নাবালকদের বিরুদ্ধে হওয়া যৌন অপরাধের রিপোর্ট জানাতে ব্যর্থতাও একটি জামিনযোগ্য অপরাধ। সম্প্রতি এমনটাই রায় দিয়েছে হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্ট।
যা রায় দিয়েছেন বিচারপতি
বিচারপতি রাকেশ কাইন্থলারের সিঙ্গল বেঞ্চ এক হোটেল ম্যানেজারকে গ্রেফতারের আগে জামিনের আবেদনে সম্মতি দিয়েছে। ওই হোটেল ম্যানেজার একজন নাবালকের বিরুদ্ধে হওয়া সংঘটিত অপরাধের রিপোর্ট জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা (পকসো) দেওয়ার আইন, ধারা ২১ অনুযায়ী, নাবালকের বিরুদ্ধে অপরাধ হলে তা জানানো বাধ্যতামূলক। বিচারপতি জানিয়েছেন, যেহেতু এই আইনে অপরাধ জামিনযোগ্য কি না সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি, অপরাধ অবশ্যই, 'ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিচার করা হবে। সিআরপিসির অধীনে অপরাধের শ্রেণিবিভাগে স্পষ্ট বলা আছে, তিন বছরের কম কারাদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধগুলি জামিনযোগ্য। পকসো আইনের ধারা ২১-এ ৬ মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান দিয়েছে। সেই কারণে এটি একটি জামিনযোগ্য অপরাধ।'
এই মামলায়
বর্তমান মামলার প্রধান আসামি গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক হোটেলে নাবালিকা স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে সেই ভিডিও রেকর্ড করেছিল। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩৭৬ (ধর্ষণ) এবং ৫০৬ (ফৌজদারি ভয় দেখানো) এবং সঙ্গে পকসো আইনের ৬ এবং ২১ ধারার অধীনে মামলা করেছিল পুলিশ। এক্ষেত্রেই যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের রিপোর্ট করতে ব্যর্থতার শাস্তির প্রসঙ্গ এসেছে। এমনিতেই পকসো আইনের অধীনে শিশুনিগ্রহের রিপোর্ট বাধ্যতামূলক। যে হোটেলে অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল সেই হোটেল কর্তৃপক্ষের নামও তাই এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে।
পকসো এবং বাধ্যতামূলক অভিযোগ দায়ের
পকসো আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে পকসোর আওতায় আসে, এমন কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে বা হতে পারে বলে আশঙ্কা থাকলে বিশেষ জুভেনাইল পুলিশ ইউনিট (এসজেপিইউ) বা পুলিশকে তা জানাতে হবে। পুলিশ এক্ষেত্রে যে কোনও ব্যক্তি, এমনকী একটি শিশুর থেকেও অপরাধের রিপোর্ট নিতে পারে। এই রিপোর্টিং বা অভিযোগ দায়ের, পকসো আইনের ২১ ধারার অধীনে বাধ্যতামূলক। তার সঙ্গে, অপরাধের অভিযোগ জানাতে ব্যর্থ হলেও ১৯ ধারার অধীনে শাস্তির বিধানের কথা বলা আছে। এর মধ্যে ধারা ২১-এর অধীনে ছয় মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। তবে, অভিযোগ জানাতে ব্যর্থতার জন্য শিশুদের দায়ী করা যাবে না। একইভাবে, শিশুরা মিথ্যা অভিযোগ করলে বা মিথ্যা তথ্য দিলেও ধারা ২২-এর সাজা থেকে রেহাই পায়।
আরও পড়ুন- উত্তরাখণ্ডে টানেল ধসের কারণ কী, কীভাবেই বা তা এড়ানো যেত?
সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছে?
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছে, এই ধরনের ঘটনার রিপোর্ট না-করা একটি গুরুতর অপরাধ। ২০১৩ সালে, শংকর কিসানরাও খাদে বনাম মহারাষ্ট্র রাজ্য মামলায় সুপ্রিম কোর্ট-এর দুই বিচারপতির বেঞ্চ রায় দিয়েছিল যে, 'যে কোনও যৌন নিপীড়ন একটি গুরুতর অপরাধ। ১৮ বছরের কমবয়সি নাবালক যৌননিগ্রহের শিকার হয়েছে, তা জানার পরও সেই অপরাধের রিপোর্ট না-করা গুরুতর অপরাধের মধ্যেই পড়ে। এই রায়ে বলা হয়েছে, চিকিৎসক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের, নিকটতম জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড বা বিশেষ জুভেনাইল পুলিশ ইউনিটে শিশুদের প্রতি হওয়া যৌন নির্যাতনের অভিযোগগুলো জানাতে হবে।