পঙ্গপালের দঙ্গল শহরাঞ্চলে কেন, এরা ফসলের কতটা ক্ষতি করতে পারে?
একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পঙ্গপাল তিন মাসের জীবচক্রে তিনবার ৮০-৯০টি করে ডিম পাড়ে। যদি এদের নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকা ৪০-৮০ মিলিয়ন পঙ্গপালে ছেয়ে যেতে পারে।
একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পঙ্গপাল তিন মাসের জীবচক্রে তিনবার ৮০-৯০টি করে ডিম পাড়ে। যদি এদের নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকা ৪০-৮০ মিলিয়ন পঙ্গপালে ছেয়ে যেতে পারে।
গত কয়েকদিনে রাজস্থানের শহরাঞ্চলে পঙ্গপালের ঝাঁক দেখা যাচ্ছে, যা খুব স্বাভাবিক নয়। মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলেও এই ঝাঁক দেখা গিয়েছে। প্রথমবার পঙ্গপালের এই ঝাঁক দেখা গিয়েছিল গত ১১ এপ্রিল, ইন্দো-পাক সীমান্তে, সাধারণত যে সময়ে এদের আসার কথা, তার অনেক আগে।
Advertisment
পঙ্গপাল কী এবং ভারতে তাদের কোন সময়ে দেখা যায়?
মরুভূমির পঙ্গপালরা একক অবস্থায় যখন থাকে, তখন তারা নিরাপদ। কিন্তু যখনই থারা বংশ বিস্তার করতে থাকে, তাদের ব্যবহারিক পরিবর্তন ঘটে। এই সময়ে তারা বিশাল দঙ্গল তৈরি করে এবং দিনে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে, এবং পথের মধ্যে যে কোনও সবুজ তারা নিঃশেষে খেয়ে ফেলে। এরা বহু ধরনের ফসল খেয়ে জীবনধারণ করে।
এদের নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে পঙ্গপালের দঙ্গল দেশের খাদ্যসুরক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। বর্তমানে ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ার মত দেশগুলি গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পঙ্গপালের হানায় ভুগছে। ভারতে জুলাই-অক্টোবর নাগাদ পাকিস্তান সীমান্তে পঙ্গপাল দেখা যায়। গত বছর পশ্চিম রাজস্থান ও উত্তর গুজরাটে রবি শস্যের ক্ষতি করেছিল পঙ্গপালের ঝাঁক।
Advertisment
১৯৯৭ সালের পর গত বছরই প্রথম পঙ্গপাল এসেছিল ভারতে। এ বছর ১১ এপ্রিল কৃষিমন্ত্রকের পঙ্গপাল সতর্কীকরণ দফতরের বিজ্ঞানীরা রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগর ও জয়সলমিরে প্রথম পঙ্গপাল দেখতে পান।
শহরাঞ্চলে কেন পঙ্গপাল দেখা যাচ্ছে?
রাজস্থানের জয়পুর, মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র, মোরেনা ও শিওপুর, এবং মহারাষ্ট্রের অমরাবতী, নাগপুর ও ওয়ার্ধায় পঙ্গপাল দেখা যাচ্ছে, যা আগে কখনও হয়নি।
পঙ্গপাল সতর্কীকরণ সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর কে এল গুর্জর বলেছেন, “মাঠে কোনও ফসল না থাকায় সবুজের আকর্ষণে এরা বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরছে। তিনি বলেন, এই ঝাঁককে উড়তে সাহায্য করেছে গতিশীল হাওয়া, যে কারণে এরা জয়পুরের দিকে উড়ে গিয়েছে। বর্তমানে রাজস্থানে তিন থেকে চারটি, মধ্যপ্রদেশে আরও দু তিনটি পঙ্গপালের ঝাঁক রয়েছে, যাদের ছোট অংশ মহারাষ্ট্রের দিকে গিয়েছে।” গুর্জরের বক্তব্য এদের নিয়ন্ত্রণে আনা শক্ত হবে না।
রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বরিষ্ঠ পঙ্গপাল সতর্ককারী কিথ ক্রেসম্যান জানিয়েছেন, “পঙ্গপালরা খাদ্যের সন্ধান করছে। তিনি বলেন পাকিস্তান থেকে এই পঙ্গপালরা এ মাসের শুরুতে রাজস্থান আসে। যেহেতু তা বর্ষার আগে, ফলে তারা সবুজ ফসলের সন্ধানে রাজস্থানের পূর্বদিকে রওনা দেয় এবং বর্ষা আসার পাঁচ সপ্তাহ আগে ডিম পাড়ার জন্য আশ্রয় নিয়েছে।”
এরা আগেভাগে এসে গেল কেন?
এর জন্য পিছিয়ে যেতে হবে ২০১৮ সালে। ওমান ও ইয়েমেনে যথাক্রমে মেকুনি ও লুবান নামের দুটি সাইক্লোনই এর প্রাথমিক কারণ। এর ফলে বিশাল মরুভূমি হ্রদে পরিণত হয়, যার জেরে ২০১৯ পর্যন্ত এরা সেখানে বংশবিস্তার করতে থাকে। নভেম্বরে তাদের সংখ্যা যখন বিপুল, সে সময়ে এই ঝাঁক পূর্ব আফ্রিকার ফসলে হানা দেয় এবং ২০২০ সালের শুরুতে দক্ষিণ ইরান ও পাকিস্তানে নিজেদের আশ্রয় বানাতে থাকে। মার্চ এপ্রিলে পূর্ব আফ্রিকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে এদের আরও বংশবিস্তার ঘটে।
এর ফলে ভারতের ফসলের কী হতে পারে?
এখনই ভারতে ফসলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম কারণ কৃষকরা ইতিমধ্যেই রবিশস্য তুলে ফেলেছেন। মহারাষ্ট্রের কমলা চাষিরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও গুর্জর জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রে এদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।
সমস্যা হবে যথন এই ঝাঁক বংশবিস্তার করতে শুরু করবে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পঙ্গপাল তিন মাসের জীবচক্রে তিনবার ৮০-৯০টি করে ডিম পাড়ে। যদি এদের নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকা ৪০-৮০ মিলিয়ন পঙ্গপালে ছেয়ে যেতে পারে। বর্ষা শুরুর পরে এরা ডিম পাড়তে শুরু করে এবং দুমাস ধরে ডিম পাড়তে থাকে এবং পঙ্গপালের নতুন প্রজন্ম খরিফ শস্যের সময় পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এ মাসের গোড়ায় পরিস্থিতির খোঁজ নেবার জন্য কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর একটি বৈঠকের নেতৃত্ব দেন। নিয়ন্ত্রণ বলতে গাছের মত যেসব জায়গায় পঙ্গপালরা রাতে আশ্রয় নেয় সেখানে কীটনাশক ছড়ানো। এখনও পর্যন্ত পঙ্গপাল সতর্কীকরণ সংস্থা রাজস্থানের ২১৬৭৫ হেক্টর জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেছি। ভারত ৬০টি বিশেষ কীটনাশক স্প্রেয়ার ব্রিটেনে অর্ডার করেছে। গুর্জর জানিয়েছেন, দেশে এরকম ৫০টি মেশিন রয়েছে। এ ছাড়াও ড্রোন ব্যবহারের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন