিও বললেন, “প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে চিনা বাহিনী গা-জোয়ারি করছে। আগে দুদিক থেকেই বিষয়টা সুনির্দিষ্ট ছিল এবং চুমার বা ডোকলামের মত কয়েকটি জায়গায় বিষয়টা সীমাবদ্ধ ছিল।

একাধিক জায়গায় অনুপ্রবেশ করে চিন ভারতের উপর চাপ বাড়াচ্ছে। আমি ওদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য কী তা বলতে পারব না, তবে ওদের ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকি বয়ে নিয়ে আসছে। আগের উদাহরণ থেকে দেখা যাচ্ছে ভারত সামরিক পদক্ষেপে পিছিয়ে থাকবে না।”

তাঁর মতে “এটা চিনাদের বড়সড় পরিকল্পনার অংশ এবং ভারত-চিন সীমান্তের সামান্য কয়েকটি পকেটের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে একে দেখলে ভুল হবে। চিনাদের আক্রমণমুখীনতা বৃদ্ধির এটা একটা প্রতিফলন। চিনা সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে যে তাদের কূটনীতিবিদদের উপর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে চাপ সৃষ্টি করার। এটা হতেই পারে যে চিনা কম্যান্ডারদের উপরেও একই রকম নির্দেশ রয়েছে ইন্দো-চিন সীমান্তে ও দক্ষিণ চিন সমুদ্রেও একই সঙ্গে অতিসক্রিয় হওয়ার।”

ফ্রাভেল বলছেন, “এর একটা বৃহত্তর প্রেক্ষিত হল, চিন দেখাতে চায় উহান থেকে উদ্ভূত অতিমারী চিনের অর্থনীতি ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করলেও তাদের শক্তি কমেনি। এর সঙ্গে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে জড়িত ঘটনাবলীও।” এ কথার সমর্থন শোনা গেল কাণ্ঠার কাছেও।

বর্তমান উত্তেজনার মধ্যে শারীরিক হিংসার ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাম্বাওয়ালে। তিনি বলেন, “প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা যে নামেই ডাকা হোক, দু দেশের সেনাই জানে যে তা অতিক্রম করতে নেই। তেমনটা ঘটতে থাকলে এ পরিস্থিতির উদয় ফের হবে।”

কাণ্ঠার সাবধানবাণী, “এ ঘটনার গুরুত্ব কমিয়ে দেখা আমাদের পক্ষে ঠিক হবে না।”

china Ladakh
Advertisment