লকডাউনে বিপর্যস্ত হয়েছে অর্থনীতি। চাকরি ক্ষেত্র হোক কিংবা ব্যবসা আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশ। সেই কথা বিবেচনা করেই আর্থিক সংকটে পড়া ঋণ গ্রহীতাদের মেয়াদি ঋণের উপর ইএমআই দেওয়ার ক্ষেত্রে ছ'মাসের মোরাটোরিয়াম (আইন মেনে ঋণ স্থগিত) ঘোষণা করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। অগাস্টের ৩১ তারিখ সেই ঋণ স্থগিতের সময়সীমা শেষ। তবে হ্যাঁ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি ফের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য এই স্থগিতাদেশ বহাল রাখে তাহলে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে। কিন্তু তা যদি না হয় তবে কীভাবে সামলাবেন ঋণের এই বোঝা?
ঋণগ্রহীতারা কি সুদ কম দিতে পারবেন?
গত ১৮ মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া রেপো রেট প্রায় ২২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। আর সেই কারণে ব্যাঙ্ক এবং হাউসিং ফিনান্স সংস্থাগুলিও নতুন লোনের ক্ষেত্রে সুদ কমিয়েছে প্রায় ২ শতাংশ। আগে যেখানে দিতে বাড়ির ঋণে দিতে হত ৯ শতাংশ সুদ, এখন তা কমে ৭ শতাংশ হয়েছে। তবে যারা এই নিয়ম বলবৎ হওয়ার আগে থেকে ঋণ নিয়েছেন তাঁদের ৮.৫ শতাংশ অথবা ৯ শতাংশ হারেই ঋণ মেটাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতারা ব্যাঙ্ক কিংবা হাউসিং ফিনান্স সংস্থার সঙ্গে কথা বলতে পারেন ঋণ কমানোর জন্য। সেক্ষেত্রে ২ শতাংশ কম না হলেও 'কনভারশন ফি' নিয়মে গেলে আপনার লাভ হবে। অনেক ব্যাঙ্ক এক্ষেত্রে ফ্রেস লোন নেওয়ার কথা বলছে।
আরও পড়ুন, করোনা ভ্যাকসিনে অক্সফোর্ডকে টেক্কা রাশিয়ার, অগাস্টেই মিলবে এই টিকা
যদি ব্যাঙ্ক আপনার কথাই মেনে নেয় তাহলে কত টাকা জমাতে পারবেন আপনি?
ধরা যাক আপনি বাড়ির লোন বাবদ ১৫ বছরের (১৮০ মাস) হিসেবে ৩০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। সুদের হার ৮.৫ শতাংশ। অর্থাৎ ইএমআই বাবদ প্রতি মাসে আপনাকে দিতে হবে ২৯ হাজার ৫৪০ টাকা। যদি আপনি কনভারসন ফি দেন সেক্ষেত্রে আপনার সুদ কমে যেতে পারে ৭.৪ শতাংশে। অর্থাৎ আপনার ইএমআই কমবে ১৯০০ হাজার টাকার কাছাকাছি। আর যদি আপনি ইএমআই না কমিয়ে ওই একই টাকা দিতে চান তাহলে সুদ দেওয়ার সময়সীমা ১৮০ মাস থেকে কমে ১৬০ মাস হয়ে যাবে।
আরেকটি পথও আছে সুদের হার কমানোর। তা হল যদি আপনি প্রান্তিক ব্যয়ভিত্তিক ঋণদানের হার (marginal cost-based lending rate) থেকে রেপো রেটভিত্তিক ঋণদানের হারে (repo rate-linked lending rate) সুদ প্রক্রিয়াকে নিয়ে আসেন। তাহলে রেপো রেট কমলে তা সরাসরি আপনার সুদ কমিয়ে দেবে।
অন্যান্য আর কোন কোন পথ রয়েছে সুদের হার কমানোর?
এখন যে সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি আমরা, সেখানে আগামী ৩ থেকে ৬ মাস প্রতিটি পরিবারের হাতে নগদ অর্থ থাকা খুব জরুরি। দু'রকম ভাবে রাখতে পারেন এক সেভিং অ্যাকাউন্টে বা ফিক্সড ডিপোজিট করে। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যেখানে সুদ বেশি পাব সেই ক্ষেত্রেই অর্থের পরিমাণ বেশি রাখব। কারণ সেই সুদ দিয়ে যেন বাড়ির ঋণের টাকা মিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে যদি ১ থেকে ৩ বছরের টার্মে ফিক্সড ডিপোজিট করেন তাহলে সুদ পাবেন ৫.১ শতাংশ। অর্থাৎ বাড়ির ঋণ মেটাতে (যা ৭ শতাংশ থেকে ৮.৫ শতাংশ) আরও ৩.৪ শতাংশ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে চেষ্টা করা উচিত এই ফিক্সড ডিপোজিটগুলি রোলিং না করিয়ে তার কিছুটা অংশ দিয়ে বাড়ির ঋণের মোট মূলধন কমিয়ে আনা। এর ফলে তা মাসিক ইএমআই কমিয়ে দেবে বা আপনি চাইলে সুদ দানের সময়সীমাও কমিয়ে দেবে।
আরও পড়ুন, মাস্কেই আটকাচ্ছে করোনা সংক্রমণ, মিলল হাতেনাতে প্রমাণ
রিজার্ভ ব্যাংকের ইএমআই মোরাটোরিয়াম ব্যাপারটি কী ?
এটা কিন্তু ইএমআই মকুব নয় বরং বলা যেতে পারে তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। মানে তিন মাসের জন্য ইএমআই দিতে হবে না। উল্টে এই জমা স্থগিত রাখা ইএমআই পরে সুদ সহ শোধ দিতেই হবে। তবে সেটা কী ভাবে দিতে সেটা ব্যাংক বা ঋণদাতা ঠিক করবে। বিভিন্ন ব্যাংকের এই পদ্ধতি আলাদাও হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ কেউ পুরো ঋণের মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার কেউ অবশিষ্ট সময়ের ইএমআই-তে ওই তিন মাসের বকেয়া ইএমআই-এর অর্থ সমান ভাগে ভাগ করে দিতে পারে।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন