Aaya Ram-gaya Ram: রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায়, নীতীশ কুমার নবমবারের মত বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন। তাঁর দল জনতা দল (ইউনাইটেড) বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হল। কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি) অন্তর্ভুক্ত 'মহাগঠবন্ধন' জোটের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে নীতীশ কুমার রবিবার ফের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসলেন। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব ও তাঁর ছেলে তেজস্বী যাদব গত কয়েকদিন ধরে চলা নীতীশ কুমারের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। খাড়গে বলেন, 'দেশে অনেক আয়া রাম, গয়া রাম আছেন। তিনি (নীতীশ কুমার) চাইলে থাকতে পারতেন।' ভারতীয় রাজনীতিতে 'আয়া রাম, গয়া রাম' শব্দটা নতুন না। ১৯৬০-এর দশকে হরিয়ানায় নেতাদের মধ্যে আজ এই দলে তো কাল ওই দলে যাওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছিল। সেই থেকেই শব্দটা চালু হয়ে যায়।
হরিয়ানার রাজনীতিবিদ গয়া লালের উত্থান
ভারতীয় রাজনীতির একটি বিশেষ বছর ১৯৬৭। এই সময়টায় দাগ কাটেন হরিয়ানার রাজনীতিবিদ গয়া লাল। এই সময়টায় ভারতীয় রাজনীতিতে এক বিরাট পরিবর্তন আসে। কারণ, ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত, কংগ্রেস পার্টি রাজ্য এবং জাতীয়স্তরে চরম আধিপত্য উপভোগ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৯৪৭ সাল থেকে টানা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কয়েক দশক ধরে তিনি কংগ্রেস দলকে নেতৃত্ব দেন। অবশেষে ১৯৬৪ সালে মারা যান। ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল এই পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। কিছু ভোটার কংগ্রেস থেকে দূরে সরে যান। কংগ্রেস পার্টি লোকসভায় ২৮৩টি আসনে জয়ী হয়। তার আগের ভোটে এই দল পেয়েছিল ৩৬১টি ভোট। তারই মধ্যে ১৯৬৬ সালে ভাষাগত কারণে হরিয়ানাকে পঞ্জাব থেকে একটি পৃথক রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর, হরিয়ানায় প্রথম বিধানসভা নির্বাচন হয়।
গয়া লাল কে ছিলেন?
গয়া লাল ছিলেন একজন নির্দল প্রার্থী। তিনি হাসনপুরে তফসিলি জাতি (এসসি) সংরক্ষিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। হারিয়েছিলেন কংগ্রেসের এম সিংকে, তবে মাত্র ৩৬০ ভোটে। এম সিং পেয়েছিলেন ১০,০৯৮টি ভোট। আর, গয়া লালের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ১০,৪৫৮। যদিও কিছুদিন পর নির্দল গয়ালাল কংগ্রেসে যোগ দেন। তৎকালীন ৮১ সদস্যের হরিয়ানা বিধানসভায়, কংগ্রেস ৪৮টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। ভারতীয় জনসংঘ বা বিজেএস (যা থেকে বিজেপি তৈরি হয়েছে) জিতেছিল ১২টি আসনে। রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া (আরপিআই) জিতেছিল ২টি, স্বতন্ত্র পার্টি জিতেছিল ৩টি আসনে। আর, ১৬টি আসনে জিতেছিল নির্দল। ১৯৬৭ সালের ১০ মার্চ, কংগ্রেসের ভাগবত দয়াল শর্মা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
গয়া রাম, আয়া রাম
কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে ১২ জন কংগ্রেস বিধায়ক দলত্যাগের পর তাঁর সরকারের পতন ঘটে। দল ত্যাগ করা বিধায়করা রাও বীরেন্দরের নেতৃত্বে 'ইউনাইটেড ফ্রন্ট' বা যুক্ত বিধায়ক দল (এসভিডি) নামে একটি নতুন সংগঠন গঠন করেন। পক্ষ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। আর, নতুন 'ইউনাইটেড ফ্রন্ট'-এর বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে হয় ৪৮। এরপর ১৯৬৭ সালের ২৪ মার্চ, রাও বীরেন্দর নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। গয়ালাল ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। সেই জন্য তিনি এসভিডি-তে যোগদানের জন্য রাও বীরেন্দরের শপথ গ্রহণের ঠিক আগে কংগ্রেস ছাড়েন। তবে, এনিয়েও তাঁর মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব ছিল। মাত্র নয় ঘণ্টার মধ্যে, তিনি তিনবার পার্টি বদলান। প্রথমে এসভিডিতে যান। তারপর কংগ্রেসে। ফের এসভিডিতে ফেরেন। যে মুহুর্তে শেষবার, গয়া লাল এসভিডিতে প্রত্যাবর্তন করেন, সেই সময় রাও বীরেন্দর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে চণ্ডীগড়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেন, 'গয়া রাম এখন আয়া রাম।'
আরও পড়ুন- ‘জাতির জনক’ মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী! কীভাবে হয়েছিল নাথুরাম গডসের বিচার?
মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী
রাও বীরেন্দরের সরকার মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী হয়েছিল। তিনি ২ নভেম্বর, মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। হরিয়ানা বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৬৮ সালে ফের হরিয়ানায় নির্বাচন হয়। গয়ালাল তাঁর বাকি রাজনৈতিক জীবনে বারবার দল বদলান। কখনও যুক্তফ্রন্ট, কখনও আর্য সভা, কখনও ভারতীয় লোকদল, কখনও আবার জনতা পার্টিতে যোগ দেন। আর, তাঁর এই দলবদলের কিসসা, 'আয়া রাম গয়া রাম' নামে ভারতীয় রাজনীতির একটা শব্দগুচ্ছ হয়ে ওঠে। যদিও দলবদল, গয়া লালের আগে থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে ছিল। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৫১ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৬৭ সালের চতুর্থ নির্বাচনের মধ্যে, ৫৪২ জন বিধায়ক তাঁদের রাজনৈতিক আনুগত্য বদল করেছিলেন। ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৬৮ সালের মার্চ পর্যন্ত শুধুমাত্র ১২ মাসেই ৪৩৮টি দলত্যাগের ঘটনা ঘটেছিল।