Manipur communities and politics: মণিপুর বিধানসভার সদ্য সমাপ্ত অধিবেশন চলাকালীন, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেছেন যে রাজ্যের জেলাগুলোর পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। ওকরাম ইবোবি সিং-এর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার ২০১৬ সালে 'রাজনৈতিক স্বার্থে' সাতটি নতুন জেলা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ২০১৬ সালের ঘটনাটি মণিপুরে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষ করে নাগারা ব্যাপারটা পছন্দ করেনি। ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল এবং অন্যান্য নাগা গোষ্ঠীগুলো মণিপুরের দিকে যাওয়া দুটি মহাসড়ক ১৩৯ দিন অবরোধ করে রেখেছিল। যাইহোক, এই পদক্ষেপে নাগা গোষ্ঠীগুলো একবছর পরে, ২০১৭ সালে মণিপুর নির্বাচনের আগে কুকি-জোমিদের থেকেও সমর্থন পেয়েছিল। পার্বত্য রাজ্য একবছরেরও বেশি সময় ধরে মেইতিস এবং কুকি-জোমিদের মধ্যে জাতিগত সংঘাতের জেরে উত্তপ্ত ছিল। যার ফলে, বীরেন সিং সরকারও জেলাগুলো পুনর্গঠনের রাস্তায় এগোতে পারেনি।
২০১৬ সালে কী পরিবর্তন হয়েছিল?
প্রশাসনিক দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা এবং স্থানীয়দের দীর্ঘস্থায়ী দাবির উল্লেখ করে, ইবোবি সিং সরকার, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে রাজ্যের নয়টি জেলার মধ্যে সাতটি ভাগ করে নতুন জেলা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পুনর্গঠনের আগে মেইতি-সংখ্যাগরিষ্ঠ উপত্যকায় চারটি জেলা ছিল- ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবাল এবং বিষ্ণুপুর। আর, উখরুল, সেনাপতি, চান্দেল, তামেংলং এবং চুরাচাঁদপুরের অবশিষ্ট পাঁচটি জেলা ছিল আদিবাসী-সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্বত্য জেলা। চুরাচাঁদপুরে কুকি-জোমি উপজাতির আধিপত্য ছিল। বাকি চারটি জেলা ছিল নাগা অধ্যুষিত। পুনর্গঠনে চুরাচাঁদপুর, কামজং, নোনি থেকে ফেরজাউল জেলা তৈরি হয়েছে। উখরুল, তামেংলং এবং চান্দেল থেকে তৈরি হয়েছিল টেংনুপাল। একটি নতুন জেলা কাকচিং উপত্যকায় তৈরি হয়েছে। রাজ্যের পশ্চিমের অধিকাংশ অংশে ইম্ফল পূর্বের একটি ভৌগলিকভাবে অ-সংলগ্ন অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছে জিরিবাম জেলা। সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় ছিল রাজ্যের সদর পাহাড় অঞ্চলের নাগা-অধ্যুষিত সেনাপতি জেলা থেকে কুকি-জোমি অধ্যুষিত কাংপোকপি জেলা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন- কয়েকদিন ধরে অবাধে লুঠতরাজের শিকার! স্বাধীন করেও বাংলাদেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিন্দুরা?
মণিপুরের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন?
২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে, ২০০২ সাল থেকে মণিপুরে ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের প্রাক্তন সহ-সভাপতি বীরেন সিং-সহ বিশিষ্ট নেতারা দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে ইনার পারমিট লাইন (আইপিএল) শাসন চালুর জন্য মণিপুর বিধানসভায় পাস করা তিনটি বিলকে কেন্দ্র করে ওকরাম ইবোবি সরকার পাহাড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে পড়েছিল। যার ফলে চুরাচাঁদপুরে আট জন নিহত হয়েছিলেন। আইপিএল শেষ পর্যন্ত ২০২০ পর্যন্ত বহাল ছিল। কারণ, উপজাতি গোষ্ঠীগুলি আইপিএল প্রত্যাহারের বিরোধিতা করেছে। উপজাতিদের আশঙ্কা ছিল, আইপিএল প্রত্যাহার হলে, তাদের সাংবিধানিক সুরক্ষা কমে যাবে। সেই আশঙ্কা থেকেই নতুন জেলা নিয়ে বিরোধিতা আজও চলছে। ইতিমধ্যে, মণিপুরের জাতিহিংসার পরে, কুকি-জোমি গোষ্ঠীগুলো তাদের এলাকার জন্য একটি পৃথক প্রশাসনিক শাসনের দাবি জানিয়েছে। জমি নিয়ে নাগাদের উদ্বেগও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে, জেলার সীমানাগুলো 'প্রকৃত প্রশাসনিক সুবিধা'র ভিত্তিতে এবং নাগরিক গোষ্ঠী এবং উপজাতির নেতাদের সঙ্গে পরামর্শের পরে পুনর্গঠিত হবে।