প্রকৃতি রুষ্ট। উত্তরাখণ্ডে বসে গেল মাটি, ফাটল প্রায় ৬০০ বাড়িতে। জোশীমঠের ভূমিধস! আবারও বাস্তুচ্যুতির ক্ষত সামনে উঠে এসেছে। গত এক দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ১৪৭৭ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। রাজ্যে এমন ৪০০ টিরও বেশি গ্রাম রয়েছে, যেগুলি দুর্যোগপ্রবণ বলে পরিচিত। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামের বাসিন্দাদের অবিলম্বে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে ফাটল দেখা দেয় জোশীমঠে। আবারও বিপদের আভাস সংকেত দিচ্ছে প্রকৃতি। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, রাস্তাঘাট, মাঠে ফাটল দেখা দেওয়ায় এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে যে অবিলম্বে ৯৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাময়িকভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জোরালো হচ্ছে পুনর্বাসনের দাবিও। দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে, রুদ্রপ্রয়াগ, চামোলি, বাগেশ্বর, পিথোরাগড়, উত্তরকাশী, তেহরি জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে এখনও পর্যন্ত ১৪৭৭ টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
বিপর্যয়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ৪০০ টিরও বেশি গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছে। এমনিতেই ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা বলে পরিচিত।পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে রাস্তাঘাট, বেআইনি ভাবে পাহাড়ের ঢাল বরাবর বনভুমি কেটে হেটেল ব্যবসার রমরমা, সারা বছর মানুষের ঢল। এর ফলেই কী রুষ্ট প্রকৃতি উঠেছে প্রশ্ন। শয়ে শয়ে বাড়িতে ফাটল দেখা দিতেই প্রশ্নের মুখে সরকার।
উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠে ভূমিধসের কারণে পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হতে শুরু করেছে। ভূমিধসে তলিয়ে গেছে এলাকার সবকটি ওয়ার্ড। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে, পিএমও ক্রমাগত বিষয়টির ওপর কড়া নজর রেখে চলেছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক করেন। বিপর্যয় মোকাবিলা, সেচ, স্বরাষ্ট্র দফতরের আধিকারিক ছাড়াও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক এই বৈঠকে অংশ নেন।
এরপরই শনিবার (৭ জানুয়ারি), মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জোশীমঠে পৌঁছেছেন। তিনি একাধিক জায়গা ঘুরে দেখেন। পরিদর্শনের পরে, বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। পরবর্তী ৬ মাসের জন্য প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে প্রতি মাসে ৪হাজার টাকা সাহায্যের ঘোষণা। বাড়ি ভাড়া বাবদ এই টাকা তুলে দেওয়া হবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের হাতে।
জোশীমঠের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ধামি বলেন, “ভূমিধসের কারণে অনেক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে, সবাইকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ চলছে।কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
‘গেটওয়ে অফ হিমালয়’ নামে পরিচিত জোশীমঠের একাধিক এলাকায় ফাটল।গত ডিসেম্বর এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। শহর এলাকায় ফাটলের পাশাপাশি কৃষি জমিও ভূমিধসের কবলে পড়েছে। অনেক জায়গায় ফাটল এক ফুট পর্যন্ত চওড়া । ঘটনার পর তৎপর প্রশাসনও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি যৌথ দল গঠন করা হয়। দলটি দুদিন ধরে শহরের ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ঘুরে দেখেন।জোশীমঠ শহরে প্রায় দুই হাজার বাড়ি রয়েছে। রবিবার পর্যন্ত ভূমিধসের কারণে ৫৮১টি বাড়িতে ফাটল ধরেছে। সোমবার রাতে হঠাৎ করে অনেক বাড়িতে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিলে ধারাবাহিক ভূমিধসের ঘটনা সামনে আসে। এরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে।
কেন ভূমিধসের ঘটনা? দেরাদুনের ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজির ডিরেক্টর কালাচাঁদ সাঁই বলেন, "আজকের পরিস্থিতির কারণ আগেভাগে সতর্ক না হওয়া। পাহাড়ি শহর“এখানকার মাটি দুর্বল, পাশাপাশি এলাকাটি একটি অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাও বটে। অপরিকল্পিত নির্মাণ, জনসংখ্যার চাপ, পর্যটন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সবই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ি”। দুর্বল মাটি বড় নির্মাণের জন্য কোনভাবেই আদর্শ নয় এটা কোন ভাবেই মাথায় রাখা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
পরিবেশবিদ ডি পি ডোভাল বলেন, “জোশীমঠই এই সমস্যার একমাত্র শহর নয়। উত্তরাখণ্ডে বেশ কিছু জায়গা রয়েছে, বেশিরভাগ শহর যেগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫হাজার ফুট উপরে ভূমিধস থেকে ধ্বংসাবশেষ জমা হওয়ার কারণে তুলনামূলকভাবে সমতল হয়ে গেছে সেই সকল অঞ্চল, সেখানেও গড়ে উঠেছে বসতি। অনেক শহরেই একই রকমের ঘটনা ঘটতে পারে”। তিনি বলেন, এই সব অঞ্চলে ফাটল নতুন কিছু নয়, তবে আমরা এবার যা দেখছি তা অবশ্যই আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর এবং বিপজ্জনক। পদ্ধতিগত নিষ্কাশনের অভাব সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এর প্রধান কারণ অবৈধ নির্মাণ”।