কানাডায় ভারতীয়দের বিরুদ্ধে 'বিদ্বেষমূলক অপরাধ, সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ বাড়ছে দ্রুতগতিতে।' এমনই তথ্য হাতে এসেছে বিদেশ মন্ত্রকের। সেই তথ্য উল্লেখ করে বিদেশ মন্ত্রক (MEA) শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় নাগরিক এবং কানাডায় থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পরামর্শ (পড়ুন নির্দেশিকা) জারি করেছে। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, 'কানাডায় প্রবাসী ভারতীয় নাগরিক, ভারত থেকে কানাডায় আসা পড়ুয়া, পর্যটন ও শিক্ষামূলক ভ্রমণে আগ্রহীরা যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করুন ও সতর্ক থাকুন।'
হঠাৎ কানাডায় কী ঘটল?
কানাডায় সম্প্রতি 'খালিস্তান'-এর পক্ষে একটি গণভোট হয়েছে। পাশাপাশি, একটি হিন্দু মন্দির ভাঙচুর হয়েছে। সেই সব খবর গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর এনিয়ে মুখ খুলেছে বিদেশ মন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানান, 'মৌলবাদী ও চরমপন্থীরা কানাডায় গণভোটের নামে প্রহসন চালিয়েছে।' তিনি জানান, কানাডা সরকারকে ব্যাপারটা জানানো হয়েছে। কানাডা জানিয়েছে, তারা ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে। আর, এই ধরনের গণভোট এবং মৌলবাদী শক্তিকে তারা প্রশ্রয় দেবে না। তার পরও বাগচি বলেন, 'বন্ধুদেশে মৌলবাদীরা এভাবে চরমপন্থী আচরণের অনুমতি পাবে, এটা অত্যন্ত আপত্তিকর। এসব বন্ধ করার জন্য কানাডাকে চাপ দেবে ভারত সরকার।'
মন্দিরে হামলা হয়েছে?
চলতি মাসের গোড়ার দিকে, টরন্টোর BAPS স্বামীনারায়ণ মন্দিরকে 'ভারত-বিরোধী' গ্রাফিতি দিয়ে বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কানাডার অটোয়াতে ভারতের হাইকমিশন টুইট করে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। একইসঙ্গে কানাডা কর্তৃপক্ষকে ঘটনার তদন্ত করার অনুরোধ করেছে।
কানাডায় ভারতীয়দের ইতিহাস
ভারতীয়রা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কানাডায় যাতায়াত করছে। এই দেশে এক বিশাল সংখ্যক ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাস করেন। যা বিশ্বে প্রবাসী ভারতীয়দের বৃহত্তম বাসস্থান। কানাডা আজ অনেক ভারতীয় ছাত্ররই উচ্চশিক্ষার জন্য পছন্দের গন্তব্যস্থল। প্রায় ৬০ হাজার ভারতীয় পড়ুয়া চলতি বছরে ইতিমধ্যেই কানাডায় পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ভারতীয় পড়ুয়াদের দ্বিতীয় পছন্দ কানাডা।
শিখদের সংখ্যাই বেশি
কানাডায় প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে পাঞ্জাবি শিখদের সংখ্যাই বেশি। কানাডার ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ, কানাডা (আইআরসিসি)-র মত সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে বলা যায় যে, কানাডায় যাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশই ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা।
খালিস্তানকে সমর্থন
বছরের পর বছর ধরে, পাঞ্জাবি শিখ সম্প্রদায় কানাডায় একটি ধনী এবং রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। এই সম্প্রদায়ের একাংশ কয়েক দশক ধরে খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করছে ও অর্থ দিচ্ছে। পাশাপাশি, স্বতন্ত্র খালিস্তানিপন্থীদের আশ্রয়ও দিচ্ছে। ভারত বারবার কানাডার সঙ্গে এনিয়ে কথা বলেছে। বিষয়টি কখনও সখনও কূটনৈতিক ক্ষেত্র বিব্রতকর অবস্থার দিকে গেছে।
আরও পড়ুন- আদিবাসী স্কুলে পড়ুয়াকে অন্তর্বাস পরে থাকতে বাধ্য করলেন শিক্ষক, সাসপেন্ড অভিযুক্ত
ভারতের প্রতিবাদ
২০১৮ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারত সফর করেন। সেই সময়, কানাডার কূটনীতিকরা এক ব্যক্তিকে বিশেষ পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, ভারতের প্রতিবাদে সেই আ আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। কারণ, ওই ব্যক্তি ১৯৮৬ সালে কানাডা সফর চলাকালীন পঞ্জাবের এক মন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত।
সহযোগিতার আশ্বাস কানাডার
জসপাল আটওয়াল নামে ওই পরিচিত খালিস্তানি সমর্থক, আমন্ত্রণ প্রত্যাহারের আগে ট্রুডোর জন্য আয়োজিত দুটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। ট্রুডো অবশ্য পরে বলেছিলেন, 'আমরা ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। তার কখনও আমন্ত্রণ পাওয়া উচিত হয়নি। আমরা তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করেছি। পার্লামেন্টের এক সদস্য ওই ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।'
Read full story in English