Advertisment

Explained: নাম থেকে বাদ দিয়েছিলেন বাবার পদবি, কেমন মানুষ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী?

নেহরু একবার শাস্ত্রী সম্পর্কে বলেছিলেন, 'কেউ তাঁর চেয়ে ভালো সঙ্গী এবং সহকর্মী পেতে পারে না। তিনি একজন সৎ, অনুগত, আদর্শের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, বিবেকবান, কঠোর পরিশ্রমী মানুষ।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Lal Bahadur Shastri

নয়াদিল্লিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী। (এক্সপ্রেস আর্কাইভ ছবি)

২ অক্টোবর দিনটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং দেশ গঠনের প্রাথমিক বছরগুলোয় মুখ্য ভূমিকা পালনকারী দুই শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় নেতার জন্মবার্ষিকী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠেছিল। তার মধ্যে একজন হলেন, 'জাতির জনক' মহাত্মা গান্ধী (১৮৬৯-১৯৪৮)। অন্যজন হলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী (১৯০৪-১৯৬৬)। এর মধ্যে শাস্ত্রী, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। যৌবনে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর (১৮৮৯-১৯৬৪) মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হন। স্বাধীনতার পর, উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সরকারে দায়িত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন। তিনি এক ঘটনাবহুল দুই বছর দেশের নেতৃত্বে ছিলেন। তাসখন্দে (বর্তমান উজবেকিস্তান) আকস্মিকভাবে মারা যান। তাঁর মৃত্যু নিয়ে এখনও জল্পনা-কল্পনা চলছে।

Advertisment

শাস্ত্রী ১৯০৪ সালে মুঘলসরাইতে জন্মগ্রহণ করেন। দুর্ভাগ্যবশত, তাঁর জন্মের কয়েক বছর পরই তাঁর বাবা মারা যান। শাস্ত্রী তাঁর শৈশবের বেশিরভাগ সময়ই মায়ের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবেশে কাটিয়েছেন। তাঁর মাত্র দুটি কুর্তা এবং ধুতি ছিল। অল্পবয়সে, শাস্ত্রী একটি সামাজিক চেতনার সূচনা করেছিলেন। তাঁর জন্মের পদবি থেকে 'বর্মা' শব্দটি বাদ দিয়েছিলেন। শাস্ত্রীর জীবনীকার তথা অবসরপ্রাপ্ত আমলা সিপি শ্রীবাস্তব লিখেছেন যে শাস্ত্রী যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন। একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই সময় নিজের নাম লালবাহাদুর রেখেছিলেন। তিনি তাঁর পরিবারকে বলেছিলেন যে 'বর্মা' উপাধি রাখতে চান না। তাই তিনি লাল বাহাদুর নামে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯২৫ সালে বেনারসের কাশী বিদ্যাপীঠ থেকে ডিগ্রি বা শাস্ত্রীস্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাঁর নামের সঙ্গে শাস্ত্রী শব্দটি জুড়ে গিয়েছিল।

লেখাপড়া সমাপ্ত করার পর শাস্ত্রী জনসেবা এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হন। স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৫২ সালে রেল ও পরিবহণমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বর্তমান তেলেঙ্গানার মেহবুবনগরে ১৯৫৬ সালের আগস্টে একটি গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে ১১২ জন প্রাণ হারান। সেই দুর্ঘটনায় মর্মাহত হয়ে শাস্ত্রী দায় স্বীকার করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী নেহেরু তা গ্রহণ করেননি। কিন্তু, শীঘ্রই আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে। সেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল তামিলনাড়ুর আরিয়ালুরে। সেখানে ১৪৪ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার নৈতিক দায় স্বীকার করে আবার পদত্যাগপত্র জমা দেন শাস্ত্রী। সিপি শ্রীবাস্তব লিখেছেন, 'একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী তাঁর মন্ত্রকের দুর্ঘটনার জন্য নৈতিক দায় স্বীকার করে সরকার থেকে পদত্যাগ করছেন, সেটাই ছিল প্রথম ঘটনা।'

আরও পড়ুন- নাসিকে পেঁয়াজ বিক্রেতাদের ধর্মঘট: কী চাইছেন বিক্রেতারা, পেঁয়াজের দাম কি বাড়বে?

নেহরু সেই সময় শাস্ত্রী সম্পর্কে বলেছিলেন, 'কেউ তাঁর চেয়ে ভালো সঙ্গী এবং সহকর্মী পেতে পারে না। তিনি একজন সৎ, অনুগত, আদর্শের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, বিবেকবান, কঠোর পরিশ্রমী মানুষ।' শ্রীবাস্তব লিখেছেন, 'শাস্ত্রীর পদত্যাগ জাতীয়ক্ষেত্রে তাঁর নৈতিক মর্যাদা বাড়িয়ে তুলেছিল। রাজনৈতিক আচরণে তিনি এক নতুন নজির স্থাপন করেছিলেন। যার কারণে তাঁকে আরও উচ্চপদ দেওয়া হয়েছিল। সেই পদ তাঁকে নেহরুর আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল।'

Rail Ministry Prime Minister Jawaharlal Nehru
Advertisment