আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অষ্টাদশ জি২০ শীর্ষ সম্মেলন। থাকবেন বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধানরা। বৈঠকে জলবায়ু, সবুজায়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি, সরকারি পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তবে, আলোচনার মূল বিষয় হল উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণের বোঝা বৃদ্ধি।
ঋণের ভারে ডুবে যাচ্ছে
বৈদেশিক ঋণ— যার মধ্যে ধনী দেশগুলোর থেকে ধার করা অর্থ, বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের মত বহুপাক্ষিক ঋণদাতা বা ব্যাংকগুলোর থেকে ধার করা অর্থ। এগুলোর পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। যার জেরে কিছু দেশ ঋণের ভারে ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে। এই দেশগুলোর বেশিরভাগই 'গ্লোবাল সাউথ' বা বৈশ্বিক দক্ষিণ-এর অংশ। গত ২৫ বছরের হিসেবে দেখা গিয়েছে, এই সব দেশগুলোর ঋণের বোঝা সবচেয়ে বেড়েছে ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ ১৫০%। সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে যে দেশগুলোর ঋণের বোঝা সবচেয়ে বেশি, সেগুলোর দিকে একটু নজর দেওয়া যাক।
জাম্বিয়া
তালিকায় একনম্বরে আছে জাম্বিয়া। কারণ, করোনা অতিমারির সময় তারাই প্রথম দেশ, যারা ঋণের সুদ চোকাতে ব্যর্থ হয়েছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। কিন্তু, তার মধ্যেই জুনে জাম্বিয়া 'প্যারিস ক্লাব' ঋণদাতা দেশ তথা তার অন্যতম বড় দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতা চিনের সঙ্গে ৬৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের চুক্তি নবীকরণ করেছে। জাম্বিয়া সরকারের আশা, আগামী মাসগুলোয় তারা আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের সঙ্গেও একটি ঋণচুক্তি করবে। আর, এটাকেই সেদেশের সরকার তাদের বিরাট সাফল্য বলে প্রচার করছে। জাম্বিয়া সরকারের দাবি, আগের ঋণ ঠিকমতো শোধ দিতে পারায় এই চুক্তিগুলো করা সম্ভব হচ্ছে। সঙ্গে দাবি করছে, করোনা অতিমারির জেরে তৈরি হওয়া আর্থিক প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে তারা। এটাও তাদের বিরাট সাফল্য।
শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কা জুনের শেষের দিকে তাদের একটি ঋণ মেটানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নন্দলাল ওয়েরাসিংহে বলেছেন যে তাঁদের বড় বিদেশি ঋণদাতা যেমন ভারত এবং চিন ঋণদান অব্যাহত রাখার আগে চাইছে যাতে দ্বীপরাষ্ট্র দেশের অভ্যন্তরের ঋণ মিটিয়ে দিক। পাশাপাশি, ১৪-২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ মেটানোর চূড়ান্ত সময়সীমা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ততদিনে দেশের অভ্যন্তরে বাজার থেকে নেওয়া ঋণ ঋণ শ্রীলঙ্কা সরকার মেটাতে ব্যর্থ হলে সমস্যা হবে। কারণ, তাহলে আইএমএফ এবং ভারত ও চিনের মত ঋণদাতারা শর্ত খেলাপের কারণে ঋণদানে আর রাজি হবে না।
আরও পড়ুন- এক দেশ-এক ভোটের ভাবনা, কী কী চ্যালেঞ্জ?
শুধু এই দুটো দেশ নয়। এমন দুর্বিষহ ঋণ পরিস্থিতিতে এখন ডুবে আছে- ঘানা, পাকিস্তান, টিউনিসিয়া, মিশর, এল সালভাদোর, কেনিয়া, লেবাননের মত বিভিন্ন দেশ। ফলে, পরিস্থিতি মোটেই সুখকর নয়। এই দেশগুলো ঋণ চোকাতে ব্যর্থ হলে, তারা তো ডুববেই। যে দেশগুলো এই সব দেশকে ঋণ দিয়েছে, তাদের আর্থিক ব্যবস্থার ওপরও বিরাট আঘাত নেমে আসবে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর, সেই সব কারণেই জি২০ শীর্ষ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত যেহেতু অন্যতম ঋণদাতা, তা-ই বৈঠকের আয়োজক হিসেবে ভারতও চায় বিষয়টি জি২০-তে আলোচিত হোক। আর, কোনও সমাধানসূত্র বের হোক।