১৯৯৬ সালে যখন আফগানিস্তানে প্রথম তালিবান সরকার, তখন কোনও আন্তর্জাতিক চাপের কাছে মাথা নত করতে হয়নি তাদের। ছিল না কৌশলী সরকারি নীতি এবং কূটনীতির বাধ্যবাধকতা। গৃহযুদ্ধে দীর্ণ দেশে শাসন ক্ষ্মতায় একটি শুন্যস্থান তৈরি হয়েছিল। তালিবানের শীর্ষ নেতা তথা প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছিল।
কিন্তু প্রায় আড়াই দশক পর পরিস্থিতি ভিন্ন। তালিবানের শীর্ষ নেতা তথা অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হাইবাতুল্লা আখুনদাজা দেশের প্রধান শাসক হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। এমনটাই আফগান সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সকালে কাবুলের আকাশে-বাতাসে অন্য গন্ধ। তালিবানের রাজনৈতিক প্রধান তথা অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য আবদুল ঘানি বরাদর আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে নেতৃত্ব দেবেন। বছর ৫৩-এর এই তালিবান নেতা সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যকলাপের প্রধান। বরাদর-সহ শের মহম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই এবং মোল্লা মহম্মদ ইয়াকুব, নতুন সরকারের অংশ হবেন। এখনও অবধি এই খবর পাওয়া গিয়েছে। ঘটনাচক্রে মোল্লা মহম্মদ ইয়াকুব তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মৃত মোল্লা ওমরের ছেলে।
কে এই আবদুল ঘানি বরাদর
সংবাদসংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে তালিবানের শীর্ষ নেতৃত্ব কাবুল পৌঁছে গিয়েছে। সরকার গঠন নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা চলছে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, অধিকাংশ তালিবান নেতা আফগানিস্তানের পুশতুন সম্প্রদায়ভুক্ত। আর পোপালজাই পুশতুন জাতির সদস্য মোল্লা বরাদর। সোভিয়েত জমানা থেকে যে তালিবানিরা সংগঠনের হাল ধরে রেখেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম মোল্লা বরাদর। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ এই নেতাকে ভাই বলে ডাকা হয়। পাশতুন অধ্যুষিত দক্ষিণ আফগানিস্তানে ১৯৬৮ সালে জন্ম বরাদরের। সোভিয়েত বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের একদম সামনের সারিতে ছিল এই তালিবান নেতা।
আরও পড়ুন পঞ্জশির-পতন তালিবান-লক্ষ্য, গড় রক্ষায় মরিয়া মাসুদ, কে এই আফগান নেতা?
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত পতন এবং আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে কান্দাহারে মহম্মদ ওমরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাদ্রাসা চালু করে বরাদর। সেই সুত্র ধরে দেশজুড়ে ধর্মীয় শোধন এবং ইসলামিক সাম্রাজ্য গঠনের লক্ষে তরুণদের সামনে রেখে তালিবান সংগঠন তৈরি করে বরাদর এবং ওমর। অর্থ, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দিয়ে এই সংগঠনকে সাহায্য করে সৌদি আরব, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিরোধ করা। কড়া শরিয়া আইন এই সংগঠনের শাসন যন্ত্রের সংবিধান। এমনটাই এযাবৎকাল বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করে এসেছে এই মৌলবাদী সংগঠন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন