নাগপুরে বাৎসরিক দশেরা উৎসবের মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত দেশ যে সব চ্যালেঞ্জের সামনে দিয়ে চলেছে তার উল্লেখ করেছেন এবং দেশের সামাজিক ও আর্থিক বদলের মাধ্যমে ভারতকে মহিমান্বিত ও সমৃদ্ধিশালী বানানোর আমাদের অন্তিম লক্ষ্যকে সফল করার কথা বলেছেন।
২০১৯ ভোট
সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বলেন, "২০১৯ সালের নির্বাচনে দেখার ছিল যে ২০১৪ সালের ভোটে বিজেপি পূর্বর্তী সরকারের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে ভোটে জিতেছিল নাকি ভারতীয়রা এবার একটি নির্দিষ্ট পথে চলবার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন।"
জম্মু-কাশ্মীর: এখনও অনেক পথ বাকি
মোহন ভাগবত বলেন, ৩৭০ ধারার রদের মাধ্যমে সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে মানুষের ভাবাবেগ ও আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করার সাহস রয়েছে এই সরকারের। তবে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ফিরিয়ে আনা এবং তাঁদের "নিরাপদ, নির্ভয়, দেশপ্রেমিক এবং হিন্দু থাকার অধিকারকে সুনিশ্চিত করার কাজ" এখনও বাকি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চাঁদে অবতরণ
ভারতের চন্দ্রযান বিক্রম ল্যান্ডার এ যাবৎ অস্পর্শিত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করাবার মাধ্যমে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা সারা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মোহন ভাগবত।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: উর্দু কেন ভারতীয় ভাষা?
এখনও "সংকট"
আরএসএস প্রধান মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই সব সাফল্য পাওয়ার সুবাদে ভারতীয়দের অলস হয়ে পড়া উচিত নয়, কারণ "এখনও আমাদের সামনে বেশ কিছু সংকট রয়েছে যা মোকাবিলা করতে হবে।"
সীমান্তপারের বিপদ
মোহন ভাগবত বলেছেন, "ভূসীমান্তগুলিতে পাহারা ও চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে, এবং জলপথের সীমান্তে বিশেষত দ্বীপগুলিতে নজরদারি বাড়াতে হবে।"
ভিতরের শত্রু
দেশের মধ্যেকার শত্রুদের নিয়ে ভাষণের দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন মোহন ভাগবত। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ভারতের চিন্তাপদ্ধতিতে একটি বদল এসেছে, কিন্তু অনেকেই তা চায় না এবং সরকারের সুনীতির অপব্যাখ্যা করে চলে।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি "গণপ্রহারের" প্রসঙ্গ তোলেন এবং বলেন "এ ধরনের শব্দ ভারতের ঐতিহ্যে নেই - আমাদের দেশ ও সমগ্র হিন্দু সমাজের মানহানির চেষ্টা চলেছে এবং তথাকথিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্কের আবহ নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।"
সমবেত শ্রোতাদের তিনি বলেন "এ ধরনের ষড়যন্ত্র যে চলছে তা বুঝতে হবে"। উত্তেজক মন্তব্য ব্যবহার বা উত্তেজক কাজে প্ররোচনা দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: ত্রিপুরায় মন্দিরে বলি নিষিদ্ধ, কী যুক্তি আদালতের
প্রসঙ্গ- অর্থনীতি
এর পর ভারতের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে কথা বলেন তিনি, এবং প্রভূত পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন দুনিয়াভর যে আর্থিক মন্দা চলছে তার ফলেই ভারতীয় অর্থনীতির এ হাল। এ ব্যাপারে আমেরিকা ও চিনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের দিকেও আঙুল তোলেন তিনি।
আর্থিক বৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য সরকার বর্তমানে যে প্রচেষ্টা করছে, তার প্রশংসা করে মোহন ভাগবত বলেন, বিদেশি লগ্নি আকর্ষণের জন্য এবং বিলগ্নিকরণের জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেছেন।
"স্ব"-এর গুরুত্ব
মোহন ভাগবত বলেন, "আমাদের প্রয়োজনীয়তা, আমাদের নিজস্বতা এবং আমাদের অবস্থার কথা মাথায় রেখে আমাদের নিজস্ব আর্থিক নীতি স্থির করতে হবে।"
তিনি বলেন, "স্বাধীনতা পাওয়ার এতগুলি দশক পরেও স্ব-এর ব্যাপারে ভাবনায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি, তার মূল কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, যা আমাদের দাসত্বের সময়ে আমাদের দাস করে রেখেছিল এবং স্বাধীনতা পাবার পরেও সেই একই জিনিস চলছে।"
তিনি বলেন, "ভারতের একটি নতুন কর্তব্যপরায়ণ শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন, যা আমাদের স্বভাষা, স্বভূষা এবং স্ব সংস্কৃতির ব্যাপারে গৌরবান্বিত করে তুলবে।"
এ বিষয়টি সুনিশ্চিত করার জন্য "শিক্ষক শিক্ষণ পদ্ধতিতেই বৈপ্লবিক বদল আনা প্রয়োজন " বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন "কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এই বদল আনা সম্ভব নয়"।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: পাকিস্তানি মডেল কান্দিল বালোচের হত্যা ও সাজা
সাংস্কৃতিক অবক্ষয়
মোহন ভাগবত বলেন, "অসুস্থদের সাংস্কৃতিক অবক্ষয় ড্রাগের নেশার মত, এবং আমাদের মা-বোনেরাও নিরাপদ নন। " এ প্রসঙ্গে সতীদাহ প্রথার সংস্কৃতির ইঙ্গিত দেন সরসঙ্ঘচালক।
মোহন ভাগবত বলেন, "যে দেশে মহিলারা মায়ের সম্মান পেতেন, যেখানে রামায়ণ মহাভারতের মত মহৎ মহাকাব্যে মেয়েদের সম্মান নিয়ে যুদ্ধ হয়েছে, যেখানে জৌহর ব্রতের মত শহিদত্ব অবলম্বন করা হত সম্মানরক্ষার্থে, সেখানে আজকের ভারতে আমাদের মা-বোনেরা পরিবারে ও সমাজে সুরক্ষিত নন, এ আমাদের সকলের লজ্জা।"
"মায়েদের আলোকপ্রাপ্ত, স্বনির্ভর ও আত্মরক্ষার সামর্থ্যের" ব্যাপারে জোর দিয়েও আরএসএস প্রধান বলেছেন, "পুরুষের প্রতি মহিলাদের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আমাদের সংস্কৃতির পবিত্রতা ও শালীনতার সঞ্চার ঘটাতে হবে।"
Read the Full Story in English