Advertisment

Aurangzeb Temple: ইতিহাসই প্রমাণ, আওরঙ্গজেব এই মন্দির ভেঙেছিলেন, সামনে এল বিরাট সত্য!

ASI: ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) জানিয়েছে যে, 'বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ' একথা বলছে। এর পিছনে যথেষ্ট প্রমাণ আছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ASI, Gyanvapi mosque complex, Varanasi

এএসআই সদস্যরা মসজিদ চত্বরে সমীক্ষা চালাচ্ছেন। (পিটিআই ছবি)

The Archaeological Survey of India: আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে 'বর্তমান কাঠামো নির্মাণের আগে সেখানে একটি বড় হিন্দু মন্দির ছিল।' এএসআই বলেছে যে, 'বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ'-এর ওপর নির্ভর করে তারা একথা বলছে। আর, তাদের এই বক্তব্যের পিছনে যথেষ্ট প্রমাণ আছে বলেও জানিয়েছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব গবেষণা সংস্থা।

Advertisment
  • আওরঙ্গজেব নির্দেশ দিয়েছিলেন মন্দির ভেঙে ফেলতে।
  • ১৬৬৯ সালে তিনি ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন।
  • সেই সময় বাংলার হিন্দু মন্দিরগুলোও ধ্বংস করা হয়েছিল।

১৬৬৯ সালের ফরমান
বর্তমান কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের সংলগ্ন একটি মন্দির মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। জ্ঞানবাপী মসজিদটি সেই ভাঙা হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত হয়েছিল। এই তথ্যের প্রাথমিক উৎস হল, সাকি মুস্তাইদ খানের, 'মাসির-ই-আলমগিরি'। এটি একটি ফার্সি-ভাষায় লেখা ইতিহাস। যা ১৭০৭ সালে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরপরই লেখা হয়েছিল। এব্যাপারে এএসআই তাদের রিপোর্টে ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত ওই গ্রন্থের অনুবাদের উল্লেখ করেছে। যে অনুবাদ করেছিলেন ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার।

আরও পড়ুন- শুধু মোদীই নন, গান্ধীজিও বলেছিলেন রাম রাজ্যের কথা, রামকে শ্রদ্ধা করতেন মহাত্মাও

'মাসির-ই-আলমগিরি'
'মাসির-ই-আলমগিরি' বলেছে, 'মহামহিম (আওরঙ্গজেব), ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহী। তিনি সমস্ত প্রদেশের গভর্নরদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কাফেরদের স্কুল এবং মন্দির ভেঙে ফেলতে হবে। অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে এই অবিশ্বাসীদের ধর্মশিক্ষা এবং ধর্ম অনুশীলন বন্ধ করে দিয়েছিলেন।' ১৬৬৯ সালের ৯ এপ্রিল, আওরঙ্গজেব তাঁর রাজত্বের দ্বাদশ বছরে রাজকীয় ফরমান (ডিক্রি) জারি করে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির এবং মথুরার কেশবদেব মন্দিরকে ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করেন। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার ১৯৩০ সালে প্রকাশিত (A Short History of Aurangzib 1618-1707) গ্রন্থে, এই ডিক্রি জারিকে 'হিন্দু ধর্মের ওপর' আওরঙ্গজেবের বৃহত্তর আক্রমণের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

আরও পড়ুন- রাহুল গান্ধীকে বটদ্রভা থান পরিদর্শনে বাধা, এনিয়ে হইচইয়ের পিছনে কোন বিরাট রহস্য?

ইতিহাসবিদ রিজভির দৃষ্টিতে
ইতিহাসবিদ এস এ এ রিজভি লিখেছেন, 'আওরঙ্গজেবের রাজত্ব আকবরের সহাবস্থানের নীতি থেকে ধীরে ধীরে প্রস্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।' ১৬৬৫ সালে, তিনি মুসলমানদের প্রদেয় শুল্কের দ্বিগুণ হারে হিন্দু ব্যবসায়ীদের আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করেন। দুই বছর পরে তিনি, মুসলমান ব্যবসায়ীদের ওপর ধার্য শুল্ক সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেন। রিজভি ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত তাঁর 'দ্য ওয়ান্ডার দ্যাট ওয়াজ ইন্ডিয়া (১২০০-১৭০০)'-র দ্বিতীয় খণ্ডে লিখেছেন, '১৬৬৯ সালের জানুয়ারিতে যুবরাজ আজম (আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র)-এর বিয়ে…অসংখ্য পিউরিটানিকাল অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাদশাহকে তাঁর গোঁড়ামি দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। মন্দির এবং হিন্দু শিক্ষাকেন্দ্র ভেঙে দেওয়ার একটি সাধারণ আদেশ জারি করা হয়েছিল। বেনারসের বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দির এবং মথুরার কেশবদেব মন্দির, যেখানে দারা শুকোহ একটি পাথরের রেলিং বানিয়ে দিয়েছিলেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। এই নীতিটি প্রত্যন্ত পূর্ববঙ্গ, পালামৌ, রাজস্থান এবং পরে দাক্ষিণাত্যেও প্রয়োগ করা হয়েছিল।'

আরও পড়ুন- ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশাল ঘোষণা মোদীর, আবার কোনও চমক নাকি?

