Twitter Central Government: ছল করে কর্ণের থেকে সূর্যের রক্ষাকবচ নিয়ে নিয়েছিলেন ইন্দ্র। এর ফলে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণকে প্রাণ খোয়াতে হয়েছিল। আর টুইটারের থেকে আইনি রক্ষাকবচ নিয়ে নিল কেন্দ্রীয় সরকার। কর্ণ আর টুইটারের এই তুলনা নিয়ে আবার কল্পনায় কোনও রাজপ্রাসাদ তৈরি করবেন না যেন। যদিও রক্ষাকবচ প্রত্যাহারে টুইটার এ দেশে বেশ একটু চাপে পড়ল বলেই মনে হচ্ছে। কারণ এবার থেকে এই মাইক্রো ব্লগিং প্ল্যাটফর্মে নিয়ম-বহির্ভূত কিছু প্রকাশ পেলে, আর পাঁচটা সাইটের মতো তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে ঘোল খাওয়ানো যাবে।
কী ও কেন?
তথ্যপ্রযুক্তি আইন বা আইটি অ্যাক্টের ৭৯ নম্বর ধারায় এই সব সোশ্যাল সাইট এত দিন যে বিশেষ সুরক্ষা পেত, বুধবার তাই প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্র। কিন্তু কেন? কেন্দ্রীয় সরকার এই সব মাধ্যমগুলির জন্য একটি গাইডলাইন বা নির্দেশিকার ঘোষণা করে ২৫ ফেব্রুয়ারি। টুইটারের রক্ষাকবচ প্রত্যাহারের পিছনে ওই নির্দেশিকা না মানাকেই কারণ হিসেবে দর্শিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন মন্ত্রক। এমনই খবর সূত্রের।
এত দিন ঠিক কী আইনি রক্ষাকবচ বা সুরক্ষা পেত টুইটার?
টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মের কাজ হল আপনার কোনও বার্তা বা বক্তব্য অথবা ছবি প্রকাশ করে দেওয়া। যা পৌঁছে যায় এই প্ল্যাটফর্মের বহু ইউজারের কাছে। তা হলে টুইটার ফেসবুক ইত্যাদি হল আপনি ও সেই সব ইউজার-- এই দুইয়ের ইন্টারমিডিয়েটরি, বলা যেতে পারে মধ্যস্থ মাধ্যম, আরও ঠিক অর্থে নিরপেক্ষ বার্তাবাহক। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৭৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, প্রকাশিত কোনও তথ্য (ইনফরমেশন ও ডেটা), অথবা পোস্ট করা কোনও লিঙ্কের দায় নেই এই ধরনের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের। তবে এও বলা হয়েছে, এই মাধ্যম নিজে থেকে কোনও বার্তা ছড়ানোয় উৎসাহ দিতে পারবে না। মেসেজ কাদের কাছে পৌঁছবে তা স্থির করে দিতে পারবে না। কোনও পোস্টে বদলও আনতে পারবে না। এর মানে হল, ক থেকে খ-এর কাছে ছিঁটেফোঁটা নাক না গলিয়ে এরা শুধু পৌঁছে দেবে ম্যাসেজটুকু। এই কাজটার সঙ্গে পোস্টম্যানের যেন খানিকটা মিল রয়েছে।
আরও পড়ুন, করোনার চিকিৎসায় সুগারের ওষুধ কাজ করে কী ভাবে?
কোথায় গোল বাঁধল?
সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত কেন্দ্রের গাইডলাইনেই দ্বন্দ্ব উঠল চরমে। গাইডলাইনে বলা হয়, ইউজারের স্বার্থে তিনটি নতুন পদ তৈরি করতে হবে ফেসবুক, টুইটারের মতো মাধ্যমকে। এক, চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার, যিনি নিয়ম মোতাবেক সব হচ্ছে কি না দেখবেন। দুই, নোডাল কনট্যাক্ট পারসন, পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে এই সব সাইটগুলির তরফে কো-অর্ডিনেশনের কাজ করবেন। তিন, রেসিডেন্ট গ্রিভ্যান্স অফিসার, যাঁর কাজ হবে ইউজারদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামালানো। এই তিন জনকে ভারতের নাগরিক হতেই হবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই গাইডলাইন ঘোষণা করে বলা হয়, তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ করতে হবে এই তিন পদে। এর পর এক সপ্তাহে সব সোশ্যাল মিডিয়াই নিয়োগপর্ব শেষ করে ফেলে একমাত্র টুইটার ছাড়া। ৫ জুন সরকার তাদের এ নিয়ে নোটিশ দিলে, ৬ জুন তারা জানায় চুক্তির ভিত্তিতে রেসিডেন্ট গ্রিভ্যান্স অফিসার এবং নোডার কনট্যাক্ট পারসন তারা নিয়োগ করেছে। তবে চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগের জন্য এক সপ্তাহ প্রয়োজন। এর পর ১৫ জুন মঙ্গলবার টুইটার জানায়, তারা অন্তর্বর্তীকালীন চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগ করেছে, এ সম্পর্কে বিস্তারিত সরকারকে দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হবে। টুইটারের এই গয়ংগচ্ছ মানসিকতা সরকার মানেনি, সুরক্ষা সরানোর পদক্ষেপ নিয়েই ফেলেছে।
উত্তরপ্রদেশ-কাণ্ড
এরই মধ্যে সম্প্রীতি ভঙ্গ করার অভিযোগে টুইটারের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের লোনিতে এক এফআইআর হয়েছে। মিথ্যা খবর ছড়ানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই এফআইআর-এ। এফআইআরের কারণ কী? রবিবার আবদুল সামাদ নামে এক বয়স্ক ব্যক্তির বক্তব্যের ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে বৃদ্ধ বলছেন, একটি ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে কয়েকজন জয় শ্রীরাম বলানোর জন্য তাঁর উপর জুলুমবাজি করেছে। এই ঘটনায় টুইটের বন্যা বয়ে যায়। কাল্লু, গুজ্জর এবং আদিল নামে তিন জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, এই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই। গুজ্জরদের তাবিজ বিক্রি করেছিলেন সামাদ। তাতে কোনও কাজ না হওয়ায় এই অশান্তি। যেহেতু ওই ব্যক্তির দাবি সংক্রান্ত ভিডিও-র বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি টুইটার, তাই ওই এফআইআর হয়েছে। কেন্দ্রীয় গাইডলাইন না মানার উপর যেন গাঢ় ছায়া ফেলেছে এই ঘটনা। অনেকের ধারণা, এই দুয়ের নিট ফলাফলে টুইটার কবচটি খুইয়েছে।
আরও পড়ুন, কিডনির কোষে কোভিডের কামড়! জানুন কী ভাবে?
কী বললেন প্রসাদ?
বুধবার কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ টুইটারকে নিশানা করেন। একের পর এক টুইটে প্রসাদ বলেন, মত প্রকাশের অধিকারের ধ্বজাধারী হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে টুইটার, কিন্তু ইন্টারমিডিয়েটরি গাইডলাইন মানছে না। যা হতবাক করে দেওয়ার মতোই। দেশের আইন অনুযায়ী জারি ওই নির্দেশিকা। ব্যবহারকারীদের (ইউজার) ক্ষোভ মেটাতেও টুইটার ব্যর্থ। এই প্ল্যাটফর্মটি মিথ্যাচারের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। সে-ই মতো পছন্দ অপছন্দ স্থির হচ্ছে।
তা হলে এবার কী হবে?
সুরক্ষা বলয় থেকে টুইটারের বল এখন বেরিয়ে গিয়েছে। ফলে যদি কেউ এই মাধ্যমে এমন কোনও পোস্ট করেন, যা বেআইনি, ওই ব্যক্তিকেই শুধু কাঠগড়ায় তোলা হবে না, টুইটারের বিরুদ্ধেও আইন আইনের পথে চলবে। স্পষ্ট যে, প্রকাশিত বা প্রচারিত সমস্ত কিছুরই আইনি ভার এখন থেকে টুইটারেরও কাঁধেও চাপবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন