রবিবার, ২৪ নভেম্বর আপৎকালীন শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট সোমবার সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত সময় দিয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে যা যা দাখিল করতে হবে তা হল
১) মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির চিঠি যাতে তিনি রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নিয়ে সরকার গঠন করার কথা বলেছেন
২) ফড়নবিশের রাজ্যপালকে দেওয়া চিঠি যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক তাঁকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
শনিবার সকালে নাটকীয় ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে নিয়ে কোশিয়ারী দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে মুখ্যমন্ত্রী ও অজিত পাওয়ারকে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান। তার পর থেকেই এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এরই মধ্যে কংগ্রেস দাবি করে, যে ক্যাবিনেট বৈঠকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করার প্রস্তাব রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে তার সময় এবং বৈঠকে উপস্থিত সদস্যদের নাম জানাতে হবে।
রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করার জন্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বিশেষ আইন কাজে লাগিয়েছে। ওই আইনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজন বোধ করলে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করতে পারেন।
১২ নং বিধি নামে পরিচিত এই আইনটি কী?
১৯৬১ সালের ভারত সরকার (ট্র্যানজ্যাকশন অফ বিজনেস) বিধি অনুসারে প্রধানমন্ত্রী স্বীয় ক্ষমতাবলে কিছু কাজ করতে পারেন।
১২ নং ধারায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রয়োজনে এই আইনের কিছু ধারা মকুব করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
১২ নং বিধি অনুসারে নেওয়া সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভা পোস্ট-ফ্যাক্টো অনুমোদন করতে পারে।
১২ নং বিধি কোন পরিস্থিতিতে কার্যকর?
সরকারের বড়সড় সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে এই বিধি লাগু হয় না। তবে কোনও মেমোরান্ডাম প্রত্যাহার বা মৌ স্বাক্ষরের জন্য এই আইন আগে কাজে লাগানো হয়েছে।
১২ নং বিধির আওতায় শেষ বড় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে ৩১ অক্টোবর- জম্মু কাশ্মীর রাজ্যকে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভাজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।
মন্ত্রিসভা এ সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছিল ২০ নভেম্বর।
আরও পড়ুন, অজিত পাওয়ার: এনসিপির গলার কাঁটা
মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কী হল?
সূত্র বলছে একবার যখন রাজ্যপাল কোশিয়ারিকে জানানো হয়েছিল যে এনসিপির সঙ্গে জোট সরকার গঠনের জন্য বিজেপির কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যা রয়েছে এবং তিনি তা যাচাই করে নেন, সেই শুক্রবার রাতেই রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করার জন্য রাজভবন কাজ শুরু করে দেয়।
শনিবার ভোর ৫-৪৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতিশাসন প্রত্যাহার সম্পর্কিত নোটিফিকেশন সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়। এতে স্পষ্ট যে ওই সময়ের আগেই রাষ্ট্রপতি নোটিফিকেশনে স্বাক্ষর করেছিলেন।
সকাল ৭-৫০-এ মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন।
সরকারের কে কে জানতেন কী ঘটতে চলেছে?
১২ নং বিধি প্রয়োগ করার ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের কাছেও কী ঘটতে চলেছে সে খবর ছিল না। শীর্ষ মন্ত্রীদের অনেককেই বৈঠকের জন্য পাওয়া যেত না।
সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ছিলেন লখনউয়ে। রাঁচিতে সভা শেষ করে সড়কমন্ত্রী নিতিন গড়করি ফিরে গিয়েছিলেন মুম্বইয়ে। রাজনাথ ও গড়করি দুজনেই বিজেপি সংসদীয় বোর্ডেরও সদস্য।
ক্যাবিনেটের অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিসংখর প্রসাদ জানান সমস্ত সিদ্ধানতই আইনি পদ্ধতি মেনে গৃহীত হয়েছে।
আর সু্প্রিম কোর্ট যে রাজ্যপালকে দেওয়া ফড়নবিশের চিঠি চেয়েছে, তার কী হবে?
রবিশংকর প্রসাদ বলছেন মহারাষ্ট্র এনসিপির বিধানসভা দলনেতা হওয়ার সুবাদে অজিত পাওয়ার যা করেছেন, তাও বিধি মোতাবেক।
প্রসাদ বলেন, দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বিজেপির এবং অজিত পাওয়ার এনসিপির বিধানসভার দলনেতা। সে কারণেই এঁরা যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করেছেন তখন রাজ্যপালের কাজ একদম যথার্থ হয়েছে।
শনিবার সন্ধেবেলা এনসিপি অজিত পাওয়ারকে বিধানসভার দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সরকার সুপ্রিম কোর্টে কী করে, তাই এবার দেখা