চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিট্যুট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (PGIMER)-এর কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ ও স্কুল অফ পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ডক্টর সোনু গোয়েল করোনাভাইরাসের সময়ে কী করা উচিত আর কী নয়, সে নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা ও সংশয় কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের হিনা রোহতকি।
চতুর্থ পর্যায়ের লকডাউনের ছাড়ের পর অনেকেই আগের মত বাজারে যাচ্ছেন। সবজি আর ফলের সুরক্ষার ব্যাপারে আমরা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি?
এই ভাইরাস সাধারণত সবজি ও ফলের গায়ে ছয় থেকে আট ঘণ্টা বেঁচে থাকে, তবে গরমে চার ঘণ্টার বেশি বাঁচে না। সাধারণ নিয়ম হিসেবে, বাড়িতে নিয়ে আসার পরেই সেগুলো ছোঁবেন না, বরং অন্তত চার ঘণ্টা প্যাকেট বন্দি অবস্থাতেই রেখে দিন। (এর অর্থ, আপনাকে বাজার যাওয়ার পরিকল্পনা আগে থেকে করতে হবে) এই সময়ের পর প্যাকেট ফেলে দিয়ে সবজি ও ফল গরম জলে কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখুন। পুরোপুরি সুরক্ষার জন্য সেগুলো গরম জল আর সামান্য বেকিং সোডা দিয়ে সাফ করে নিন।
কেউ কেউ সবজি ও ফলে স্যানিটাইজার স্প্রে করছেন...
সবজি ও ফলে স্যানিটাইজার দেওয়া একেবারই উচিত নয়। এরকম কোনও প্রমাণ মেলেনি যে সবজি ও ফলের গায়ে লেগে থাকা ভাইরাস স্যানিটাইজারে মরে যায়, এ ছাড়া অনেক সবজি ও ফলের গায়ে বাঁকাচোরা ভাঁজ থাকে, যেখানে স্যানিটাইজার পৌঁছয় না।
স্যানিটাইজার হাত, শরীর, ধাতব বা স্টিলের সারফেসের জন্য প্রয়োজনীয়। এতে রাসায়নিক থাকে, যা পেটে গেলে ক্ষতিকর হতে পারে। গরম জলই ফল ও সবজির জন্য যথেষ্ট।
চাইলে জলে এক ফোঁটা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে তাতে সবজি বা ফল ভিজিয়ে রাখতে পারেন। সেটা সবচেয়ে নিরাপদ। এবং খুব বেশি দামিও নয়। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট না পেলে বেকিং সোডাও ব্যবহার করতে পারেন। সবজি ও ফল ধোয়ার সময়ে মাস্ক পরে রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন: লকডাউন ৪.০ – কী কী ছাড় মিলল
অনেক সংস্থা এখন সব্জির স্যানিটাইজার বের করেছে।
আমি সেসব স্যানিটাইজারের উপাদান জানি না। যদি তাতে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট থাকে, তাহলে ব্যবহার করা যাবে, নচেৎ নয়।
পেঁয়াজ ইত্যাদি যেসব জিনিস গরম জলে ধোয়া যায় না, সেগুলোর কী হবে?
সেগুলো হাত দেওয়ার আগে তিন-চার ঘণ্টা সরিয়ে রাখুন। তার কারণ হল, আপনি তৎক্ষণাৎ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসবেন না। ফল খাওয়ার আগে বা সবজিতে হাত দেওয়ার আগে অপেক্ষা করুন।
চিজ, মাখন, দুধ এসব তো চার ঘণ্টা বাইরে রাখা যায় না...
হ্যাঁ, এগুলো খুব তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করুন। চিজ বা দুধ যদি প্যাকেটবন্দি হয়, তাহলে প্যাকেট শুদ্ধু সাবানজলে ধুয়ে ফেলুন এবং সঙ্গে সঙ্গে প্যাকেট নষ্ট করে ফেলুন যাতে পরিবারের কেউ এর সংস্পর্শে না আসতে পারে।
নরম পানীয় যদি প্লাস্টিক বা ধাতুর প্যাকেটে থাকে, তাহলে সেগুলো ২৪-৪৮ ঘণ্টা বাইরে রাখা যায়। এরকম কিছু সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। এমন জায়গায় রাখুন যাতে সরাসরি মানুশের সংস্পর্শে এগুলি না আসতে পারে। এসব করার সময়ে মাস্ক পরে থাকুন।
বাইরের অর্ডার দেওয়া খাবার কি নিরাপদ? বক্সের মধ্যে রান্না করা বা বেকড খাবারের ক্ষেত্রে কী হবে?
খাবার নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। যদি ঠিকমত রান্না করা হয়, ভাইরাস বাঁচবে না। সমস্যা হলো হ্যান্ডলিং নিয়ে - অনেকে মিলে রান্না করেন, প্যাক করেন, ডেলিভারি করেন, এবং আপনার তাঁদের কাজের ব্যাপারে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। যদি নার্ভাস লাগে, তাহলে অর্ডার করবেন না। তবে অর্ডার যদি করেন, তাহলে প্যাকেট সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিন। এরকম কোনও প্রমাণ মেলেনি যে স্যানিটাইজার কার্ডবোর্ডে সক্রিয় থাকে, তাহলেও সেগুলো ব্যবহার না করাই ভালো।
ওষুধের স্ট্রিপ স্যানিটাইজ করার কী হবে?
এগুলোর উপরেও স্যানিটাইজার কাজ করে বলে জানা নেই। কয়েক ঘণ্টার জন্য এগুলো রুম টেম্পারেচরে রেখে দিন। কেনার সঙ্গে সঙ্গে এর সংস্পর্শে না আসাই ভালো, কারণ এগুলিও বহু হাত ঘুরে আসে। তবে সরাসরি সূর্যের আলোয় ওষুধ রাখবেন না, এতে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
নগদ টাকা, স্টেশনারি, জামাকাপড়, জুতো, এসবের ক্ষেত্রে কী হবে?
কাগজ, টাকা বা বইয়ের উপর ভাইরাস বাঁচে না। এগুলি ব্যবহারের আগে দু-তিন ঘণ্টা বাইরে রাখুন। এর উপর স্যানিটাইজার কাজ করবে না। প্লাস্টিক বা ধাতবদ্রব্য স্যানিটাইজ করা যেতে পারে এবং এ ব্যাপারে স্যানিটাইজারের কার্যকারিতার প্রমাণও মিলেছে।
বাইরের জুতো ঘরে পরবেন না, কারণ বাইরের জুতোয় সংক্রমণ থাকতে পারে। নতুন জামাকাপড় বা জুতো কিনলে সেগুলো বারান্দা বা ব্যালকনিতে ৪৮ ঘণ্টা রেখে দিন। নতুন পোশাক পরার আগে ধুয়ে নেওয়াই ভাল।
আরও পড়ুন: ১ লক্ষ ছাড়াল সংক্রমণ, তবে আশঙ্কার তুলনায় দেরিতেই
অফিস খুলতে শুরু করেছে, লোকজন যাতায়াত শুরু করেছেন, এ সময়ে কী করা উচিত, কী নয়?
বাড়ি থেকে অফিস বেরনোর সময়ে এগুলি সঙ্গে রাখুন:
* নিজের বাসন, কাপ, গ্লাস বা বোতল। কাজের জায়গার ক্যান্টিন বা প্যান্ট্রি থেকে বাসন নেবেন না, কারণ তাতে অনেকে হাত দিতে পারেন।
* নিজের চার্জার ও পাওয়ার ব্যাঙ্ক সঙ্গে রাখবেন, যাতে অন্য কারও কাছ থেকে না নিতে হয়।
* নিজের কলম ও নোটপ্যাড সঙ্গে রাখুন। কলমের গায়ে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ভাইরাস সক্রিয় থাকে।
* সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন। রাখুন স্যানিটাইজড ওয়াইপ, নিজের ডেস্ক বা কিবোর্ড কাজ শুরুর আগে সাফ করে নিন।
* সর্বদা মাস্ক পরে থাকুন। মুখে হাত দেবেন না। কাজের জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
* সিঁড়ির রেলিংয়ে হাত দেবেন না, হাত দেবেন না লিফটের বোতামে, দরজার হাতলে, বা অন্য যেসব জায়গা অনেকে স্পর্শ করেন। তেমন করলে সঙ্গে সঙ্গে হাত স্যানিটাইজার দিয়ে বা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
* বাড়ি এসে জুতো বাইরে খুলুন, চশমা বা সানগ্লাস, কলম, মোবাইল ফোন স্যানিটাইজ করুন। পোশাক ছেড়ে ডিটারজেন্ট দেওয়া জলে ডুবিয়ে দিন। যে ঘর বা বাথরুমে পোশাক বদলেছেন সেখানে যেন ৬-৮ ঘণ্টা কেউ না যায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন