বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ প্রথম ঘটে ১৯৯৪ সালে
মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আস্থাভোটের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে কোথায় কোথায় সুপ্রিম কোর্ট আস্থাভোটের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে দেখে নেওয়া যাক।
Advertisment
এসআর বোম্মাই বনাম ভারত সরকার (১৯৯৪)
সুপ্রিম কোর্টে আস্থাভোটের বিষয়টি প্রথমবার আসে ১৯৯৪ সালে, এসআর বোম্মাই মামলায়। এ মামলায় অভিযোগ করা হয় কর্নাটক বিধানসভায় বোম্মাই নেতৃত্বাধীন জনতা সরকারের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। আদালত বলে, যদি এমন আশঙ্কা তৈরি হয় যে মন্ত্রিপরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, তবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে আস্থাভোটের মাধ্যমে।
জগদম্বিকা পাল বনাম ভারত সরকার (১৯৯৯)
Advertisment
১৯৯৬ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার ভোটের ফলে দেখা যায়, কোনও দলই স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কিছু সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয় এবং তার পর বিজেপি ও বিএসপি জোট সরকার বানায়। দু দলের মধ্যে সমঝোতা হয় প্রত্যেক দল ৬ মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্বের পদ পাবে। সে অনুসারে বসপার মায়াবতী ৬ মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন।
বিজেপির কল্যাণ সিং যখন মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন, বসপা সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয়। বিধানসভায় আস্থা ভোট ডাকা হয়, সেখানে দেশের ইতিহাসে অন্যতম বিধানসভায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। বিধায়করা একে অন্যের দিকে মাইক, চেয়ার, সাউন্ডবক্স তো ছোড়েনই, নিশানা করা হয় অধ্যক্ষকেও। কল্যাণ সিং আস্থাভোটে জেতার পর তাঁর সরকারকে বরখাস্ত করে দেন রাজ্যপাল রমেশ ভাণ্ডারী। রাজ্যপাল জগদম্বিকা পালকে শপথবাক্য পাঠ করান, তাঁর নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করেন কল্যাণ সিং। সুপ্রিম কোর্ট এরপর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশ দেয়।
অনিল কুমার ঝা বনাম ভারত সরকার (২০০৫)
শীর্ষ আদালতের এ সংক্রান্ত পরবর্তী নির্দেশ আসে ঝাড়খণ্ড থেকে। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার শিবু সোরেন এবং এনডিএ-র অর্জুন মুণ্ডা। রাজ্যপাল সোরেনকে সরকার গঠন করতে ডাকলেও মুণ্ডা দাবি করেন তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার দিন এগিয়ে নিয়ে আসে এবং এবারেও আস্থাভোটের বিষয়ে বিশদ নির্দেশ দেয়।
ভারত সরকার বনাম হরিশ চন্দ্র সিং রাওয়াত (২০১৬)
উত্তরাখণ্ডের বিষয়টা অবশ্য সামান্য আলাদা ছিল। এখানে হরিশ রাওয়াতের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসে। ২০১৬ সালে তাঁর মেয়াদের শেষ দিকে বিধানসভায় ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। কংগ্রেসের কয়েকজন বিদ্রোহী বিধায়ক অভিযোগ করেন, বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকাকালীন একটি বিল পাশ করেছে সরকার। এরপর, রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। এর বিরুদ্ধে রাওয়াত সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে আদালত, দ্রুত শক্তিপরীক্ষার নির্দেশ দেয়। দু ঘণ্টার জন্য রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহৃত হয়। সুপ্রিম কোর্ট শক্তিপরীক্ষা পুরোটাই ভিডিও রেকর্ডিং করার নির্দেশ দেবার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিপরীক্ষার ফল আদালতকে জানাতে বলে।
চন্দ্রকান্ত কাভেলকর বনাম ভারত সরকার (২০১৭)
গোয়ার রাজ্যপাল বিজেপির মনোহর পরিক্করকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানালে এই মামলা হয়। বিজেপি গোয়া বিধানসভায় ৪০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে জয়লাভ করে এবং দাবি করে ছোট দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে তারা সরকার গঠন করতে পারবে। সুপ্রিম কোর্ট এ মামলায় আইনসভায় শক্তিপরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল।