প্রবীণ বিজেপি নেতা এল কে আদবানি তাঁর শেষ বিবৃতিতে বাস্তবত বিজেপি নেতাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে রাজনৈতিক বিরোধীরা শত্রু বা দেশদ্রোহী এমন কথা বিজেপি মনে করে না।
এরকম ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও দলের গৃহীত অবস্থানের থেকে পৃথক লাইন তাঁর প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এর আগে দুবার তাঁর স্পষ্ট মতামত থেকে দল উপকৃত হলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে আদবানির নিজেকে এ কারণে ভুগতে হয়েছে।
নতুন করে তৈরি হওয়া বিজেপির প্রথম প্রধান হিসেবে আদবানি বাস্তবত দলের প্রথম সভাপতি অটল বিহারী বাজপেয়ীর গৃহীত গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্রের ধারণাকে দূরে সরিয়ে দেন। বাজপেয়ী-উত্তর সময়ে আদবানি দলের ভার হাতে নিয়ে গোটা দলের বক্তব্য়কে নিয়ে যান তাঁর ভাষায় কংগ্রেসের সিউডো-সেকুলারিজমের বিরুদ্ধে।
১৯৮৯ সালে বিজেপি রাম মন্দির ইস্যুতে ঝাঁপিয়েছিল। তার আগের ভোটে, ১৯৮৪ সালে তারা মাত্র দুটি আসন পায়। সেই সময় থেকেই বিজেপি নির্বাচনী ফয়দা তুলতে থেকেছে।
নিজের জনপ্রিয়তা যখন শিখরে, সে সময়েই আদবানি আরও একটি লাইন নেন, যা পার্টি লাইন ছিল না। ১৯৯৫ সালে, ৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে তিনি অটল বিহারী বাজপেয়ীকে দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেন। এ ঘটনাও দলের পক্ষে গিয়েছিল।
কিন্তু ২০০৫ সালে বিজেপি সভাপতি থাকাকালীন পাকিস্তান সফরে গিয়ে মহম্মদ আলি জিন্নাকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে অভিহিত করেন তিনি। মনে রাখতে হবে, তার আগেই ক্ষমতা থেকে সরে গিয়েছে বিজেপি। এ ঘটনার জেরে আদবানিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এর পর দলের কর্মীদের আস্থা ফিরে পেতে বেশ কয়েকবছর সময় লেগেছিল আদবানির। ২০০৯ সালে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে বিজেপি। তবে সে প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বিফলে গিয়েছিল।
এর পর থেকেই আদবানির ভিন্ন অবস্থান পার্টির কাছে গুরুত্বহীন থেকেছে। প্রথমত, ২০১৩ সালের ভোটে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রোজেক্ট করার ব্যাপারে দৃঢ় আপত্তি তুলেছেন তিনি। তাঁর মতামত দল গ্রাহ্য করেনি। নির্বাচনী ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
২০১৫ সালে বিহারে বিজেপির কড়া হারের পর দলের মধ্যে মুখ খোলেন প্রবীণ এই নেতা, এবং মোদী ও দলের সভাপতি অমিত শাহের নেতৃত্বের ব্যাপারে আপত্তি তোলেন। দলের কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে চোরাগোপ্তা কথা চালাচালি হলেও, কেউই তাঁর সঙ্গে যোগ দেয়নি।
২০১৬ সলে আসামে, এবং ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশে মোদী-অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপির জয়ের পর ২০১৫ সালের আদবানির আক্রমণ আরও নিস্তেজ হয়ে যায়।
আদবানির এবারের অবস্থানের গতি কী হবে, তা বোঝা যাবে ২৩ মে, লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর।
Read the Story in English