বিশ্ব এখন জ্বলন্ত সূর্যের নীচে পুড়ছে। গত মাস পৃথিবী উষ্ণতম জুনের সাক্ষী হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি যা, তাতে এই জুলাই শতকের সবচেয়ে উষ্ণতম মাসে পরিণত হতে পারে। উত্তপ্ত তাপমাত্রা, বিভিন্ন অঞ্চলে চরম তাপ সতর্কতা, দাবানল এবং বায়ুর গুণমানের হ্রাস হওয়া বর্তমান পরিবেশের নানা সমস্যাগুলোর অন্যতম। তার মধ্যেই উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কেবল ভূপৃষ্ঠই যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তা-ই নয়। গোটা বিশ্বেই সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রাও বেশ বেড়েছে। এমনকী, সেই তাপমাত্রা পৃথিবীর দীর্ঘদিনের তালিকাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে।
সামুদ্রিক তাপ-তরঙ্গের জন্ম
এপ্রিল মাসেই সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ২১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। যা ২০১৬ সালের ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ডকেও ভেঙে দিয়েছে। আর, তারপর থেকে সমুদ্রের তাপমাত্রা রেকর্ড-উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে। যা বিশ্বজুড়ে সামুদ্রিক তাপ তরঙ্গের (এমএইচডব্লিউএস) জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে এমএইচডব্লিউএস উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ গোলার্ধ এবং প্রশান্ত মহাসাগর, উত্তর-পূর্ব আটলান্টিক, গ্রীষ্মমন্ডলীয় উত্তর আটলান্টিক এবং ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে এমনটাই জানিয়েছে বিজ্ঞান সংস্থা মার্কেটর ওশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল।
প্রভাব ফেলতে পারে
এমএইচডব্লিউএস সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এবং মানুষ, উভয়ের ওপরই প্রভাব ফেলতে পারে। এর জেরে বেশ কয়েকটি সামুদ্রিক প্রজাতির মৃত্যু ঘটতে পারে। তাদের স্থানান্তরের ধরণ পরিবর্তন করতে পারে, প্রবাল ব্লিচিং হতে পারে এবং এমনকী আবহাওয়ার ধরণও প্রভাবিত হতে পারে। শুধু তাই নয়, এমএইচডব্লিউএস ঝড়কে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এর বিপর্যয়কর পরিণতিগুলো আরও খারাপ হতে চলেছে। কারণ, পৃথিবী ক্রমাগত উষ্ণ হয়ে উঠছে। ফলে, সামুদ্রিক তাপ-তরঙ্গ বা এমএইচডব্লিউএস আরও তীব্র এবং দীর্ঘতর হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন- মণিপুর হিংসা: কী এই জিরো এফআইআর, কেন দায়ের হয়?
সামুদ্রিক তাপ তরঙ্গ কী?
একটি সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ একটি চরম আবহাওয়া ঘটনা। এটি সেই সময় ঘটে, যখন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমুদ্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমপক্ষে পাঁচ দিনের জন্য গড় তাপমাত্রার থেকে ৩ বা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়। মার্কিন সরকারি এজেন্সি ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) অনুসারে সামুদ্রিক তাপ-তরঙ্গ একসপ্তাহ, একমাস এমনকী একবছর ধরেও চলতে পারে।