Advertisment

মমতার অ্যাকশন, নবীনের প্রতিশ্রুতি, তবু মহিলা সংরক্ষণ সেই তিমিরেই

প্রশাসনে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ কী কী ধরনের সুবিধা এবং অসুবিধা তৈরি করতে পারে, দু ধরনের মতামতই লিপিবদ্ধ করা হয় তখন। মহিলা সমাজকর্মীরা সংরক্ষণের পক্ষে দাঁড়ালেও, মহিলা আইনপ্রণেতারা এর বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
TMC announces 17 women candidate out of 42 in west bengal

তৃণমূল কংগ্রেসের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৭টি আসনে প্রার্থী হচ্ছেন মহিলারা

৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এর মধ্যে ১৭টি অর্থাৎ ৪০ শতাংশের বেশি আসনে মহিলা প্রার্থী দিয়েছে তারা। দু দিন আগেই ওড়িশার শাসক দল বিজেডি ঘোষণা করেছে তারা লোকসভায় ৩৩ শতাংশ আসনে মহিলা প্রার্থী দেবে। মমতার ঘোষণা একবারের টিকিট বিতরণে। অন্যদিকে লোকসভা ও বিধানসভায় ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিনের দাবি প্রথমবার প্রয়োগ করতে চলেছে বিজু জনতা দল।

Advertisment

স্বাধীনতার আগে

মহিলাদের জন্য রাজনৈতিক সংরক্ষণের প্রসঙ্গ আসে ১৯২০ সালে। কিন্তু নারী-পুরুষের সমানাধিকারের প্রসঙ্গ এনে এই ভাবনাকে বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়। এ ভাবনা সমর্থন পায় ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মত দলগুলির থেকেও।

আরও পড়ুন, সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ: কারা অভিযুক্ত, কী ছিল চার্জশিটে

সাতের দশক

সাতের দশকে এ বিষয়টি ফের সামনে আসে। কমিটি অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উওম্যান ইন ইন্ডিয়া (সিএসডবলুআই) টোয়ার্ডস ইকোয়ালিটি নামের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে দেখানো হয়েছিল মহিলারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কীভাবে পিছিয়ে রয়েছেন এবং তাঁরা কী কী ধরনের অসাম্যের মুখে পড়ছেন। প্রশাসনে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ কী কী ধরনের সুবিধা এবং অসুবিধা তৈরি করতে পারে, দু ধরনের মতামতই লিপিবদ্ধ করা হয় তখন। মহিলা সমাজকর্মীরা সংরক্ষণের পক্ষে দাঁড়ালেও, মহিলা আইনপ্রণেতারা এর বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেন।



সংরক্ষণের পক্ষে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বলেছিলেন এর ফলে পুরুষ আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক দলগুলিতে মহিলাদের প্রবেশ সহজ হবে, এবং উচ্চ পর্যায়ে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। তেমনটা হলে ওই মহিলারা মহিলাদের ইস্যু নিয়ে সরব হতে পারবেন এবং প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে পারবেন। যাঁরা এ বিষয়টির বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের যুক্তি ছিল, সমতার ধারণা সংবিধানেই রয়েছে, এবং মহিলাদের স্বার্থ অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং রাজনৈতিক স্বার্থের থেকে পৃথক করা যায় না। তবে প্রত্যেকেই একটা বিষয়ে একমত হয়েছিলেন, যে গ্রামীণ এলাকায় মহিলাদের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর পরেই মহিলা পঞ্চায়েত বিধিবদ্ধ করার প্রস্তাব দেয় সিএসডবলুআই।

নয়ের দশক

মহিল কোটা নিয়ে বিতর্ক ফের মাথা চাড়া  দেয় ১৯৯০-এ। ন্যাশনাল পার্সপেক্টিভ প্ল্যান (এনপিপি) পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদে ৩০ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণের প্রস্তাব দেয়। ১৯৯৩ সালে সংবিধানের ৭৩ ও ৭৪ তম সংশোধনীতে দেশ জুড়ে গ্রামীণ ও শহর এলাকায় স্থানীয় পর্যায়ে এক তৃতীয়াংশ মহিলা সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।



১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে মহিলা সংগঠনগুলি সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির কাছে বিধানসভা ও লোকসভায় আসন সংরক্ষণের দাবি সমর্থনের আবেদন জানায়। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এ দাবি সমর্থন করলেও আইন হিসেবে তা সংসদে পাশ হয়নি। এ প্রচেষ্টা ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালেও হয়েছে, তবে প্রতিবারই তা ব্যর্থ হয়।

২০০৮

২০০৮ সালের মে মাসে ইউপিএ সরকার সংবিধানের ১০৮ তম সংশোধনী হিসেবে মহিলাদের সংরক্ষণের প্রস্তাব দেয়। ২০১০ সালে তা রাজ্যসভায় পাশ হয়, কিন্তু লোকসভায় তা খারিজ হয়ে যায়। এ নিয়ে বিতর্ক শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। বিলোর বিরোধীরা বলেন, এ বিল পাশ হলে শেষ পর্যন্ত উঁচু জাতের মহিলারা সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাবেন, এবং আসলে তাঁরা পুরুষদের প্রতিনিধিত্বই করবেন। ২০১৪ সালে পঞ্চদশ লোকসভার মেয়াদ শেষ হলে সে বিল তামাদি হয়ে যায়।

২০১৯

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে রাজ্য সভার মহিলা সদস্যরা সরকারের কাছে এ বিল লোকসভায় পাশ করার আর্জি জানান। বিজেডি দীর্ঘদিনের এই দাবি বাস্তবায়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

Read the Full Story in English

Explained
Advertisment