Advertisment

Explained: উদারতাবাদ থেকে সীমাবদ্ধতার পথে, কীভাবে বৃত্ত সম্পূর্ণ করল মোদী সরকারের কৃষি আইন?

গম থেকে চাল, বিভিন্ন পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Modi Govt

মহাত্মা গান্ধীর আদর্শকে পাথেয় করে স্বাধীনতার চার মাস পরে ১৯৪৭ সালের ১০ ডিসেম্বর, জওহরলাল নেহেরুর সরকার 'পরিকল্পিত, ধীরে চলো এবং প্রগতিশীল বিনিয়ন্ত্রণ'-এর কথা ঘোষণা করেছিল।

নরেন্দ্র মোদী সরকার তার তিনটি কৃষি সংস্কার আইন প্রণয়ন করার পর থেকে তিন বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। প্রথমে জুন মাসে অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে এই বিল আনা হয়েছিল। পরে, ২০২০-এর সেপ্টেম্বরে সংসদে এই বিল পাশ হয়। আইনগুলো কৃষি পণ্যের বাণিজ্যকে মুক্ত করেছে। ১৯৯১ সালে নরসিমহা রাও সরকারের জমানায় দেশের কৃষিক্ষেত্র মুক্ত বাণিজ্যের পথে হাঁটা শুরু করেছিল। সেটাই যেন ২০২০ সালে একটা মাইলফলক অতিক্রম করে। মুক্ত বাণিজ্যের নীতি অনুযায়ী, কৃষকরা দেশের যে কোনও জায়গায় তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবে। তাদের বাণিজ্য আর শুধুমাত্র এলাকাভিত্তিক, রাজ্য সরকার-নিয়ন্ত্রিত বাজার বা মান্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই ভাবে ব্যবসায়ী, খুচরো বিক্রেতা, রফতানিকারকরা সরাসরি চাষাবাদ এবং সরবরাহ চুক্তির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। তারা কতটা পণ্য ক্রয় করতে এবং পণ্য মজুদ করতে পারবে, তার কোনও বাধা বা সীমাবদ্ধতা এক্ষেত্রে থাকছে না।

Advertisment

এর বিরুদ্ধে কৃষক সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তারা এগুলোকে ন্যূনতম সমর্থন মূল্যভিত্তিক ক্রয় কার্যক্রম থেকে সরকার উলটো পথে হাঁটছে বলে অভিযোগ করেছিল। শেষ পর্যন্ত এই সংস্কার ২০২১ সালের নভেম্বরে বাতিল হয়েছিল। এরপর গত এক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, কৃষি আইনের সারটাও মরে যাচ্ছে। সেটা ইউনিয়নগুলোর জন্যে নয়, সরকারের কারণেই। ২০২২ সালের মে মাসে, মোদী সরকার গম রফতানি নিষিদ্ধ করেছিল। চিনির রফতানিকে 'বিনামূল্যে'র বদলে 'সংরক্ষিত' করেছে। যা এক বছরে রফতানি করা যেতে পারে, তার পরিমাণও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আবার ভাঙা চাল রফতানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাসমতি চালের চালানের ওপর ২০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে। এই বছরের মে মাসের পরে কোনও চিনি ভারতীয় উপকূল থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। জুলাই মাসে সব ধরনের অবাসমতি চাল রফতানি পুরোপুরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এইসব নিষেধাজ্ঞা শুধু রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই জারি হয়নি।

আরও পড়ুন- কী এই তোষাখানা মামলা, যাতে ইমরানের ৩ বছর কারাদণ্ড হল?

মোদী সরকার চলতি বছরের জুনে তুর (কবুতর মটর) এবং উরের (কালো ছোলা) মজুত সীমাবদ্ধ করেছে। কোন পাইকার বা বড় চেন খুচরা বিক্রেতাকে ২০০ টনের বেশি ডাল রাখার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সাধারণ দোকানের ক্ষেত্রে পাঁচ টন এবং ডাল মিলের ক্ষেত্রেও মজুত সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। একইরকম সীমা ধার্য হয়েছে অপরিহার্য পণ্যর ক্ষেত্রে। এই সব কিছু করা হচ্ছে সংশোধিত কৃষি আইনের বিপরীত পথে হেঁটে। যার হাত ধরে ভারতীয় কৃষি উদারীকরণের পথ থেকে নিয়ন্ত্রণের রাস্তায় ফিরে এসেছে। মোদী সরকারের এই নীতি পরিবর্তনের জন্য শুধুমাত্র রাকেশ টিকাইত, যোগীন্দর সিং উগ্রাহান ও অন্যান্য কৃষক নেতাদের দায়ী করা যায় না। এই সব পরিবর্তন খোদ মোদী সরকার করেছে। কৃষক সংগঠনগুলো দাবি না-জানাতেই করেছে। আর, এসবের দরুণ কৃষিপণ্যের সামগ্রিক সরবরাহ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ভারতীয় খাদ্য কর্পোরেশন (এফসিআই) এবং মিলগুলোর কাছে এখন যথেষ্ট পরিমাণে গম, চাল এবং চিনি মজুত থাকছে। বলা ভালো উদ্বৃত্তই থাকছে।

protest Farm Law Modi Government
Advertisment