নূপুর শর্মা। বিজেপির সাসপেন্ডেড জাতীয় মুখপাত্র। তিনি যে 'নূপুর' বাজিয়েছেন, তাতে আগুন ধরেছে। এবং তাঁর ঘৃণাভাষণ নিয়ে দেশ জুড়ে দায়ের নানা মামলা একসঙ্গে করার যে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি, সেই আবেদন অগ্রাহ্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অবকাশ কালীন বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালার বেঞ্চে এই শুনানিতে তিলমাত্র অন্তর্বর্তী স্বস্তি পাননি নূপুর। তাঁর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনাও করেছে শীর্ষ আদালত।
নূপুরের আবেদন কী?
পয়গম্বর এবং মুসলিমদের নিয়ে মে মাসের শেষ সপ্তাহে নূপুরের বিতর্কিত বক্তব্য। ঘৃণাভাষণের কাঠগড়ায়। এর অভিঘাতে তিনি সাপপেন্ড হয়েছেন বিজেপি থেকে। তার পর ক্ষমা চেয়ে নিজের বক্তব্য প্রত্যাহারও করলেও চিঁড়ে ভেজেনি। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু এফআইআর হয়েছে, দিল্লি, মুম্বই, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমে। শর্মা সুপ্রিম কোর্টের কড়া নেড়েছেন। তাঁর আবেদন, দায়ের হওয়া এই সব এফআইআর এক করে দিল্লির আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হক। সুপ্রিম কোর্ট নূপুরের এই 'ধ্বনি' শোনেনি। হাইকোর্টে আবেদন করতে বলেছে। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য জানিয়েছে। দায়িত্বহীন মন্তব্য বলে তোপ দেগেছে। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, যে ভাবে সারা দেশে আবেগের আগুন জ্বলছে, সে জন্য একমাত্র ওই মহিলাই দায়ী।
কেন এফআইআরগুলি এক সঙ্গে করার আবেদন?
কোনও এক ব্যক্তি একটি অপরাধের জন্য বার বার অভিযুক্ত হতে পারেন না। সংবিধানের ধারা ২০ (২) এই বিষয়টি সুনিশ্চিত করছে। কারওর বিরুদ্ধে একাধিক এফআইআর-এর অর্থ হল, একাধিক বিচার। সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে এ ব্যাপারে প্রক্রিয়াগত সুরক্ষা চেয়েছিলেন নূপুর। ২০০১-এর টি টি অ্যান্টনি বনাম কেরল রাজ্য মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলে যে, একই ইস্যুতে দ্বিতীয় এফআইআর হতে পারে না।
কী বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট
'এক কগনিজেবল অপরাধ, কিংবা এক ঘটনার জন্য দায়ী নানা কগনিজেবল অপরাধের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় এফআইআর এবং একই ভাবে নতুন করে তদন্ত করা যাবে না।' ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট অর্ণব গোস্বামী বনাম কেন্দ্রীয় সরকার মামলাতেও বলেছিল, একই ইস্যুতে নানা জায়গায় এফআইআর মৌলিক অধিকার ভঙ্গ করে। বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের বক্তব্য ছিল, 'কোনও এক জন ব্যক্তি যদি নানা স্থানে একই মামলায় বিচারের মুখে পড়েন, তা হলে সেটা মৌলিক অধিকার ভঙ্গ করছে।'
আদালত বলেছিল, এই ধরনের ঘটনায় কোনও আবেদনকারী মামলাগুলি এক করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন।
কেন নূপুর শর্মার আবেদন মানেনি সুপ্রিন কোর্ট?
সুপ্রিম কোর্ট অর্ণব গোস্বামীর মামলার সঙ্গে নুপূর শর্মার মামলাকে পৃথক করে দেখেছে। যেহেতু অর্ণব গোস্বামী একজন সাংবাদিক, তার ক্ষেত্রে যা হবে, এক জন রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের ক্ষেত্রে সেইটা হবে না। যদিও অর্ণব গোস্বামীর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বললেও, এমনও বলা হয় যে, সংবিধান অনুযায়ী মতপ্রকাশের অধিকার সমস্ত নাগরিকের রয়েছে।