সোমবার (২২ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী 'প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা' ঘোষণা করেছেন। এই 'প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা' হল একটি সরকারি প্রকল্প। যার অধীনে এক কোটি পরিবার ছাদে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা পাবে। যদিও ছাদে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থাপনের প্রচারের জন্য এটিই প্রথম কোনও প্রকল্প নয়। ২০১৪ সালে, সরকার 'রুফটপ সোলার প্রকল্প' চালু করেছিল। যার লক্ষ্য ছিল ২০২২ সালের মধ্যে ৪০,০০০ মেগাওয়াট (MW) বা ৪০ গিগাওয়াট (GW)-এর ক্রমবর্ধমান ইনস্টল ক্ষমতা অর্জন। ওয়াট হল শক্তির একক। যাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহৃত শক্তির পরিমাণ হিসেবে গণনা করা হয়। প্রতি সেকেন্ডের হিসেবে হয় এক জুল শক্তি উৎপাদন। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। ফলস্বরূপ, সরকার তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময়সীমা ২০২২ থেকে ২০২৬ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। 'প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা', ছাদে ৪০ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য একটি নতুন প্রচেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।
- 'প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা' ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদী।
- ভারতে সৌরবিদ্যুতের ইনস্টলেশন ক্ষমতা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৭৩.৩১ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে।
- ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা কী?
মূলত, এটি একটি প্রকল্প। যা আবাসিক বা ভোক্তাদের জন্য ছাদে সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম ইনস্টল করার সঙ্গে জড়িত। সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ একটি পোস্টে, এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, 'আজ, অযোধ্যায় শুভ পবিত্র জীবন উপলক্ষে, আমার সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে যে ভারতের জনগণের তাদের বাড়ির ছাদে নিজস্ব সোলার রুফটপ সিস্টেম থাকা উচিত। অযোধ্যা থেকে ফেরার পর আমি প্রথম যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা হল আমাদের সরকার ১ কোটি বাড়িতে ছাদে সোলার বসানোর লক্ষ্য নিয়ে 'প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা' চালু করবে।' একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান, 'এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র 'দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত'-র বিদ্যুতের বিল কমাতেই সাহায্য করবে না। বরং শক্তি ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যেও ভারতকে এগিয়ে দেবে।'
আরও পড়ুন- ভারত-মায়ানমার মুক্ত সীমান্ত! কেনই বা তৈরি হল, বন্ধ করার দরকার কেন?
ভারতের বর্তমান সৌরশক্তি কত?
নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রকের ওয়েবসাইটের মতে, ভারতে সৌরবিদ্যুতের ইনস্টলেশন ক্ষমতা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৭৩.৩১ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাদে সৌরবিদ্যুৎ ইনস্টল করার ক্ষমতা ছিল প্রায় ১১.০৮ গিগাওয়াট। মোট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার নিরিখে রাজস্থান শীর্ষে। তাদের উৎপাদন ক্ষমতা ১৮.৭ গিগাওয়াট। এক্ষেত্রে গুজরাত রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। মোদীর রাজ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১০.৫ গিগাওয়াট। যখন ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার কথা আসে, তখন আবার তালিকার শীর্ষে গুজরাত। তাদের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২.৮ গিগাওয়াট। এরপরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র। তাদের উৎপাদন ক্ষমতা ১.৭ গিগাওয়াট। উল্লেখযোগ্য ভাবে, দেশের বর্তমান নবায়নযোগ্য শক্তি ক্ষমতায় সৌর বিদ্যুতের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ১৮০ গিগাওয়াট।
আরও পড়ুন- স্বাধীনতার পর নয়, রাম মন্দির আন্দোলন ২০০ বছরের এক যাত্রা, পার হয়েছে বহু মাইলফলক
কেন ভারতের জন্য সৌর শক্তির সম্প্রসারণ গুরুত্বপূর্ণ?
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (IEA)-এর সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক অনুসারে, ভারত আগামী ৩০ বছরে বিশ্বের যে কোনও দেশ বা অঞ্চলের চেয়ে বেশি শক্তিচাহিদা বৃদ্ধির সাক্ষী হবে। এই চাহিদা মেটাতে, দেশে শক্তির একটি নির্ভরযোগ্য উৎস প্রয়োজন। যা কেবল কয়লাখনি জোগাতে পারবে না। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত তার কয়লা উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করেছে, তবে এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতায় পৌঁছানোর লক্ষ্য রাখে। তাই, সৌরবিদ্যুতের ক্ষমতা সম্প্রসারণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এই দেশ ২০১০ সালে ১০ মেগাওয়াট এর চেয়ে কম থেকে ২০২৩ সালে ৭০.১০ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতায় নিজেকে উন্নীত করেছে।
আরও পড়ুন- শুধু মোদীই নন, গান্ধীজিও বলেছিলেন রাম রাজ্যের কথা, রামকে শ্রদ্ধা করতেন মহাত্মাও
রুফটপ সোলার প্রকল্প কী?
২০১৪ সালে চালু করা, এই প্রকল্পের লক্ষ্য, কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আবাসিক ক্ষেত্রে ভারতের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্রপাতি ইনস্টল ক্ষমতা সম্প্রসারিত করা। MNRE নির্দেশিকা অনুসারে যোগ্য প্রকল্পগুলোকে আর্থিক সহায়তা এবং DISCOMs (ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলো)-কে উৎসাহ দেওয়া এই প্রকল্পের লক্ষ্য। ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্রপাতি ইনস্টল ক্ষমতা ৪০ জিএমে উন্নীত করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ছাদে উৎপাদিত সৌরশক্তি ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ছিল ১.৮ গিগাওয়াট। সেটা ২০২৩ সালের নভেম্বরে বেড়ে হয়েছে ১০.৪ গিগাওয়াট। ভোক্তা ডিসকম টেন্ডার করা প্রকল্প বা জাতীয় পোর্টাল (www.solarrooftop.gov.in)-এর মাধ্যমে এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিমন্ত্রী আরকে সিং গত বছর লোকসভায় উত্থাপিত একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে বলেছিলেন, 'ন্যাশনাল পোর্টালে, ভোক্তার কাছে যে কোনও বিক্রেতা নির্বাচন করার এবং সৌর সরঞ্জামের ব্র্যান্ড এবং গুণমান/দক্ষতা বেছে নেওয়ার উপায় আছে। DISCOM-এর ভূমিকা, প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা অনুমোদন, নেট-মিটার স্থাপন এবং সিস্টেম পরিদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।' সিস্টেম ইনস্টলেশন এবং পরিদর্শনের পরে, ভর্তুকি সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। তদুপরি, 'ছাদে সৌর প্ল্যান্ট থেকে উৎপন্ন উদ্বৃত্ত সৌরশক্তি ইউনিটগুলো সংশ্লিষ্ট SERCs (স্টেট ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন)/JERCs (জয়েন্ট ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন) দ্বারা জারি করা মিটারিং বিধান অনুসারে গ্রিডে রফতানি করা যেতে পারে। ভোক্তা বিদ্যমান বিধি মোতাবেক উদ্বৃত্ত রফতানিকৃত বিদ্যুতের জন্য আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন।'
আরও পড়ুন- রাহুল গান্ধীকে বটদ্রভা থান পরিদর্শনে বাধা, এনিয়ে হইচইয়ের পিছনে কোন বিরাট রহস্য?