শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কীভাবে কাজ করে, তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়াতে পারে। এর পিছনে অন্য কোনও খারাপ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আবার 'ডিপফেক' তৈরি করার কাজেও একে ব্যবহার করা হতে পারে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমকেও আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি সম্প্রতি একটি ভিডিও দেখেছি, যাতে আমাকে একটি গরবা গান গাইতে দেখা গেছে। অনলাইনে এরকম আরও অনেক ভিডিও আছে। ডিপফেকের ভয়ঙ্কর হুমকি একটি বড় উদ্বেগ হয়ে উঠেছে। এটা প্রত্যেকের জন্যই অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে।'
ভারতে উদ্বেগের শুরু
ডিপফেক নিয়ে ভারতে উদ্বেগের শুরুটা হয়েছিল অভিনেত্রী রশ্মিকা মান্দানার লিফটে প্রবেশের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর। প্রাথমিকভাবে ওই ভিডিও আসল বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু, পরে দেখা যায় যে তা আসলে অভিনেত্রীর একটি ডিপফেক। মূল ভিডিওটিতে একজন ব্রিটিশ ভারতীয় মেয়ে জারা প্যাটেলকে দেখানো হয়েছে। তাঁর মুখের বদলে মান্দানার মুখ বসাতে মুখ মর্ফ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইন্সটাগামের মতো প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক নেতাদের ডিপফেক অডিও এবং ভিডিওরও ঢেউ উঠেছে।
কীভাবে আপনি ডিপফেক ভিডিও এবং অডিও শনাক্ত করবেন?
এআই ভয়েস ক্লোন এবং সম্ভাব্য অডিও ডিপফেকগুলোর মোকাবিলার জন্য সতর্কতা আর সক্রিয়তার প্রয়োজন। আপনি যখনই সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনও ভিডিও বা অডিও ক্লিপ দেখেন তখন আপনাকেও মনে রাখতে হবে যে, ঠিক এরকমই কিছু হয়েছে:
১. চোখের নড়াচড়ার ধরনে কৃত্রিমতা: ডিপফেক ভিডিওয় চোখের নড়াচড়া বা তাকানোর ধরনে কৃত্রিমতা থাকে।
২. রঙ এবং আলোয় পার্থক্য: ডিপফেক ভিডিওয় রঙ এবং আলোর ব্যবহারে পার্থক্য তৈরি হয়।
৩. অডিওর মানে পার্থক্য: ডিপফেক ভিডিওয় প্রায়ই AI-জেনারেটেড অডিও ব্যবহার করা হয়। যার ফলে অডিওর মানে পার্থক্য থাকে।
৪. শরীরের অদ্ভূত নড়াচড়া: ডিপফেক ভিডিওয় শরীরের নড়াচড়া কখনও স্বাভাবিক হয় না। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি খুব লম্বা বা ছোট দেখায়।
৫. মুখের অস্বাভাবিক নড়াচড়া: ডিপফেক সফটওয়্যারে মুখের স্বাভাবিক নড়াচড়া ফুটে ওঠে না। বদলে ফুটে ওঠে অস্বাভাবিক নড়াচড়া।
৬. মুখের বৈশিষ্ট্যে বদল: ডিপফেক ভিডিওয় মুখের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগুলোয় মাঝে মধ্যে বিকৃতি ঘটে। যা থেকেও ভিডিওটি জাল করা হয়েছে, তা ধরা যায়।
৭. শরীরের বিশেষ অঙ্গে নজর: ডিপফেক ভিডিওয় স্বাভাবিকের বদলে বিশেষ ভঙ্গি বা শরীরের বিশেষ অঙ্গের দিকে নজর তৈরির চেষ্টা থাকে।
৮. উৎসে গোলমাল: ডিপফেক অডিও বা ভিডিও ক্লিপের উৎস যাচাই করতে গেলেই দেখা যায়, তা নির্ভরযোগ্য নয়। যা থেকে এর কৃত্রিমতা ধরা পড়ে।
৯. আপডেট থাকা: সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উন্নয়ন, প্রধান রাজনৈতিক নেতাদের দেওয়া বিবৃতি, অভিনেতা এবং অভিনেত্রীর গতিবিধি সম্পর্কে আপডেট থাকা। যার মাধ্যমেও অডিও বা ভিডিও ক্লিপ ডিপফেক কি না, ধরা যায়।
১০. AI শনাক্তকরণ সরঞ্জাম ব্যবহার: কিছু নির্দিষ্ট AI ভয়েস ডিটেক্টর অনলাইনে পাওয়া যায়। তবে বিনামূল্যে নয়। যেমন, aivoicedetector.com, এবং play.ht। এই সব ডিটেক্টরও এআই ভয়েস শনাক্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।