অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছেন লাইফ ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন (এলআইসি)-র একাংশ বিক্রি করে দেওয়া হবে। এখন সরকার এলআইসির ১০০ শতাংশেরই মালিক।
সরকার এলআইসিকে যে সম্ভাব্য পাবলিক লিস্টিংয়ের অন্তর্ভুক্ত করেছে সে কথা ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত হয়েছিল। সরকার যে প্রবল ভাবে বিলগ্নিকরণ নীতি এবং সম্পদের আর্থিকরণ কর্মসূচি নিয়েছে, এলআইসি সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত তার অন্যতম।
বিশাল সিদ্ধান্ত
দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হল এলআইসি। সরকাররে সিদ্ধান্ত যদি গৃহীত হয়, তাহলে এলআইসি বাজার মূল্যের দিক থেকে সহজেই দেশের শীর্ষ তালিকাভু্ক্ত সংস্থার মধ্যে পড়বে, পিছনে চলে যাবে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বা টাটা কনসাল্টেন্সি সার্ভিসের মত বর্তমান শীর্ষ স্থানীয়রা।
এর কারণ হল বিমাকারীদের অর্থ। ২০১৮ সালে এলআইসির লাভের পরিমাণ ছিল ৪৮,৪৩৬ কোটি টাকা, এর আওতায় পরিমাণ পরিচালিত সম্পদের মূল্য ৩১.১১ লক্ষ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের বাজেটে সরকার এক প্রস্তাব ঘোষণা করেছিল যাতে বলা হয়েছিল তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির ক্ষেত্রে অন্তত ৩৫ শতাংশ পাবলিক হোল্ডিং রাখা হবে। তিন বছর আদে সরকার জেনারেল ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন ও নিউ ইন্ডিয়া অ্যাশিওরেন্সের শেয়ার তালিকাভুক্ত করে।
এলআইসির পাবলিক লিস্টিংয়ের ফলে লগ্নি আরও প্রকাশ্য হবে এবং পরিচালনা আরও ভাল হবে, সঙ্গে স্বচ্ছতা বাড়বে।
সরকারের দুধেল গাই
ভারতের শীর্ষ বিমা সংস্থাকে দীর্ঘদিন ধরে আড়াল দিয়ে এসেছে সরকার। তার কারণ হল বড় কোনও বিক্রির সময়ে শেয়ার কিনে বাজারকে সাহায্য করে এসেছে তারা এবং সরকারি সংস্থা বিলগ্নিকরণের সময়ে, যখন অন্য লগ্নিকারীদের উপস্থিতি দুর্বল থেকেছে তারা শেয়ার কিনেছে।
বিভিন্ন সংস্থায় কর্পোরেশন প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। ২০১৮ সালে অনাদায়ী ঋণের জেরে য়খন আইডিবিআই ব্যাঙ্কের হাল খারাপ হয়, সে সময়ে বেল আউটের জন্যও তাদের ডাকা হয়েছিল।
প্রতিবছর স্টক মার্কেট ও সরকারি সিকিউরিটিতে তারা প্রচুর বিনিয়োগ করে। প্রতি বছর গড়ে এলআইসির স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা।
প্রথমে প্রয়োজন একটি আইন
এলআইসি-কে পাবলিক করার আগে সরকারকে প্রথমে এলআইসি আইন সংশোধন করতে হবে।
এলআইসি বর্তমানে আইআরডিএআইয়ের আওতাধীন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ সংস্থা নিয়ন্ত্রিত হয় ১৯৬৫ সালের এলআইসি আইনের দ্বারা, যার বলে আইআরডিএআইয়ের সীমা অতিক্রম করতে পারে তারা।
এলআইসি আইনের ৩৭ নং ধারানুসারে সরকার সমস্ত এলআইসি পলিসির বোনাস সহ গোটা অর্থের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে, যাতে মৃত ব্যক্তির পরিবারের আর্থিক সাহায্য নিশ্চিতি পায়।
এলআইসি-র আর্থিক অঙ্ক
২০১৮-১৯ সালে ইকুয়িটি ইনভেস্টমেন্ট থেকে এলআইসি ২৩৬২১ কোটি টাকা লাভ করেছিল। তার আগের বছর লাভের পরিমাণ ছিল ২৫,৬৪৬ কোটি টাকা।
আইএরডিএআইয়ের নিয়ম হল জীবন বিমা বা অন্য বিমা কোম্পানির মূলধন হতে হবে অন্তত ১০০ কোটি টাকা। ১৯৫৬ সালের এলআইসি আইন অনুসারে, এ সংস্থা কাজ চালাচ্ছে ৫ কোটি টাকার মূলধন নিয়ে।
১৯ সালের আর্থিক বর্ষে এলআইসির লগ্নির বাজারমূল্য ছিল ২৮.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ সালে এ পরিমাণ ছিল ২৬.৪৬ লক্ষ কোটি টাকা, অর্থাৎ বৃদ্ধি হার ৮.৬১ শতাংশ। তার চেয়েও বড় কথা কর্পোরেশনের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৯ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়ে এখন হয়েছে ৩১.১১ লক্ষ কোটি কোটি টাকা।
২০১৮-১৯ সালের অন্তর্বর্তী হিসাব অনুসারে এলআইসির মোট প্রিমিয়ামজনিত আয়ের পরিমাণ ৩৩৭১৮৫ কোটি টাকা, বৃদ্ধির পরিমাণ ৬.০৮ শতাংশ। অন্যদিকে বেনিফিট হিসেবে প্রদান করা হয়েছে ২৫০৯৩৬ কোটি টাকা, যে বৃদ্ধি হার ২৬.৬৬ শতাংশ।
১৯ সালের আর্থিক বর্ষে এলআইসি মোট নতুন প্রিমিয়াম এনেছে ৪১,০৮৬.৩১ কোটি টাকা। প্রিমিয়াম ও লগ্নিজনিত আয়, দুয়ে মিলে ২০১৮-১৯ সালে এলআইসি-র মোট আয়ের পরিমাণ ৫,৬০,৭৮৪ কোটি টাকা, বৃদ্ধির হার ৭.১০ শতাংশ।
তবে দেশীয় বাজারে এলআইসির মারকেট শেয়ারের পতন নিয়ে সংস্থার শীর্ষস্থানীয়রা উদ্বিগ্ন। ২০১৮-১৯ সালে শেয়ার পতন ঘটেছে ৬৬.৭৪ শতাংশ।
পেনশন ও গ্রুপ স্কিম ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে নিজেদের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা ২০১৮-১৯ সালে পূরণ করতে পারেনি সংস্থা। সংস্থার শীর্ষ পরিচালকদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ থেকেই এ তথ্য উঠে এসেছে।