একা রামে রক্ষে নেই সুগ্রীব দোসর! করোনাভাইরাসের দাপটে সংক্রমণ-মৃত্যুর হারে এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে বিশ্বের। এরই মধ্যেই মহাকাশ দূষণের খবর আসতেই আতঙ্ক বাড়ল। মঙ্গল গ্রহে একের পর এক অভিযানের কোপ এবার পড়তে চলেছে পৃথিবীতেও। এমনটাই জানিয়েছে বিজ্ঞানীমহল।
মঙ্গলে প্রাণ আছে কি না, কিংবা জলের খোঁজ পেতে মার্কিন মুলুকই প্রথম দেশ যারা ১৯৭৫ সালে মঙ্গলের বুকে পদার্পণ করেছিল। এরপর মঙ্গলের বায়বীয় স্তরে স্যাটেলাইট বসানো থেকে মার্স মিশন সবস্তরেই সাফল্য পেয়েছে নাসা। জুলাইয়ের ৩০ তারিখ আরেকটি রকেট পাঠানোর কথা রয়েছে। সেটির ল্যান্ড সফল হলেই মঙ্গল অভিযানে ১০ বারের জন্য সাফল্য অর্জন করবে নাসা। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তিয়ানোয়েন-১ (Tianwen-1) পাঠিয়েছে চিন। লালগ্রহের মাটিতে নয় আকাশে ল্যান্ড করবে এই উপগ্রহ। মহাকাশে শক্তিবৃদ্ধি করতে সংযুক্ত আরব-আমীরশাহীও সোমবার আল-আমাল রকেট পাঠায় যা মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের বিস্তারিত তথ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে।
বিজ্ঞানীদের ভয়ের জায়গা তবে কোনটা?
মহাকাশে গবেষণা শুরুর দিকে এই চিন্তা করতে হয়নি ওয়াকিবহাল মহলকে। কিন্তু বিশ্বের সবদেশই বিজ্ঞানের অগ্রগতির হাত ধরে যেভাবে মঙ্গল কায়েম করতে চাইছে তাতে 'অমঙ্গলের' সম্ভাবনাই প্রকট এমনটাই মত মহাকাশ গবেষকদের। মঙ্গলে পরপর অবতরণে বহির্বিশ্বে দূষণ বৃদ্ধির প্রমাদ গুনছেন গবেষকরা। এমনকী এই দূষণ যে ইতিমধ্যেই সংক্রমিত হবে আপন গ্রহে সে ব্যাপারে নিশ্চিত সুরও শোনা গিয়েছে তাঁদের গলায়।
পৃথিবীতে কীভাবে এর কোপ পড়তে পারে?
মহাকাশ গবেষকরা জানিয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে মঙ্গলে অবতরণ প্রক্রিয়া বেড়েছে সেখানে দু ধরনের দূষণ হচ্ছে। এক ফরোয়ার্ড কন্টামিনেশন অর্থাৎ পৃথিবী থেকে পাঠানো রকেটের অংশ এবং অন্যান্য জীবাণু মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ছে। আরেকটি হল- ব্যাক কন্টামিনেশন অর্থাৎ মহাকাশে অবস্থিত জীবাণুরা (যদি কিছু থেকে থাকে) তারা পৃথিবীতে চলে আসছে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এতদিন ধরে মহাকাশ গবেষণা চলেছে, কত মহাকাশচারীরা ফিরেছেন সফলতা অর্জন করে, সেরকম কোনও প্রভাব তো পৃথিবীতে পড়েনি। তবে আজ কেন মঙ্গল অভিযানে ভয় বাড়ছে? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন এটা ভুলে গেলে চলবে না মঙ্গল গ্রহে জলের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে লালগ্রহে 'টলটলে জল' না থাকলেও H2O-এর উপস্থিতি যে সেখানে ছিল সে তথ্য হাতে এসেছে নাসার। আর জল মানেই জীবন থাকা। বৃহদাআকার না হোক ক্ষুদ্রাকার জীবাণু যে নেই এ কথা কেউই হলফ করে বলতে পারে না। তাই চিন্তার কারণ দেখা দিয়েছে সেই ক্ষেত্রটিতেই। মঙ্গলের সেই সব 'প্রাণ' যদি এই সব মিশনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে প্রবেশ করে তবে তা কতখানি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে তা ভেবেই শিউরে উঠছেন গবেষকমহল।
এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কতটা?
সম্ভাবনা যে একেবারে নেই তা উড়িয়ে দিচ্ছে না নাসা। বিজ্ঞান ভিত্তিক যে তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে সেই দিয়েই আগামী পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে তাঁরা। পরবর্তী মঙ্গল অবতরণ প্রজেক্ট হল মার্স স্যাম্পেল রিটার্ন মিশন। মঙ্গলে পাঠানো রোবট লালগ্রহের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নমুনা সংগ্রহ করতে শুরু করে দিয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যেই পৃথিবীতে পাঠানো হবে সেই সব নমুনা। তবে সেই সব নমুনার সংরক্ষণ হবে সব সুরক্ষা মেনেই। তাই করোনার মতো বিপর্যয় ঘটাবে মঙ্গলের নমুনা একাংশের এই দাবি আপাতত সরিয়ে রাখছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। তবে কোনও কারণে যদি কন্টামিনেশন শুরু হয় সেক্ষেত্রে শত স্যানিটাইজেশন, স্টেরেলাইজেশনে রুখতে পারা যাবে না সে বিপদ।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন