Advertisment

লকডাউনে সত্যিই কত কোভিড মৃত্যু আটকানো গেল?

সরকারি হিসেবের থেকে এ সংখ্যা অনেকটা কম হলেও হিসেবের দিক থেকে এটা অনেক বেশি পোক্ত, কারণ ভারতে বর্তমানে যতগুলি মহমারী সম্পর্কিত মডেল নিয়ে কাজ হচ্ছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে অনুপুঙ্খ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Lockdown Death Averted

লকডাউনে গুরগাঁওয়ের একটি সাইবার হাব

২২ মে-র এক সাংবাদিক সম্মেলনে নীতি আয়োগের তরফ থেকে ডক্টর ভি কে পল ২৫ মার্চ থেকে চলা লকডাউনের সাফল্যের হিসেব দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি লকডাউনের ফলে কত কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যু আটকানো সম্ভব হয়েছে তার খতিয়ান দিয়েছেন। এই সংখ্যাগুলি এসেছে বিভিন্ন মডেলিং গ্রুপের কাছ থেকে।

Advertisment

একটি হিসেব দিয়েছে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ, যাদের হিসেবে ১৫ মে পর্যন্ত ৩৬-৭০ লক্ষ সংক্রমণ ও ১.২ থেকে ২.১ লক্ষ মৃত্যু আটকানো গিয়েছে। পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার কেবলমাত্র মৃত্যুর হিসেব কষেছে, তারা জানিয়েছে ৭৮ হাজার মৃত্যু আটকানো গিয়েছে লকডাউনের ফলে। তৃতীয় একটি হিসেব কষেছেন অর্থনীতিবিদরা, তাঁদের তে ২৩ লক্ষ সংক্রমণ ও ৬৮ হাজার মৃত্যু আটকানো সম্ভব হয়েছে। NIMS-এর অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে চতুর্থ একটি হিসেব পাওয়া গিয়েছে। তাঁরা বলছেন ১.৫৯ লক্ষ সংক্রমণ ও ৫১ হাজার মৃত্যু আটকানো গিয়েছে। পঞ্চম হিসেব এসেছে পরিসংখ্যান মন্ত্রক ও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনসট্ট্যুটেক যৌথ উদ্যোগ থেকে, যেখানে দেখা গিয়েছে ১৪ থেকে ২৯ লক্ষ সংক্রমণ ৩৭ থেকে ৭৮ হাজার মৃত্যু আটকেছে লকডাউনে। এই হিসেবগুলির পরিধি অতি বিস্তৃত। এবং কীভাবে এ গুলি পাওয়া গেল, সে সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।

সংক্রমণের সংখ্যা বাড়লেও কমছে বৃদ্ধিহার

দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বচ্ছতার এরকম অভাব ও এ ব্যাপারে সদর্থকভাবে জানানোর অনিচ্ছাও ব্যাপক। প্রায় সমস্ত পরিসংখ্যানই সরকার সংগ্রহ করেছে, যেমন এ বছরের গোড়ার কয়েক মাসে কতজনের ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ ছিল, যা বাইরের কারও কাছে উপলব্ধ নয়। যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, তার গুণগত মান সম্পর্কে যে কোনও প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছে আইসিএমআর। প্রথমদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রক দিনে দুবারের পরিবর্তে একবার পরিসংখ্যান দিয়েছে এবং কোনও কোনও সময়ে অল্প সময়ের নোটিসে তাও বাতিল করেছে।

বিকল্প হিসেব

আমরা বিকল্প একটা হিসেব দিচ্ছি ইন্ডিয়ান সায়েন্টিস্টস রেসপনস টু কোভিড১৯ (ISRC) কালেকটিভ থেকে। ISRC একটি বিকল্প উদ্যোগ যাতে ভারত ও বিদেশের ৬০০ বিজ্ঞানী রয়েছেন, রয়েছেন শিল্পী, সায়েনস কম্যুনিকেটর, চিকিৎসক এবং নাগরিক সমাজের অন্য সদস্যরাও। কোভিড-১৯ সম্পর্কিত নিখুঁত, প্রামাণ্য তথ্য যাতে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় সে কারণে এই উদ্যোগ শুরু করা হয়।

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় একটি হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিয়ে বিতর্ক

ISRC ভারতের জন্য নির্দিষ্ট বিস্তারিত একটি মহামারী সংক্রান্ত মডেল তৈরি করে, যার নাম INDSCI-SIM। এই মডেলটিতে কত মৃত্যু এড়ানো গিয়েছে সহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। এই মডেলে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ক্লিনিকাল তথ্য আপ-টু-ডেট রয়েছে, রয়েছে জনবিন্যাসের বিবরণ, যার মধ্যে বয়স নির্ভর মৃত্যু সম্ভাবনা ও বয়সের হিসেব সহ প্রতি রাজ্যের জনসংখ্যার হিসেবও।

এই মডেলে লকডাউন সহ অন্যান্য পদক্ষেপের প্রভাবের বর্ণনাও রয়েছে। অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে লকডাউন পরিস্থিতিতে উপসর্গযুক্ত ও তাঁদের সংস্রবে আসা ব্যক্তিদের টেস্টের সংখ্যা বাডা়নোর ক্ষমতার হিসেবও। কার্যক্ষেত্রে, সংক্রমিতদের একটা অংশকে টেস্টিং করিয়ে এবং কোয়ারান্টিনে রেখে সংক্রমিত ও সম্ভাব্য সংক্রমিতদের মধ্যে সংস্রব কমানো সম্ভব। সংস্রব কমার ফলে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনাও কমে যাবে।

কত মৃত্যু এড়ানো গিয়েছে তার হিসেব করার জন্য আমরা ক্রমববর্ধমান মৃত্যু সম্পর্কিত গণ উপলব্ধ জাতীয় তথ্য ব্যবহার করেছি। আমরা লকডাউনের সময়ে সংক্রমিত ও সংস্পর্শে আসা সংখ্যার হিসেব করেছি,  তাতে প্রশমন কৌশল থাকলে এবং না থাকলে কী হত সে হিসেব কষা হয়েছে।

এই মডেলের হিসেব অনুসারে লকডাউনের জেরে ১৫ মে পর্যন্ত ৮ থেকে ৩২ হাজার মৃত্যু এড়ান গিয়েছে। সরকারি হিসেবের থেকে এ সংখ্যা অনেকটা কম হলেও হিসেবের দিক থেকে এটা অনেক বেশি পোক্ত, কারণ ভারতে বর্তমানে যতগুলি মহমারী সম্পর্কিত মডেল নিয়ে কাজ হচ্ছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে অনুপুঙ্খ। সবচেয়ে বড় কথা আমরা কী করছি সে সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ্য এবং ফলে সাধারণ মানুষ এ তথ্য স্ক্রুটিনি করতে পারবেন এবং এর সমালোচনা করতে পারবেন।

কোভিড-১৯ কীভাবে বদলে দিতে পারে বয়স্কদের খাদ্যাভ্যাস

আমাদের হিসেব মত একটা বড় সংখ্যক সংক্রমণ অশনাক্ত থেকেছে। আমাদের সেরা হিসেব বলছে, ভারতের ০.২ থেকে ১ শতাংশ মানুষ বর্তমানে সংক্রমিত, এবং প্রতিজন সংক্রমিতের সঙ্গে ২০-৩০ জন অশনাক্ত। নিশ্চিতভাবেই এই সংক্রমিতদের একটাবড় অংশ এতদিনে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। আগে কেউ সংক্রমিত হয়ে থাকলে তা অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে। আইসিএমআর যদি সীমিত কিন্তু সুপরিকল্পিত সেরোলজিকাল টেস্ট করে তাহলে বিষয়টি মিটতে সুবিধে হবে।

প্রভাব

লকডাউনের কার্যকারিতা সম্পর্কে এই বিশ্লেষণ কী প্রভাব ফেলতে পারে? এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে লকডাউন কার্যকর হয়েছে অন্তত কোভিড ১৯ জনিত মৃত্যুর সংখ্যা এর ফলে কিছুটা হলেও কমেছে। তবে কত মৃত্যু এড়ানো গিয়েছে এ সম্পর্কে সরকারি হিসেবের চেয়ে আমাদের সংখ্যা অনেকটাই কম।

ফলে লকডাউনের সুবিধা যদি ধরে না রাখা যায় তাহলে সর্বস্তরে ক্ষতি হবে। যাঁদের ক্রনিক অসুখ রয়েছে, তাঁরা যদি চিকিৎসার সুযোগ না পান তাহলে সমস্যা বাড়বে এবং নিয়মিত টিকাকরণ কর্মসূচি যদি ফলো আপ না করা হয় তার প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি। পরিয়ায়ী শ্রমিকের মৃত্যু এবং তাঁদের ফিরে আসার ফলে অপেক্ষকৃত কম সংক্রমণ এলাকায় সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধির হিসেবও মাথায় রাখতে হবে।

মৃত্যুর যে সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এর ফলে আমাদের ফলাফল বদলে যেতে পারে, বিশেষ করে কোভিড১৯ সংক্রান্ত মৃত্যুর একটা দুটো ফ্যাক্টর যদি বদলে যায়। তবে তাতে যে বদল ঘটবে তা তেমন বড়সড়নয় এবং আমাদের হিসেবমত যত সংক্রমণ নথিভুক্ত হয়েছে তার থেকে আদত সংক্রমণের সংখ্যা অনেকটাই বেশি।

এ ধরনের জাতীয় হিসেব আমাদের একটা সার্বিক ছবি দেয়, যা থেকে বোঝা যায় স্থানীয় স্তরে প্রশমন প্রচেষ্টাকতটা লাভজনক হয়েছে, যেহেতু এই মহামারী দেশের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন হারে ছডা়চ্ছে। INDSCI-SIM মডেল এ ধরনের অনুমান রাজ্য ও জাতীয় স্তরেও করতে পারে।

আশলে এটা কার হিসেব বেশি ভাল সে প্রশ্ন নয়। কথাটা হল সরকার এসব খুঁটিনাটি প্রকাশ করছে না যাতে বোঝা যায় যে তাদের হিসেব কতটা ঠিক। সরলভাবে বললে অকপটতার এই অভাব মেনে নেওয়া যায় না।

(পিনাকী চৌধুরী চেন্নাইয়ের ইনস্টিট্যুট অফ ম্যাথমেটিকাল সায়েন্সেস ও গৌতম আই মেনন সোনপতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। মতামত ব্যক্তিগত)

 

Lockdown COVID-19
Advertisment