কেন্দ্রীয় সরকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের এসপিজি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মনমোহন সিংকে এখন জেড প্লাস নিরাপত্তা দেবে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আওতাধীন সাতটি নিরাপত্তা বাহিনী, অর্থাৎ আসাম রাইফেলস, বিএসএফ, সিআরপিএফ, সিআইএসএফ, এনএসজি, আইটিবিপি এবং এসএসবি।
এসপিজি ও এসপিজি আইন
১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী নিজের দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হওয়ার পর, রাজীব গান্ধী সরকার প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ক্যাডার তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তারি করে দেওয়া কমিটির সুপারিশ মেনে এব্যাপারে একটি ইউনিট তৈরি হয়, যার মাথার উপর ছিল ক্যাবিনেট সচিবালয়। এই ইউনিট প্রথমে স্পেশাল প্রোটেকশন ইউনিট হিসেবে পরচিত হলেও, ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে এর নয়া নামকরণ হয় স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ বা এসপিজি।
আরও পড়ুন, ভারতীয় নাগরিক কারা? কীভাবে তা স্থির করা হয়?
এরই পাশাপাশি সংসদে পাশ হয় এসপিজি আইন, যা ১৯৮৮ সালের জুন মাসে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হয়। ওই আইনে দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জন্য সশস্ত্র এক বাহিনীর সংবিধান ও নিয়মকানুন প্রবর্তনের কথা বলা হয়।
এসপিজি আইনে প্রত্যক্ষ নিরাপত্তা বলতে বোঝানো হয়েছে, নিরাপত্তা প্রদান করা হবে খুব কাছ থেকে, রেলপথ, সড়কপথ, আকাশপথ, জলপথ, পায়ে হেঁটে বা অন্য যে কোনওয় উপায়ে পরিবহণের সময়ে এবং কোনও অনুষ্ঠানে বা বাড়িতে বা অন্য কোথাও।
রধানমন্ত্রী ছাড়াও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের এসপিজি নিরাপত্তা প্রদানের আইনি সংশোধনী আনা হয় ১৯৯১ সালের মে মাসে, রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডের পর।
১৯৮৯ সালে লোকসভা ভোটে হারার পর এসপিজি নিরাপত্তা প্রত্যাহৃত হয় রাজীব গান্ধীর। ১৯৯৪ ও ১৯৯৯ সালেও এ আইন সংশোধিত হয়। পিভি নরসিমা রাও তখন সবে প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সে সময়ে সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ রায় দেয় এসপিজি আইন অত্যন্ত বিশেষ প্রকৃতির আইন এবং একই সঙ্গে প্রত্যক্ষ নিরাপত্তার লক্ষ্য সংজ্ঞায়িত করে।
আরও পড়ুন, কেন মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮, ছেলেদের ২১?
আদালত বলে, ... সংসদের উদ্দেশ্য এই আইনে স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন এবং এখানে কোনও রকম প্রত্যাহার বা সীমাবদ্ধতার অবকাশই নেই।
এসপিজি প্রহরীদের ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পাশে সর্বদা দেখা যায়। ওঁরা গরমে সাফারি স্যুট পরেন ও শীতকালে পরেন ফর্মাল জ্যাকেট। এঁরা চোখে রিফ্লেক্টিভ সানগ্লাস পরেন। এঁদের কানে থাকে যোগাযোগের জন্য ইয়ারপ্লাগ। এঁদের অস্ত্র লুকোন থাকে।
নিরাপত্তার বিভাগ
এসপিজি ছাড়াও ভারতের ভিআইপিদের অন্য নিরাপত্তা বাহিনীও সুরক্ষা দিয়ে থাকে। নিরাপত্তার মাত্রা স্থির হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর হামলার আশঙ্কা কীরকম তার উপর নির্ভর করে।
উচ্চতম পর্যায়ের নিরাপত্তা হল জেড প্লাস নিরাপত্তা। এর পর রয়েছে জেড, ওয়াই ও এক্স ক্যাটিগরির নিরাপত্তা। নিরাপত্তার পর্যায় যত উঁচু, নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা তত বেশি। ২৪ - ৩৬ জন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী থাকেন জেড প্লাস ক্যাটিগরিতে। জেড ক্যাটিগরিতে থাকেন ১৬ থেকে ২০ জন নিরাপত্তারক্ষী।
আরও পড়ুন, পাক সেনাপ্রধান বাজওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধি কী ইঙ্গিত করে?
যাঁদের উপর হামলার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি, সেই ভিআইপিদের সুরক্ষার জন্য থাকেন এনএসজি-র এলিট ব্ল্যাক ক্যাট কম্যান্ডোরা।
নিরাপত্তা প্রত্যাহার
মনমোহন সিংয়ের নিরাপত্তা প্রত্যাহার নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে বটে, তবে বিভিন্ন সরকারই বিভিন্ন সময়ে ভিআইপিদের নিরাপত্তা কমিয়েছে বা বাড়িয়েছে। তাঁদের মধ্যে রাজনীতিবিদরাও রয়েছেন। এই বৃদ্ধি বা হ্রাস নির্ভর করে তাঁদের উপর হামলার আশঙ্কার বাড়বৃদ্ধির উপর।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৫ স্লের অগাস্ট মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ৩০ জনের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিণ্ডের পরিবার, প্রাক্তন লোকসভা অধ্যক্ষ মীরা কুমার ও ২জি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত এ রাজা সহ বেশ কয়েকজন প্রাক্তন মন্ত্রী।
তারও আগে, ২০০৯ সালে চিদাম্বরম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, সে সময়ে সরকার জেড ও জেড প্লাস নিরাপত্তাপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজনের নিরাপত্তা ওয়াই ক্যাটিগরিতে নামিয়ে আনে ও এক্স ক্যাটিগরির নিরাপত্তাপ্রাপ্ত কয়েকজনের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেয়।
Read the Full Story in English