Advertisment

Explained: মুসলিমদের ওপর সমীক্ষার সিদ্ধান্ত মহারাষ্ট্রের শিণ্ডে সরকারের, পিছনে কোন রহস্য !

বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে কোনওরকম সংরক্ষণের বিরুদ্ধে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Chief Minister Eknath Shinde

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডে

মহারাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের সামাজিক, শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর একটি গবেষণা কমিশন গড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। আশ্চর্যজনক হলেও সেই সিদ্ধান্তকে তার 'সবকা সাথ, সবকা বিশ্বাস' প্রচারের অংশ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। যখন বিরোধীরা আগের কমিটির রিপোর্ট ও সুপারিশের বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ টানছে, তখনই পালটা এই নতুন কমিশনের কথা তুলে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে চাইছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা।

Advertisment

মহারাষ্ট্র সরকারের সর্বশেষ সমীক্ষা কী সম্পর্কে?
মহারাষ্ট্রের সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিভাগ বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী (সিএম) একনাথ শিণ্ডের অধীনে। রাজ্যের ছয়টি রাজস্ব বিভাগের ৫৬টি শহরে 'মুসলিম সম্প্রদায়ের সামাজিক, শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিক অবস্থা' নিয়ে একটি সমীক্ষা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা কোথায় আছে, সমীক্ষার পর তা জানিয়ে দেবে টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস (TISS)। এই সমীক্ষা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, আবাসন, ঋণপ্রাপ্তি এবং পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর রাষ্ট্রের নীতির প্রভাব পরীক্ষা করবে।

এই সিদ্ধান্তের কারণ কী?
শিণ্ডের নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্র সরকার বারবার দাবি করেছে যে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন সরকারের চেয়ে তাঁদের হিন্দুত্বের পতাকা উঁচু থাকবে। শিন্ডে এবং তাঁর বিদ্রোহী শিবির ধারাবাহিকভাবে বলেছে যে তাঁরা শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বাল ঠাকরের প্রচারিত হিন্দুত্ব মতাদর্শের প্রবক্তা। কিন্তু, বালাসাহেবের সেই হিন্দুত্বের আদর্শ থেকে সরে এসেই তাঁর ছেলে উদ্ধব ঠাকরে কংগ্রেস এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি)-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন।

বর্তমানে হিজাব, মাদ্রাসা সমীক্ষা এবং জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিরোধের কারণে মুসলিমদের একটি বড় অংশই হিন্দুদের থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের বিচ্ছিন্ন বোধ করছে। সরকার তাঁদের সঙ্গে জড়িত হতে পারেনি বলেও উদ্বেগ বাড়ছে। এই অবস্থায়, সমীক্ষার ব্যবস্থা মহারাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরএসএসও একই ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে
মুসলিম সংগঠনগুলোর প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ব্যাপারে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের প্রধান উমর আহমেদ ইলিয়াসির সঙ্গে দেখা করেন। দিল্লিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বারা পরিচালিত একটি মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন।

এই প্রথম কোনও আরএসএস প্রধান কোনও মাদ্রাসা পরিদর্শন করলেন। তার আগে, নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন প্রধান এসওয়াই কুরেশি, দিল্লির প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট-গভর্নর নজিব জং, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন চ্যান্সেলর লেফটেন্যান্ট জমিরউদ্দিন শাহের মতো বিশিষ্ট মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন আরএসএস প্রধান।

মহারাষ্ট্র সরকার কি অতীতে একই ধরনের সমীক্ষা করেছে?
মহারাষ্ট্রে, মুসলিম সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সর্বশেষ এই ধরনের সমীক্ষাটি তৎকালীন কংগ্রেস-এনসিপি সরকার ২০০৮ সালে করেছিল। যার নেতৃত্বে ছিল মেহমুদ-উর-রহমান কমিটি।
২০১৩ সালে তাদের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে কমিটি বলেছিল যে মহারাষ্ট্রের প্রায় ৬০ শতাংশ মুসলমান দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে।

রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সরকারি চাকরিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের অংশ মাত্র ৪.৪ শতাংশ। মুসলিম সম্প্রদায়ের মোট স্নাতকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২.২ শতাংশ। মহারাষ্ট্রে চাকরি, শিক্ষা এবং আবাসনে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের সুপারিশ করেছিল কমিটি।

সেই রিপোর্টের ফলাফল কী ছিল?
রহমান কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে, ২০১৪ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৎকালীন কংগ্রেস-এনসিপি সরকারি-চালিত স্কুল-কলেজ, চাকরিতে মুসলমানদের জন্য ৫ শতাংশ সংরক্ষণ চালু হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত পরে বম্বে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। যার জেরে চাকরিতে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণ বাতিল হয়।

তবে, রহমান কমিটি শিক্ষাক্ষেত্রেও মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ৫ শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিল। ২০১৪ সালের অক্টোবরে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে অবশ্য প্রস্তাবিত সংরক্ষণ বাস্তবায়ন করেনি। বদলে জানিয়েছিল, তারা ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ সমর্থন করে না।

আরও পড়ুন- বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে ভুয়ো ও বিভেদমূলক খবর ছড়ানোর অভিযোগ দায়ের

মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলো শিণ্ডে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কী বলছে?
মহারাষ্ট্র কংগ্রেস ইউনিটের প্রধান মুখপাত্র অতুল লন্ডে বলেছেন যে রাজ্য সরকার যখন মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর সমীক্ষার পরিকল্পনা করছে, তখন ২০১৩ সালের রহমান কমিটির সুপারিশগুলি বাস্তবায়নের জন্য এই সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, তা-ও প্রকাশ করা উচিত।

লন্ডে বলেন, 'কমিটি গঠনের পরিবর্তে সরকারকে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ করতে হবে। হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ঘৃণা ছড়ানোর পরিবর্তে মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।'

এনসিপির প্রধান মুখপাত্র মহেশ তাপসে বলেছেন যে এই সমীক্ষাকে স্বাগত। সরকারকে অবশ্যই শিক্ষায় মুসলমানদের জন্য পাঁচ শতাংশ সংরক্ষণের বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। সমীক্ষার রিপোর্টগুলো অবশ্যই বাস্তবায়িত করতে হবে। বিজেপি নেতা এবং মুখপাত্র কেশব উপাধ্যায় বলেছেন যে তাঁর দল 'সবকা সাথ, সবকা বিশ্বাস'-এর এজেন্ডায় বিশ্বাস করে।

তিনি বলেন, 'মুসলিম হোক বা অমুসলিম, আমরা সর্বাত্মক উন্নয়নে বিশ্বাসী। এই সমীক্ষাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে সমাজের সকল অংশের অগ্রগতি হওয়া উচিত।' একইসঙ্গে তিনি জানান, তাঁর দল ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিরোধিতা করে চলেছে। আর, সেটা ভবিষ্যতেও করবে। কারণ, সংবিধানে এমন কোনও বিধান নেই।

Read full story in English

Maharashtra Muslim Eknath Shinde
Advertisment