Advertisment

এক শরীরে দুই বা তার বেশি ভ্যাকসিন কি সম্ভব?

Covid-19 Vaccine: ভ্যাকসিনের এই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ কোভিড প্রতিরক্ষাকে প্রকৃতই পোক্ত করে কি না, তারই পরীক্ষা শুরু করার কথা ভাবছে এ দেশ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Covid-19 Vaccine, Covid Vaccine, Coronavirus

ফাইল ছবি

এ ভ্যাকসিনের মুড়ো তো ও ভ্যাকসিনের ল্যাজা। মানে, এক ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ, তো আর এক ভ্যাকসিনের দ্বিতীয়। যদি আপনার শরীরে ঢোকে, তা হলে পুরো হাঁসজারু ব্যাপার, শরীর কি এমনটা মেনে নেবে, না কি বিদ্রোহ ঘোষণা করবে? নানা গন্ডগোল উথালপাথাল কি শুরু হবে না? গবেষকদের অনেকে বলছেন, নাহ-- বরং আপনার শরীরে যদি এমন প্রয়োগ করা হয়, তা হলে সে আরও বেশি কোভিডের বিরুদ্ধে ইমিউনড হবে। ভ্যাকসিনের এই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ কোভিড প্রতিরক্ষাকে প্রকৃতই পোক্ত করে কি না, তারই পরীক্ষা শুরু করার কথা ভাবছে এ দেশ। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই হাঁসজারু প্রক্রিয়াকে হেটেরোলোগাস বলা হয়ে থাকে। ভারতে এখন কোভিশিল্ড, কোভ্যাকসিন, এবং স্পুটনিট-ভি দেওয়া হচ্ছে আলাদা আলাদা ভাবে। মিশ্র পদ্ধতিতে কার সঙ্গে কে মিশবে, তা অবশ্য এখনও অজানা।

Advertisment

ভ্যাকসিন মিশ্রণ বা মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের প্রয়োজনটা কী?

আগেই বললাম, কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, ভ্যাকসিনের এই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের ফলে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ইউমিনিটি আরও বাড়বে। কিন্তু এক ভ্যাকসিনে সমস্যাটা কী? এই সময়ে কোভিডের স্ট্রেনের বাড়বাড়ন্ত, ফলে আপনার ইমিউনিটি এক ভ্যাকসিনে পুরো দস্তুর নাও তৈরি হতে পারে। কিন্তু কেন? শিম্পাঞ্জির শরীর থেকে নেওয়া সাধারণ সর্দিজ্বরের জীবাণু অ্যাডেনোভাইরাসের মাধ্যমে ভাইরাল ভেক্টর পদ্ধতিতে তৈরি ভ্যাকসিন আমাদের প্রিয় কোভিশিল্ড। যা সার্স কোভ-টু বা করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন সৃষ্টি করে শরীরে, ফলে শরীরে তৈরি হয় করোনা-রোধী অ্যান্টিবডি।

কিন্তু একই ধরনের অ্যাডেনোভাইরাস থেকে তৈরি এই ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ডোজে পরিবর্তিত করোনার বিরুদ্ধে পুরো সক্ষমতা হয়তো মিলবে না। এ ক্ষেত্রে অন্য পদ্ধতিতে তৈরি ভ্যাকসিন বা অন্য জাতীয় অ্যাডেনোভাইরাস থেকে তৈরি ভ্যাকসিনের ডোজ শরীরে প্রতিরোধশক্তির ঘাটতি মেটাতে পারে। এই কারণেই স্পুটনিক-ভি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে দুই জাতীয় অ্যাডেনোভাইরাস।

প্রযুক্তি আলাদা, শক্তি বেশি

মিক্স অ্যান্ড ম্যাচে দুটি আলাদা প্রযুক্তিতে তৈরি ভ্যাকসিনের প্রয়োগের জন্য সওয়াল করা হচ্ছে। যেমন ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন কোভিশিল্ডের একটা ডোজ দেওয়ার পর যদি ফাইজারের প্রতিষেধক এমআরএনএ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়, তা হলে নাকি ইমিউনিটি বেশি বাড়বে। অক্সফোর্ড গ্রুপের প্রোফেসর তথা মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ ট্রায়াল Com-COV-এর চিফ ইনভেস্টিগেটর ম্যাথু স্ন্যাপ দ্য ইকোনমিস্ট রেডিও-র পডকাস্টে বলেন, দুই ধরনের ভ্যাকসিনেরই স্পাইক প্রোটিন তৈরির টার্গেট, কিন্তু রাস্তা আলাদা, ফলে দুটির মিশ্র ব্যবহারে প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়বে বৈকি।

আর পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ডা. শ্রীনাথ রেড্ডি বলছেন, বিভিন্ন গবেষণায় স্পষ্ট, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রে কম, এ ক্ষেত্রে আরেকটি ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দিলে আরও অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে শরীর লড়াই চালানোর ক্ষমতা জোটাতে পারে।

ভ্যাকসিনের অভাবেও কাজে আসে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ

এখন ভারতে কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ডের তীব্র অভাব। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সসীমার মধ্যে যাঁরা, সরকারি কেন্দ্রে তাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়া এখন প্রায় বন্ধ। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ পদ্ধতি এই অভাব কিছুটা মেটাতে পারে। ধরা যাক, কোন‌ও একটি ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ মিলছে, অন্য একটির দ্বিতীয়। এই মিশ্র প্রয়োগ হলে দুটিই পেয়ে নিজের কোভিড-প্রতিরোধ যথাসময়ে বাড়াতে পারেন। হা-হুতাশ, অপেক্ষা না করেই।

কতটা সুরক্ষিত?

মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ কতটা সুরক্ষিত? প্রশ্ন কিন্তু বড়সড়। কয়েক মাস হল এই পদ্ধতির পরীক্ষা শুরু হয়েছে কয়েকটি দেশে, ফলে আদৌ আরও ভাল ইমিউনিটি তৈরির কাজে এই প্রয়োগ আসবে কিনা, সেই উত্তরের এখনও বাকি। আবার, কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ আগে নিয়ে তারপর কোভ্যাক্সিন, নাকি উল্টো, তা নিয়েও বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। এরই মধ্যে ২০ মে পূর্ব উত্তরপ্রদেশে কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ দেওয়া গ্রামবাসীদের ভুল করে কোভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে দেওয়া হয়। তা নিয়ে ভয়ানক হইচইও হয়েছে।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ভয়

আন্তর্জাতিক সংস্থা কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন এই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ নিয়ে নাড়াচাড়া করেছে। তারা এর বেশ কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভ্যাকসিনের বিভিন্ন ধরনের স্টোরেজ-পদ্ধতি, আবার কোনও কোনও ভ্যাকসিনের দেখা যাচ্ছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি, আবার কোনওটা বিশেষ কোনও রোগ থাকলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। পাশাপাশি, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজার ভ্যাকসিনের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের ট্রায়ালে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা গিয়েছে ।

রুপোলি রেখা

তবে, ভ্যাকসিনের এই মিশ্র প্রয়োগে এখনও পর্যন্ত কোনও বিশাল সমস্যা সামনে আসেনি, এটাই আশার কথা। ভেলোরের চিকি‍ৎসক তথা প্রথম সারির ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ গঙ্গাদীপ কাঙ্গ বলছেন, আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম অনেক কিছু সামলাতে পারে। আমরা এই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের ছোট ছোট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখছি, কিন্তু বড় কোনও জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে না।

কোভিডের আগে এমন প্রয়োগ হয়েছে?

মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ প্রয়োগ চলছে কয়েক দশক জুড়ে। বিশেষ করে ইবোলার মতো ভাইরাসের ক্ষেত্রে। যদিও বেশির ভাগ কম্বিনেশনেই একই প্রযুক্তিতে তৈরি ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রয়োগে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। ভারতে রোটাভাইরাস ভ্যাকসিনের কম্বিনেশন নিয়ে কাজ হচ্ছে গত তিন বছর।

কোথায় কোভিড ভ্যাকসিনের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের প্রয়োগ হয়েছে?

বেশির ভাগ মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের পরীক্ষা হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও কোনও এমআরএনএ ভ্যাকসিনের মধ্যে। কানাডা, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় হয়েছে এই পরীক্ষা। স্পেন ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও হয়েছে। প্রোফেসর স্ন্যাপ দ্য ইকোনমিস্টকে জানিয়েছেন, ব্রিটেনে মর্ডানার এমআরএনএ ভ্যাকসিন এবং নোভাভ্যাক্সের প্রোটিন সাবইউনিট ভ্যাকসিনের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের ট্রায়াল চলছে। রেজাল্ট আগস্টের মধ্যেই চলে আসবে।

রাশিয়া এবং চিনেও এই পদ্ধতি নিয়ে তুমুল ভাবনাচিন্তা চলছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে স্পুটনিক-ভি-এর কম্বিনেশন পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে পুতিনের দেশ। মার্কিন মুলুকে ফাইজার ও মডার্নার কম্বিনেশনের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে জানুয়ারিতেই। দুটি এমআরএনএ ভ্যাকসিনের এই মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে সে দেশের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির কথা বলেছে।

ভারত কোথায়?

ভারত সরকার আশা করছে, ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন টেকনোলজিতে তৈরি সাত-আটটা ভ্যাকসিন এসে যাবে হাতে। ফলে এমন অনেক কম্বিনেশন পরীক্ষার সুযোগ পাবে এ দেশ, যা বিশ্বে হয়নি। তাছাড়া কয়েকটি ভ্যাকসিন আসছে, যা কম দামি, এবং ব্যাপক হারে তৈরি করাও সহজ। ফলে, প্রতিষেধকের কম্বিনেশনের প্রয়োগ শুরু হলে মধ্য ও নিম্নবিত্তের মানুষ সহজেই তার নাগাল পেয়ে যাবে। ভ্যাকসিনে জনগণের ভাগ্য খুলে যাবে।

অনুবাদ: নীলার্ণব চক্রবর্তী

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Sputnik V Moderna Pfizer Covaxin Covishield
Advertisment