মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহারে বিনায়ক দামোদর সাভারকর (বীর সাভারকর)-কে দেশের সর্বোচ্চ অসমারিক সম্মান ভারতরত্ন দেবার ব্যাপারে বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বীর সাভারকর হিন্দুত্বের আদর্শের প্রবক্তা। মহারাষ্ট্রে বিজেপির সঙ্গী শিবসেনা। শিবসেনা সহ মহারাষ্ট্রের একটি বড় অংশ সাভারকরকে তাঁর দেশপ্রেমের জন্য প্রভূত সম্মান দিয়ে থাকে। আন্দামানের সেলুলার জেল (কালাপানি)-এ তাঁর বন্দি থাকার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এই অনুগামীরা। তবে সাভারকরের সমালোচকরা ব্রিটিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে লেখা তাঁর চিঠির জন্য তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রূপও করে থাকেন।
আরএসএস এবং সাভারকরপন্থীরা তাঁকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের জনক বলে চিহ্নিত করে থাকে। কিন্তু আরএসএস আবার হিন্দু মহাসভার সঙ্গে নিজেদের দূরত্বও বজায় রাখে। সাভারকর ১৯৩৭ সাল থেকে ৬ বছর হিন্দু মহাসভার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
২১ অক্টোবরের বিধানসভা ভোটে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও মহারাষ্ট্র বিজেপি সাভারকরের ভারতরত্নের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিল কেন?
মনে করা হচ্ছে, হিন্দুত্বের রাজনীতিতে নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম রাখার আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই ঘোষণা করেছে বিজেপি। বিজেপি বা আরএসএস কেউই চায় না, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক- যে কোনও স্তরেই অন্য কোনও সংগঠন হিন্দুত্বের আদর্শের রাজনীতিতে ভাগ বসাক।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: প্রফুল প্যাটেল ও দাউদ সহযোগী মির্চি ইকবালের যোগাযোগ
আরএসএসের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে সাভারকরের উপর আক্রমণ এলে বিজেপি বা আরএসএস কেউই সঙ্গেসঙ্গে উত্তেজিত হয় না, যারা উত্তেজিত হয় তারা দলের লোক নয়। এদের কোনও রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই কিন্তু গলার জোর রয়েছে।
তবে বিজেপি এবং আরএসএস দু দলের নেতারাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁরা এদেরকে বেশি দূর যেতে দেবেন না, যাতে তারা জায়গা দখল করতে পারে।
সাভারকেরর ভারত রত্ন নিয়ে বিজেপির ভূমিকা শিব সৈনিকদের যেমন খুশি করবে তেমনই আরএসএস বিজেপির মধ্যে সাভারকরপন্থীদের শান্ত করবে।
একই সঙ্গে বিজেপির এই পদক্ষেপ তাদের আদর্শপ্রণেতাদের জাতীয় ব্যক্তিত্বে উন্নত করতে সহায়তা করবে। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্দিষ্ট কিছু নেতাদের মহিমান্বিত করার বিষয়ে নিজেদের অস্বস্তি কখনওই গোপন করেনি আরএসএস। তাদের সাম্প্রতিক বই 'দ্য আরএসএস- রোডম্যাপস ফর দ্য টোয়েন্টিফার্সট সেঞ্চুরি'-তে সুনীল আম্বেকর স্বাধীনতা আন্দোলনকে আদর্শ-কেন্দ্রিক না করে ব্যক্তি-কেন্দ্রিক (গান্ধী-কেন্দ্রিক) করে তোলার ব্যাপারে কে বি হেগড়েওয়ারের আপত্তির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। হিন্দু-মুসলিম নিয়ে গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গি আরএসএস পছন্দ করেনি। আরএসএস-এর অনেকেই মনে করেন মহাত্মা গান্ধীকে মহিমান্বিত করতে গিয়ে সুভাষচন্দ্র বোস এবং সাভারকরের মত নেতাদের ভূমিকা চাপা পড়ে গিয়েছে।
সংঘের দৃঢ় বিশ্বাস, ভারতের স্বাধীনতা পূর্ব ইতিহাস সাভারকরকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। দেশের আইকনদের তালিকায় নিজেদের নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করার বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়েছে তারা। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত তাঁর প্রথম বিজয়াদশমীর ভাষণে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সংঘ তাদের আদর্শ ও ব্যক্তিত্বদের মূল ধারায় নিয়ে এসে আরএসএস সম্পর্কে ভুল ধারণা কাটিয়ে তুলতে চায়।
বীর সাভারকরকে ভারতরত্ন দেওয়া তাদের নেতাদের জাতীয় স্তরে উন্নীত করারই চেষ্টা।