Meditation at Kanyakumari’s Vivekananda Rock: কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রকে ধ্যানে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৮৯২ সালে, স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ প্রান্তের এই পাথরে বসে তিন দিন এবং তিন রাত ধ্যান করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার (২৮ মে) ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বিজেপির লোকসভা নির্বাচনী প্রচারের সমাপ্তি চিহ্নিত করতে ৩০ মে থেকে ১ জুন, তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল পরিদর্শন করবেন। আর, সেখানে ধ্যান করবেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের শেষে প্রধানমন্ত্রী উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ মন্দিরে দু'দিনের সফর করেন। সেই সময় তিনি দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা একান্তবাস (ধ্যান) করেছিলেন। কন্যাকুমারীতে ধ্যান করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কারণ কী, এনিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা মত রয়েছে।
যেখানে স্বামী বিবেকানন্দ জ্ঞানলাভ করেছিলেন
বিবেকানন্দ রক হল একটি ছোট পাথুরে দ্বীপ। যা কন্যাকুমারীর ভাভাথুরাই সৈকত থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে অবস্থিত। এই দ্বীপ রয়েছে ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ প্রান্তে। ভারত মহাসাগর, আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সঙ্গমস্থলে। বর্তমানে, ভাভাথুরাই থেকে ১৫ মিনিটের ফেরি পরিষেবার মাধ্যমে এই দ্বীপে যাওয়া যায়। ১৮৯২ সালে শ্রদ্ধেয় হিন্দু দার্শনিক-সন্ত স্বামী বিবেকানন্দ, ধ্যান করার জন্য কন্যাকুমারীর উপকূল থেকে সাঁতার কেটে পাথুরে দ্বীপ বিবেকানন্দ রকে পৌঁছেছিলেন। তাঁর শিষ্যরা বিশ্বাস করেন যে তিনি সেখানে তিন দিন এবং তিন রাত ধ্যান করেছিলেন, আর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ চার বছর ধরে ভারতবর্ষজুড়ে ভ্রমণ করেন। অবশেষে কন্যাকুমারীতে তাঁর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে পান।
স্বামী বিবেকানন্দ রক
স্বামী বিবেকানন্দ এই ব্যাপারে ১৮৯৪ সালে স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে লিখেছিলেন, 'কেপ কোমোরিনে মা কুমারীর মন্দিরে বসে, ভারতীয় পাথরের শেষ অংশে বসে আমি একটি পরিকল্পনা করলাম। আমরা অনেক সন্ন্যাসীরা ঘুরে বেড়াই, মানুষকে নানা বিদ্যা শেখাই— এ সবই পাগলামি। আমাদের গুরুদেব কি বলতেন না, খালি পেট ধর্মের জন্য ভালো নয়? এই দরিদ্র মানুষরা যে পাশবিক জীবনযাপন করছেন, তা কেবল অজ্ঞতার কারণে। আমরা সব যুগে তাদের রক্ত চুষে খেয়েছি। তাঁদের পায়ের তলায় মাড়িয়েছি।' ১৯৬৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মশতবার্ষিকীর প্রাক্কালে, আরএসএস কর্মী একনাথ রানাডের নেতৃত্বে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল কমিটি তাঁর জ্ঞানার্জনের স্থানটিকে স্মরণীয় করে তোলার চেষ্টা করেছিল। ১৯৭০ সালে রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি ওই পাথরের ওপর স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন।
মোদীর সিদ্ধান্তের কারণ
প্রধানমন্ত্রী মোদী দীর্ঘদিন ধরেই স্বামী বিবেকানন্দকে আদর্শ হিসেবে শ্রদ্ধা করেন। যৌবনে তিনি বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনের একটি আধ্যাত্মিক এবং জনহিতকর সংগঠনের সদস্যও ছিলেন। গত বছর মিশনের ১২৫তম বার্ষিকী উদযাপনে বক্তৃতা করতে গিয়ে, মোদী বলেছিলেন, 'ভারতের প্রতি বিবেকানন্দের একটি দুর্দান্ত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। আমি নিশ্চিত যে তিনি গর্বের সঙ্গে ভারতকে এই দৃষ্টিভঙ্গি পূরণে কাজ করতে দেখছেন।' রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের সময়, দক্ষিণ ভারতে বিজেপির প্রসারের কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী মোদী ধ্যান করার জন্য বিবেকানন্দ রক-কে বেছে নিয়েছেন। গত তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মোট সফরের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন দক্ষিণ ভারতে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই প্রধানমন্ত্রী তামিলনাড়ুতে সাতবার সফর করেছেন।
আরও পড়ুন- শেষ দফার নির্বাচন! দিনটা কিন্তু, অন্য কারণে আজও ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ
দক্ষিণে বিজেপির সাফল্য
এমনিতে দক্ষিণের পাঁচটি রাজ্য- কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং কর্ণাটকে মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৩১টি আসন রয়েছে। শুধু তামিলনাড়ুতেই রয়েছে ৩৯টি আসন। দক্ষিণে একক বৃহত্তম দল হিসেবে বিজেপির উত্থানের পূর্বাভাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ২০মে পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে মোদী বলেছিলেন, 'আমরা ইতিমধ্যেই জনগণের মনে বিজেপির জন্য একটি বিশেষ জায়গা খুঁজে পেয়েছি। আমরা এই অঞ্চলে বড় সাফল্য পাব।'