Advertisment

মধ্যপ্রদেশের রিসর্ট কৌশল, ভারতীয় রাজনীতির পুরনো অভ্যেস

মধ্য প্রদেশের বেশ কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়ক এক বিজেপি বিধায়কের তত্ত্বাবধানে বেঙ্গালুরুতে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় কমলনাথ সরকার টিকবে কিনা, সে বিষয়ে এঁরা নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Madhya Pradesh

সে ছিল সুখের সময়

মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতির চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে রাজ্য সরকারের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছে রিসর্ট রাজনীতির উপর।

Advertisment

রিসর্ট রাজনীতি ভারতে এখন পরিচিত। তবু বলে নেওয়া ভাল, ক্ষমতা বদল আটকাতে বা ত্বরান্বিত করতে ভারতীয় রাজনীতিতে বিধায়কদের বিলাসবহুল রিসর্টে রেখে দেওয়ার একটা চল রয়েছে।

ভারতীয় রাজনীতি ও সিন্ধিয়া পরিবার

সম্প্রতি মধ্য প্রদেশের বেশ কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়ক এক বিজেপি বিধায়কের তত্ত্বাবধানে বেঙ্গালুরুতে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় কমলনাথ সরকার টিকবে কিনা, সে বিষয়ে এঁরা নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন।

এর আগেও রিসর্ট রাজনীতির কারণে বেশ কিছু রাজ্য সরকারের পতন ঘটেছে।

অতীতের রিসর্ট রাজনীতির কয়েকটি উদাহরণ

মহারাষ্ট্র, ২০১৯- ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এনসিপি-র সঙ্গে সরকার গঠনের জন্য শিবসেনা বিজেপির হাত ছাড়ার পর বেশ কয়েকদিনের জন্য নাটক চলে। সব দলই বিধায়কদের উপরে কড়া নজর রাখে। ২৫ নভেম্বর, সুপ্রিম কোর্ট যেদি মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আস্থা ভোটের সিদ্ধান্ত নেয় তার আগের দিন শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের বিধায়করা মুম্বইয়ের একটি হোটেলে জড় হন। সংখ্যাটা ছিল ১৬২, এমনটাই দাবি করা হয়।

কর্নাটক, ২০১৯- জুলাই মাসে বিএস ইয়েদুরাপ্পা নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কংগ্রেস-জেডিএস জোটকে আস্থাভোটে হারিয়ে দেয়। তার আগে ২০১৮ সালে ইয়েদুরাপ্পাকে রাজ্যপাল সরকার গঠন করতে ডেকেছিলেন। সে সরকার মাত্র দুদিন টিকেছিল, কারণ ইয়েদুরাপ্পা সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেননি। ২০১৯ সালে, কংগ্রেস, জেডিএস ও বিজেপি তিন দলই নিজেদের বিধায়কদের বিভিন্ন রিসর্টে রেখে দিয়েছিল।

সিন্ধিয়াকে দিয়েই কি শেষ, নাকি তরুণ প্রজন্মের আরও অনেকে কংগ্রেস ছাড়ার লাইনে?

তামিলনাড়ু, ২০১৭- এডাপ্পাডি পালানিস্বামী ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তখন ১২২ জন বিধায়ক তাঁর পক্ষে ও ১১ জন বিধায়ক ও পনিরসেলভমের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। পনিরসেলভম ২০১৭ সাে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে অস্বীকার করেন এবং অভিযোগ করেন তাঁর উপর জোর খাটাচ্ছেন এআইডিএমকে নেত্রী ভিকে শশিকলা। শশিকলা তাঁর বিধায়কদের চেন্নাইয়ের কাছে এক রিসর্টে পাঠিয়ে দেন।

উত্তরাখণ্ড, ২০১৬- ২০১৬ সালে বিজেপি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াতের আস্থা ভোটের আগে নিজের দলের বিধায়কদের জয়পুরের হোটেেলে নিয়ে আসে। সে সময়ে কংগ্রেস ও বিজেপি দু দলই একে অপরের বিরুদ্ধে ঘোড়া কেনা-বেচার অভিযোগ করছিল। এর পরই কেন্দ্র সে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে। তবে হাইকোর্টে এ নির্দেশ টেকেনি, এর পর কংগ্রেস সরকার ফের ক্ষমতায় আসে। ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস হেরে যায়।

মহারাষ্ট্র, ২০০২- ২০০২ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখ তাঁর বিধায়কদের বেঙ্গালুরুর এক রিসর্টে পাঠান যাতে তাঁরা বিরোধী শিবসেনা-বিজেপি জোটে যোগ না দিতে পারেন।

বিহার, ২০০০- ২০০০ সালে জনতা দল (ইউনাইটেড) নেতা নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁর মেয়াদ ছিল সাত দিনের কারণ তার পরেই তিনি আস্থা ভোটে হেরে যান। সে সময়ে দলত্যাগের আশঙ্কায় কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল উভয়েই দলত্যাগের ভয়ে বিধায়কদের পাটনার হোটেলে রেখেছিল।

উত্তর প্রদেশ, ১৯৯৮- ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের জগদম্বিকা পাল উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৯৮ সালের ভোটচলাকালীন রাজ্যপাল কল্যাণ সিং পরিচালিত বিজেপি সরকারকে বরখাস্ত করার পর জগদম্বিকাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। আস্থা ভোটের আগে বিজেপি তাদের বিধায়কদের এক নির্জন জায়গায় পাঠায়। ৪৮ ঘণ্টা পর আস্থা ভোটে কল্যাণ সিং সরকার জেতে।

গুজরাট, ১৯৯৫- ১৯৯৫ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেল সুরেশ মেহতার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এ ছিল খাজুরাহো কেলেংকারির জের। শংকরসিং বাঘেলা ও ৪৪ জন বিধায়কের সমর্থনে বিধায়কদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল খাজুরাহোতে। ১৯৯৬ সালে অবশ্য মেহতাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন বাঘেলা। তিনি রাষ্ট্রীয় জনতা পার্টি গড়ে কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার গঠন করেছিলেন।

অন্ধ্র প্রদেশ- ১৯৮৪, ১৯৮৫- ১৯৮৪ সালে নরেন্দ্র ভাস্কর রাও এনটিআর সরকারকে কংগ্রেসের সাহায্যে উৎখাত করে। সে সময়ে অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন টি রামারাও দেশের বাইরে ছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভাস্কর রাওকে মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত করেন রাজ্যপাল। দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে ভাস্কর রাও প্রথমে বিধায়কদের বেঙ্গালুরুতে ও পরে দিল্লিতে পাঠান। তা সত্ত্বেও সরকারের পতন ঘটে এবং দু মাসের মধ্যে ক্ষমতায় ফেরেন রাও।

১৯৯৫ সালে এনটিআরের জামাই এন চন্দ্রবাবু নাইডু চেয়েছিলেন এনটিআরকে দল থেকে উৎখাত করতে। নিজের অনুগত বিধায়কদের তিনি হায়দরাবাদের ভাইসরয় হোটেলে পাঠান যাতে তিনি দলের দায়িত্ব নিতে পারেন।

কর্নাটক, ১৯৮৩- ১৯৮৩ সালে কর্নাটকে জনতা পার্টির নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী রামকৃষ্ণ হেগড়েকে ইন্দিরা গান্ধীর হাত থেকে সরকার বাঁচাতে হয়েছিল। ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ সালের বিধানসভা ভোটে হেগড়ের পরপর জয়কে বিপদ বলে বোধ করেছিলেন জনতা পার্টিতেই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা। হেগড়ের ছিল প্রধানমন্ত্রী হবার আকাঙ্ক্ষাও। বিধানসভায় আস্থা ভোটের সময়ে প্রায় ৮০ জন বিধায়ককে বেঙ্গালুরুর এক বিলাসবহুল রিসর্টে পাঠানো হয়, যাতে তাঁরা দলত্যাগ না করতে পারেন।

Madhya Pradesh
Advertisment