বৃহস্পতিবার রাতে তিনজন ব্যক্তিকে একদল জনতা মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলায় দলবদ্ধ হয়ে খুন করে। ওই তিনজন শিশুদের চুরি করে তাদের শরীরের অংশ বিক্রি করছিলেন বলে রটিয়ে দেওযা হয়। ওই তিনজন সুরাটে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। পালঘরের এক প্রত্যন্ত এলাকায় গড়চিঞ্চলে নামের এক আদিবাসী গ্রামে একদল গ্রামবাসী গাড়ি থামিয়ে পাথর, কাঠ ও কুড়ুল দিয়ে তিনজনকে খুন করে।
এ ঘটনায় ১০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ও ৯জন নাবালককে আটক করা হয়েছে।
কোথায় ঘটেছে এ ঘটনা?
গড়চিঞ্চলে গ্রাম আদিবাসী অধ্যুষিত পালঘর জেলার দাহানু তালুকার অন্তর্ভুক্ত। রাজধানী মূম্বই থেকে এর অবস্থান ১৪০ কিলোমিটার উত্তরে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে এ গ্রামে ১২৯৮ জনের বাস, যাঁদের মধ্যে ৯২ শতাংশ তফশিলি জনজাতির। এ গ্রাম মহারাষ্ট্র এবং কেন্দ্র শাসিত দাদরা নগর হাভেলির সীমান্তে অবস্থিত। দাদরা নগরহাভেলি এখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে।
কখন এই ঘটনা ঘটে?
ঘটনা ঘটে ১৬ এপ্রিল রাতে। ৭০ বছরের মহন্ত কল্পবৃক্ষ গিরি এবং ৩৫ বছরের সুশীলগিরি মহারাজ নামের দুই সন্ন্যাসী কান্ডিভালির এক আশ্রমে বাস করতেন। তাঁর্ সুরাটে এক অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দেবেন বলে সেখানে যাবার মনস্থ করেন। ওই দুজনে নীলেশ ইয়ালগাডে (৩০) বছরের এক গাড়িচালকের কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া করে কান্ডিভালি থেকে সুরাটের উদ্দেশে রওনা দেন।
রাস্তায় যাতে আটকে পড়তে না হয় সে কারণে তাঁরা মুম্বই-গুজরাট হাইওয়ের বদলে পালঘর জেলার পিছন দিকের রাস্তা নেন। গড়চিঞ্চলে গ্রামের কাছে বনবিভাগের পাহারাদার তাঁদের রাস্তা আটকায়। তাঁরা যখন পাহারাদারের সঙ্গে কথা বলছিলেন সেই সময়ে একটি দল তাঁদের উপর হামলা করে।
লকডাউনে দোকান-বাজার: নিরাপদে থাকতে আপনাকে যা যা করতে হবে
এলাকার ভ্রমণকারীদের উপর হামলার ইতিহাস
গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় গ্রামবাসীরা নজরদার বাহিনী তৈরি করেছিলেন। সেখানে গুজব রটেছিল মানবদেহের অংশ পাচারকারী, শিশু চোর ও চোরেরার রাতে ওই এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই গুজবের জেরে দুটি হেনস্থার ঘটনা ঘটে। গত বুধবার ডক্টর বিশ্বাস ভালভি ও তাঁর দল আদিবাসী অধ্যুষিত সারনি গ্রামে জিনিসপত্র পৌঁছে দিতে যাবার সময়ে হামলার মুখে পড়েন।
তাঁদের উদ্ধার করতে যাওয়া পুলিশবাহিনীর উপর পাথর ছোড়া হয়। এ ঘটনা ঘটে কাসা থানার এলাকায়, সেখানেই গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। ১০ দিন আগে দাদরা ও নগর হাভেলি যাবার সময়ে এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে এক পুলিশ বাহিনীও স্থানীয় মানুষের হামলার মুখে পড়েছিল।
করোনাক্রান্তের সংখ্যার দ্বিগুণ বৃদ্ধি, ভারতে ও অন্যত্র
পুলিশের ভূমিকা
হামলার ঘটনার সময়ে কাসা থানায় ফোন করা হয়েছিল। থানার দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। সরকারি বয়ান অনুসারে চারজন পুলিশ আধিকারিক যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছন ততক্ষণে গাড়ি উল্টে ফেলা হয়েছে। পুলিশ কর্মীদেরও হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে যাঁরা ভিডিও করছিলেন সেখান থেকে দেখা গিয়েছে জনতা গাড়ি উল্টে দেবার পর, পাথর, কাঠ ও কুড়ুল দিয়ে গাড়িতে হামলা করে। তিনজনেই সে সময়ে গাড়ির মধ্যে ছিলেন। সে সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় আরও পুলিশ। ১২জন পুলিশকর্মী মিলে কোনওমতে তিনজনকে উদ্ধার করে দুটি আলাদা গাড়িতে তোলে। পালঘরের কালেক্টর জানিয়েছেন, “প্রায় ৪০০ উন্মত্ত জনতা পুলিশের গাড়িতে হামলা করে তিনজনকে বের করে নিয়ে যায় ও কুপিয়ে মারে। কয়েকজন পুলিশকর্মীও সামান্য আহত হয়েছেন।”
তবে ভিডিও অন্য কথা বলছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে জনতা যখন তিনজনের উপর হামলা করছে সে সময়ে পুলিশ নি্র্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একজন পুলিশকর্মী একা একজন আক্রান্তকে একটি পুলিশের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছেন। সে সময়ে পাঁচ ছ জন এলাকাবাসীর একটি দল এসে তাঁদের রাস্তা আটকায় এবং একজন পুলিশকর্মীকে ধরে ঠেলে অন্যদিকে নিয়ে যায়। অন্যরা আহতের উপর ফের আক্রমণ চালায়।
কতজন গ্রেফতার
পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১০১ জন প্রাপ্ত বয়্স্ক ও ৯ নাবালককে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। নাবালকদের রাখা হয়েছে চিলড্রেনস হোমে। রাজ্য জানিয়েছে গোটা ঘটনার তদন্ত হবে, পুলিশি ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে। পালঘরের ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর কৈলাস শিন্ডে জানিয়েছেন, “পুলিশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার তদন্ত করা হবে এবং ঘটনার সময়ে তাদের আচরণও খতিয়ে দেখা হবে।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন