কেন্দ্রীয় সরকারের রিলিফ প্যাকেজে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME)-এর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতিমারীর যখন টিকে গিয়েছে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ভারতের শিল্পের এই অংশটি ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন।
অল ইন্ডিয়া ম্যানুফ্যাকচারার্স অরগানাইজেশন (AIMO)-এর একটি সমীক্ষায় ৪৬৫২৫ সংখ্যক এমএসএমই, স্বরোজগেরে, কর্পোরেট সিইও এবং কর্মীদের নিয়ে ২৪-৩০ মে-র মধ্যে একটি সমীক্ষা করে, যাতে ৩৫ শতাংশ এমএসএমই এবং ৩৭ শতাংশ স্বরোজগেরে জানিয়েছেন তাঁদের উদ্যোগের মাথা তুলে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আর নেই।
৩২ শতাংশ এমএসএমই বলেছে তাদের উঠে দাঁড়াতে ৬ মাস সময় লাগবে, মাত্র ১২ শতাংশ এমএসএমই জানিয়েছে তারা তিন মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছে।
লকডাউনে সত্যিই কত কোভিড মৃত্যু আটকানো গেল?
মাত্র ৩ শতাংশ এমএসএমই, ৬ শতাংশ কর্পোরেট ও ১১ শতাংশ স্বরোজগেরে জানিয়েছেন তাঁরা প্রভাবিত হননি এবং ভালভাবেই চালাতে পারছেন, কারণ এঁরা সকলেই প্রাথমিকভাবে লকডাউনের সময়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহে নিযুক্ত ছিলেন।
তাহলে এই হতাশার ব্যাখ্যা কী?
এ পরিস্থিতির চারটি কারণ থাকতে পারে।
তাঁরা আগে থেকেই সমস্যায় ছিলেন, লকডাউনে আরও খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েছেন
এমএসএমই ক্ষেত্র অতিমারীর আগে দেশের মোট উৎপাদনের ৪৫ শতাংশ, রফতানির ৪০ শতাংশ এবং জিডিপির ৩০ শতাংশ অবদান রাখত, এবং প্রায় ১১ কোটি মানুষের রোজগারের জায়গা ছিল।
বিমুদ্রাকরণ ও জিএসটি-র ভুল প্রয়োগের জন্য এই ক্ষেত্র আগেই সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সমস্যা ও তার জেরে নন ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থা এমএসএমই-র উপর আরও প্রভাব ফেলেছে, যার জেরে তাদের অন্তর্বর্তী মজুত হ্রাস পেয়েছে এবং তাদের চাহিদার হ্রাস পেয়েছে।
এপ্রিল মাসের একটি সমীক্ষায় ১৩৯৭০ জন অংশগ্রহণকারীর মদ্যে ৭৪টি স্টার্ট আপ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা জানিয়েছে যে তারা আগামী ৬ মাসের মধ্যে উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে বা হ্রাস করতে হবে বলে মনে করছে।
কোভিড-১৯ কীভাবে বদলে দিতে পারে বয়স্কদের খাদ্যাভ্যাস
সমস্যা ইতিমধ্যেই বাড়ছিল। লকডাউনের পর তা আরও বেড়েছে, জটিল আকার নিয়েছে।
আর্থিক চ্যানেল মূলত অসংগঠিত, ক্রেডিট গ্যারান্টিতে সীমিত সাহায্য
সরকারের এমএসএমই প্যাকেজ নিয়ে অসন্তোষ, বিশেষ করে অতিমারী জনিত লকডাউনের জন্য আর্থিক সহযোগিতার অভাবের মূল কারণ হল এই ক্ষেত্রের ক্রেডিট গ্যারান্টি সীমিত, এমএসএমই-র ৭০ লক্ষ কোটি টাকার ঋণের চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ জোগান আসে সরকারি আর্থিক চ্যানেল থেকে।
ঋণদাতাদের ইচ্ছা অনিশ্চিত, ভবিষ্যতের পরিষেবা ঋণের জোগান সম্ভাবনাও তথৈবচ
টার্ম লোনের ইনস্টলমেন্টে মোরাটোরিয়াম বাড়িয়ে ঋণগ্রহণকারী এবং যেসব সংস্থা নগদের সমস্যায় ভুগছে, তাদের রিলিফের বন্দোবস্ত করা যায়, এই অভিপ্রেত রিলিফ তাদের কাছে পৌঁছতে পারে যদি ব্যাঙ্ক ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দেয়,তবেই।
তেমনটা ঘটবে কিনা, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
যেসব সংস্থার লোন অ্যাকাউন্ট একটি নির্দিষ্ট কাট অফ তারিখ পর্যন্ত মান বজায় রেখেছে, তাদের জন্যই এই প্রয়াস। ক্ষুদ্রতর সংস্থার অধিকাংশই এই হিসেবের বাইরে- বড় সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ইউনিটগুলি অনেকটাই পিছিয়ে।
যেসব সুবিধাপ্রাপ্ত সংস্থা নগদের সংকটে ভুগছে, ৬ মাসের মোরাটোরিয়াম তাদের টিকে থাকায় সাহায্য করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
কিন্তু যেসব সংস্থাকে তাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের খরচ মেটানোর জন্য ঋণ নিতে হবে এমন একটা সময়ে যখন প্রায় কোনও উৎপাদনই নেই, সেসময়ে তাদের কাছে সুদের হার অতি গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, একইসঙ্গে কোল্যাটারাল ফ্রি ঋণও জরুরি।
একইসঙ্গে এমএসএমই দের মধ্যে অতিরিক্ত ঋণ নিয়েও সংশয় রয়েছে, এদের ১২ মাস পরে একটা বড়সড় রোজগার করতে হবে ঋণ মেটাতে।
অনেক বকেয়া, কবে তা পাওয়া যাবে তার কোনও স্থিরতা নেই
এমএসএমই ক্ষেত্রে মোট বকেয়ার পরিমাণ ৫ লক্ষ কোটি টাকা, যার পরিমাণ বড় বেসরকারি সংস্থা ও সরকারি সংস্থার কাছেই বেশি।
প্রায় কোনও এমএসএমই-র এ কথা ভাবছেন না যে সরকারি আশ্বাস অনুসারে ৪৫ দিনের মধ্যে বকেয়া মেটানো হবে। এরকম প্রতিশ্রুতি আগেও দেওয়া হয়েছে, যা পালিত হয়নি।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ৬০ হাজার কোটি টাকা এমএসএমই বকেয়ার মধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা মেটানো হয়েছে।
কিন্তু কার্যত তেমনটা হয়নি বলে মনে করছে AIMO-র মত এমএসএমই প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা। তাদের হিসেব অনুসারে বকেয়ার ৩০ শতাংশ ১২০ দিনের উপর ধরে বাকি, ৪৫ শতাংশ ৬০ থেকে ১২০ দিন ধরে বাকি, অবশিষ্টাংশ ৬০দিনের কম বাকি। এই বকেয়ার ৬০ শতাংশের বেশি রাজ্য সরকার ও তাদের অধিগৃহীত সংস্থার কাছে।
সরকারি নির্দেশ কতটা কার্যকর হবে সে নিয়ে এমএসএমই-র মধ্যে প্রত্যয়ের অভাব রয়েছে, বিশেষ করে বকেয়ার বড় অংশই যেখানে রাজ্য সরকার ও বড় সংস্থার কাছে।