মুম্বইয়ের এক হোটেলে সোমবার সন্ধেয় শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের ১৬২ জন বিধায়কের একটি দল নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে তিন দলের তরফ থেকে আস্থা ভোচের আবেদন করার পরপরই এই শক্তি প্রদর্শন।
এনসিপি বিধায়কদের দলের সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার জানিয়ে দিয়েছেন বিদ্রোহী অজিত পাওয়ার আর পরিষদীয় দলনেতা নন, এবং আস্থা ভোটের সময়ে তাঁদের ভোটের উপর হুইপ জারি করার আইনি অধিকার অজিতের নেই।
আরও পড়ুন, মহারাষ্ট্রে কোন নিয়মে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহৃত হল?
শনিবার সকালে মহারাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের পর রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে মুখ্যমন্ত্রী ও অজিত পাওয়ারকে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করান। বিজেপি ও অজিত পাওয়ার দুজনেই দাবি করেছেন তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক বিধায়ক তাঁদের হাতে রয়েছে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়ে দিয়েছে। এবার মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের জন্য পরবর্তী কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে!
আস্থাভোট কী?
আস্থা ভোটের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ করেন তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক। সেটা ধ্বনি ভোটের মাধ্যমেও হতে পারে, আবার প্রত্যেক বিধায়কের ভোট পৃথকভাবে রেকর্ড করবার মাধ্যমেও হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার এই হিসেব নিকেশ অধিবেশনে স্থিরীকৃত হয়। এজন্য আইনপ্রণেতাদের একটি অধিবেশন ডাকা হয়ে থাকে।
বিধানসভার এই অধিবেশন ডাকার নির্দেশ কে দেন?
সংবিধান অনুসারে রাজ্যপাল এই অধিবেশন ডাকতে পারেন। কিন্তু অতীতে একাধিকবার সুপ্রিম কোর্ট আস্থাভোটের জন্য বিধানসভার অধিবেশন ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
২০১৮ সালে কর্নাটক বিধানসভা ভোটের পর ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় রাজ্যপাল বি এস ইয়েদুরাপ্পার সমর্থনের চিঠির ভিত্তিতে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ১৫ দিন সময় দেন। কংগ্রেস-জেডিএস এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায়। শীর্ষ আদালত দ্রুততার সঙ্গে আস্থা ভোট করতে বলে। ইয়েদুরাপ্পা সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পাচ্ছেন কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য অধিবেশন ডাকা হয় একটি শনিবার।
অধিবেশনে আস্থাভোট পরিচালনা করেন কে?
এই অধিবেশন পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ নির্বাচন করা হয় শুরুতেই।
দ্রুত আস্থা ভোটের নির্দেশ যেসব ক্ষেত্রে দেওয়া হয়, সেখানে আস্থাভোট সম্পন্ন হবার পর অধ্যক্ষ নির্বাচন হয়। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে রাজ্যপাল কোনও একজন বিধায়ককে অধ্যক্ষের ভূমিকা পালন করার জন্য নিয়োগ করেন। এই বিধায়ককে প্রোটেম অধ্যক্ষ বলা হয়। তিনি অন্য বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করান এবং তারপর বিধানসভায় আস্থাভোট পরিচালনা করেন।
প্রোটেম স্পিকার নির্বাচন করা হয় কীভাবে?
সংবিধান রাজ্যপালকে প্রোটেম স্পিকার নির্বাচনের অধিকার দিয়েছে। বেশ কয়েকবার রাজ্যপাল বিধানসভারর সবচেয়ে অভিজ্ঞ বিধায়ককে প্রোটেম স্পিকার নিযুক্ত করেছেন। তবে সেটা একটা প্রচলিত ব্যাপার, যে প্রথা অতীতে ভেঙেওছেন রাজ্যপালেরা।
২০১৮ সালের কর্নাটকে আস্থাভোটের সময়ে রাজ্যপাল বিজেপি বিধায়ক কে জি বোপাইয়াকে প্রোটেম অধ্যক্ষ নিযুক্ত করেন। বোপাইয়া দুবার অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলালেও তিনি সবচেয়ে অভিজ্ঞ বিধায়ক ছিলেন না। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর নিয়োগ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা হয়, কিন্তু শীর্ষ আদালত সে চ্যালেঞ্জ শোনেনি। তিনিই কর্নাটক বিধানসভার আস্থাভোট পরিচালনা করেন।
প্রোটেম স্পিকারের কি আস্থা ভোট পরিচালনার পূর্ণ অধিকার রয়েছে?
না, তা নেই। অতীতে যখন আদালত আস্থাভোটের নির্দেশ দিয়েছে, তখন সুরক্ষাকবচের কথাও বলেছে।
২০১৮ সালের কর্নাটক মামলায় শীর্ষ আদালত আস্থাভোট সরাসরি সম্প্রচারের নির্দেশ দিয়েছিল। ২০০৫ সালে ঝাড়খণ্ডের আস্থাভোটের সময়ে আদালত মুখ্যসচিব ও পুলিশের ডিজিকে সমস্ত বিধায়করা যাতে নিরাপদে বিধানসভায় আস্থাভোটে পৌছতে পারেন তার দেখভালের নির্দেশ দিয়েছিল।
দুটি মামলাতেই আদালত বিধানসভায় রাজ্যপালকে এক বিধায়কের মনোনয়ন করতে দেয়নি।
২০১৬ সালে উত্তরাখণ্ডের আস্থাভোটে আদালত সমর্থক ও বিরোধীরা কক্ষের দুপাশে লাইন করে দাঁড়াতে বলেছিল, যাতে প্রত্যেকের হাত দেখে সংখ্যা গোনা যায়। সে আস্থাভোটের ফল মুখ বন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছিল।
পরিষদীয় দলনেতার উপস্থিতিতে এনসিপি কি বিধায়কদের ভোট দেবার ব্যাপারে হুইপ জারি করতে পারে?
দলত্যাগবিরোধী আইন অনুসারে কোনও একটি দল তাদের বিধায়কদের উপর নিজেই হুইপ জারি করতে পারে বা কোনও ব্যক্তির উপর এই ভার দিতে পারে। রবিবার এনসিপির বৈঠকে দলের রাজ্য সভাপতি জয়ন্ত পাটিলের উপর এই ভার ন্যস্ত করা হয়েছে।
(চক্ষু রয় পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চের আউটরিচ প্রধান)