জ্ঞানবাপী মসজিদ নির্মাণ
ধ্বংস হওয়া মন্দিরের জায়গায় মসজিদটি সম্ভবত ১৬৭০ বা ১৬৮০-এর দশকে তৈরি হয়েছিল। ট্রসকে লিখেছেন, 'ভগ্ন মন্দিরের প্রাচীরের একটি অংশ (নতুন ভবনে) যুক্ত করা হয়েছিল, যাতে তা আর পুনরায় ব্যবহার করা না যায়।' ধ্বংসপ্রাপ্ত মথুরা মন্দিরের ওপর নির্মিত শাহি ঈদগাহের মতন নয়। জ্ঞানবাপী মসজিদের পৃষ্ঠপোষক কে ছিলেন, তা অজানাই থেকে গেছে। মুঘল দরবারের নথিতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায় না। বর্তমান কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি ১৮ শতকে রানি অহিল্যাবাই হোলকার, মসজিদের পাশে গড়ে তুলেছিলেন।

আরও পড়ুন- কানাডায় বিদেশি ছাত্রদের ওপর নিষেধাজ্ঞা, কতটা প্রভাব পড়বে ভারতীয়দের ওপর?

ইতিহাসবিদ রিচার্ড ইটনের দৃষ্টিতে
ইতিহাসবিদ রিচার্ড ইটন ২০০০ সালে প্রকাশিত তাঁর 'মন্দিরের অপবিত্রতা এবং ইন্দো-মুসলিম রাজ্য: জার্নাল অফ ইসলামিক স্টাডিজ'-এ দাবি করেছেন, ১৬৬৯ সালের ফরমান 'সমস্ত মন্দির অবিলম্বে ধ্বংস করার জন্য একটি সাধারণ নির্দেশ' ছিল না। বরং এই ফরমান সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিশানা করেছিল, যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়।' ইটন, 'মাসির-ই-আলমগিরি'র একটি লাইনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন যে আওরঙ্গজেব কিছু জায়গায় জানতে পেরেছিলেন, 'বিশেষ করে বেনারসে, ব্রাহ্মণ অবিশ্বাসীরা তাঁদের প্রতিষ্ঠিত স্কুলে মিথ্যা গ্রন্থ পড়ান। তাঁদের কাছে আসা ছাত্রদের মধ্যে হিন্দু এবং মুসলমান, উভয়ই আছে। শুধু তাই নয়, অনেক দূর থেকেও পড়ুয়ারা এই বিপথগামী লোকদের কাছে পড়তে আসছেন। তার মধ্যেই ১৬৬৯ সালে, বেনারসের জমিদাররা বিদ্রোহ করেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আওরঙ্গজেবের চিরশত্রু শিবাজিকে মুঘলদের বন্দিদশা থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়েছিল।'

আরও পড়ুন- কলকাতা থেকে কাবুল হয়ে বার্লিন, কতটা কষ্টকর পথে ভারত ছেড়েছিলেন সুভাষ বসু?

ইতিহাসবিদ সতীশ চন্দ্রের দৃষ্টিতে
ইতিহাসবিদ সতীশ চন্দ্র ২০০৭ সালে প্রকাশিত তাঁর, 'মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাস ৮০০-১৭০০'-এ লিখেছেন যে 'আওরঙ্গজেব মন্দিরগুলিকে ধ্বংসাত্মক ধারণা ছড়ানোর কেন্দ্র হিসাবে দেখতে শুরু করেছিলেন, অর্থাৎ এমন ধারণা, যা গোঁড়া ধর্মান্ধদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না।' এমন একটি তত্ত্বও রয়েছে যে আগ্রায় মুঘল হেফাজত থেকে ছত্রপতি শিবাজির পলায়নের প্রতিশোধ হিসেবে কাশী মন্দির ধ্বংসের আদেশ দিতে অপমানিত আওরঙ্গজেবকে প্ররোচিত করেছিল। এই প্রসঙ্গে সতীশ চন্দ্র লিখেছেন, 'আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিরোধের ক্ষেত্রে, তিনি (আওরঙ্গজেব) শাস্তি ও হুঁশিয়ারি দেওয়ার জন্য বহু পুরোনো হিন্দু মন্দিরগুলো ধ্বংস করাই বৈধ বলে মনে করেছিলেন।'

আরও পড়ুন- অপারেশন ‘সর্বশক্তি’ শুরু ভারতীয় সেনার, ‘সর্পবিনাশ’-এর আধুনিক রূপ, ভয়ংকর কিছু ঘটতে চলেছে?

ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রসকের দৃষ্টিতে
ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রসকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত তাঁর 'আওরঙ্গজেব: ভারতের সবচেয়ে বিতর্কিত রাজার জীবন ও উত্তরাধিকার' বইয়ে লিখেছেন, 'আওরঙ্গজেব ১৬৬৯ সালে বেনারসের বিশ্বনাথ মন্দিরের বেশিরভাগ অংশ অংশ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। মন্দিরটি আকবরের রাজত্বকালে রাজা মান সিং নতুন করে নির্মাণ করিয়েছিলেন। মুঘলদের বিশ্বাস ছিল, যাঁর (মান সিং-এর) প্রপৌত্র জয় সিং, ১৬৬৬ সালে শিবাজিকে মুঘল বন্দিদশা থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন।'

আরও পড়ুন- ভারতরত্ন হচ্ছেন কর্পুরী ঠাকুর, কেন জননায়কের রাজনীতি এবং নীতিগুলো আজও জনপ্রিয়?

ASI Kashi Vishwanath Dham gyanvapi mosque
Advertisment