দক্ষিণ ইম্ফলের সভা থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলিকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারির সভায় তাঁর বক্তব্য ছিল, এই অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্র আলোচনায় প্রস্তুত। মণিপুরের উন্নয়নের স্বার্থে এমনটা জরুরি, বলেছেন রাজনাথ।
মণিপুরের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের পটভূমি কী?
মণিপুরের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলির মাথাচাড়া দেওয়ার কাহিনি বেশ পুরনো। মূল ছবিটা ১৯৬৪ সালে দানা বাঁধে। তৈরি হয় ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট বা ইউএনএলএফ। যারা এখনও এই ভূখণ্ডে জঙ্গি সংগঠনের তকমা বয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এর মূল সমস্যা ভারতভুক্তিতে। ভারতের সঙ্গে আসতে প্রথমিক ভাবে নিমরাজি ছিল এই ভূখণ্ড। কিন্তু জোর করে কার্যসিদ্ধি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ভারতের সঙ্গে আসার পর, তাদেরকে পূর্ণরাজ্যের মর্যাতে দিতে দেরি হয়েছে অনেক। এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিদ্রোহের প্রথম বহ্নিশিখাটা।
এখানে বলে নিই মণিপুরের ভারত-ভুক্তি ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর। রাজ্য হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ এই তো সেই দিন, ১৯৭২ সালে। ক্রমে একের পর জঙ্গি সংগঠন এই অঞ্চলে মাথা চাড়া দিতে থাকে। পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ, পিপলস রেভলিউশনারি পার্টি অফ কাংলেইপাক (PREPAK), কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি (KCP), কাংলেই ওয়াওল কান্না লুপ (KYKL) ইত্যাদি। উপত্যকা-নির্ভর মাথাতোলা জঙ্গি সংগঠন মণিপুরের স্বাধীনতা চেয়ে আসছে। নাগাল্যান্ডে যে নাগা আন্দোলন, তা মণিপুরের পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
এমএসসিএন-আইএম এই অঞ্চলের নিয়ন্তা। তারা নাগালিম মানে বৃহত্তর নাগাল্যান্ডের দাবি জানিয়ে আসছে। যা মণিপুরের অখণ্ডতার পক্ষে চিন্তাজনক। নানা সময়, মণিপুরে সন্ত্রাস মাথা তুলেছে। সংঘর্ষ হয়েছে, গোলাগুলি চলেছে, মৃত্যুমিছিল, রক্তস্রোতের মুখোমুখি হয়েছে এই রাজ্য।
১৯৮০ সালে, কেন্দ্র এই অঞ্চলকে উপদ্রুত এলাকা বা ডিস্টার্বড এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। এবং সেখানে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট (AFSPA) বা সেনা বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন জারি করে। বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি আন্দোলনের মাথা কাটাই ছিল এর উদ্দেশ্য।
সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তি
১৯৯৭ সালে, ওই বছর এনএসসিএন-আইএম এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ-বিরোধী চুক্তি হয়। কিন্তু তার পরেও দু'তরফের মধ্যে শান্তি নিয়ে আলোচনা চলেই যাচ্ছে।
২০০৮ সালের ২২ অগাস্ট, কুকিদের দুটি সংগঠন কুকি ন্যাশনাল অরগানাইজেশন (KNO) এবং ইউনাইটেড পিপলস ফ্রন্ট (UPF)চুক্তি করে কেন্দ্রের সঙ্গে। সাসপেনশন অফ অপারেশন স্বাক্ষরিত হয় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে। কুকিদের দলগুলির মধ্যে ১৭টি রয়েছে কুকি ন্যাশনাল অরগানাইজেশন এবং আটটি ইউনাইটেড পিপলস ফ্রন্টের ছাতার তলায় রয়েছে, মানে, সংগঠনের সংখ্যা ২৫।
উপত্যকায় প্রধান জঙ্গি সংগঠনগুলি যেমন ইউএনএলএফ, পিএলএ, কেওয়াইকেএলের মতো সংগঠন সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষ বিরতিতে সাক্ষর করেছে।